আইপিএলের চেয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ কঠিন, বললেন বেঙ্গালুরুর সাবেক ক্রিকেটার
পারভেজ রসুলের তুলনা শুনলে মনে হতে পারে, কিসের সঙ্গে কিসের তুলনা! কিন্তু যুক্তিটা তাঁর নিজের। আর সে যুক্তির বলেই তিনি মনে করেন, আইপিএলের চেয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন লিগ (ডিপিডিএল) কঠিন।
আইপিএল শুধু ভারতেরই নয়, বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও জমকালো ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি লিগ। ২০ ওভারের ক্রিকেটের এই টুর্নামেন্টে খেলোয়াড়দের সামনে থাকে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থের হাতছানি। নিলামের হাতুড়িতে কোটিপতিও বনে যান অনেকে। বিশ্বের সব জায়গার ক্রিকেটার এ লিগে খেলার জন্য মুখিয়ে থাকেন। এমনকি আইপিএলের জন্য রয়েছে আলাদা উইন্ডোও।
সব মিলিয়ে জনপ্রিয়তা, আয়োজনের ব্যাপকতা ও পারিশ্রমিক বিচারে আইপিএলের সঙ্গে অন্য কোনো দেশের ঘরোয়া টুর্নামেন্টের তুলনা হয় না। সেখানে আইপিএলে চার মৌসুম খেলা সাবেক বেঙ্গালুরু রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স অলরাউন্ডার পারভেজ কিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ঢাকা প্রিমিয়ার লিগকে আইপিএলের চেয়ে এগিয়ে রাখছেন! কেন?
শুনুন তাঁর মুখেই। ডব্লু জে রসুলের শো ‘অফ স্ক্রিপ্ট’কে পারভেজ বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ঢাকা লিগে আমি পাঁচ বছর খেলেছি। আমার মতে, ঢাকা লিগ আইপিএলের চেয়ে কঠিন। আমি আইপিএল এবং ঢাকা লিগেও খেলেছি।’
জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ভারতের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে জাতীয় দলের হয়ে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলা পারভেজের ব্যাখ্যা, ‘কঠিন, কারণ আইপিএলে চুক্তি করা হয় মৌসুমের জন্য। খেলার সুযোগ পান আর না পান, চুক্তি করা হয়। খেলানোটা দলের ওপর নির্ভর করে। ভালো করুন কিংবা এক-দুটো ম্যাচ খারাপ করে বাদ পড়লেও দলের সঙ্গে থাকা যায়। কিন্তু ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সব মিলিয়ে চাপ অনেক বেশি। কারণ, তারা দুই ম্যাচের জন্য চুক্তি করে। এই দুই ম্যাচে ভালো করলে টিকে যাবেন। ব্যর্থ হলে তৃতীয় ম্যাচের পর ফেরার টিকিট হাতে পাবেন।’
ভারতের হয়ে ২০১৭ সালে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা ৩৫ বছর বয়সী পারভেজ আইপিএলে খেলেছেন ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত। মিঠুন মানহাসের পর জম্মু ও কাশ্মীরের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে আইপিএলে সুযোগ পাওয়া এই অলরাউন্ডার রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ছাড়াও খেলেছেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ও পুনে ওয়ারিয়র্সে। অবশ্য ৩ ফ্র্যাঞ্চাইজিতে ৪ বছর কাটালেও ম্যাচ খুব বেশি খেলতে পারেননি। ১১ ম্যাচ খেলে অফ স্পিনে নিয়েছেন ৪ উইকেট, ব্যাট হাতে করেছেন ১৭ রান।
পরবর্তী সময়ে আইপিএল নিলামে দল না পাওয়ায় ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলা শুরু করেন পারভেজ। এখন পর্যন্ত গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স, লেজেন্ডস অব রুপগঞ্জ ও শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের হয়ে খেলেছেন ৪ মৌসুম।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ কতটা কঠিন, সেটা বোঝাতে গিয়ে পারভেজ জানান, বড় বড় তারকারাও এখানে ব্যর্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন, ‘কোনো নাম বলব না। কিন্তু বেশ কয়েকজন বড় খেলোয়াড় আছেন, যাঁরা সেখানে (ডিপিএল) খেলেছেন এবং ২-৩ ম্যাচ পরই ফেরত পাঠানো হয়েছে।’
২০১৪ সালে মিরপুরে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের হয়ে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় পারভেজের। তিন বছর পর কানপুরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি খেলেন। এরপর আর জাতীয় দলে ডাক পাননি।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের যাত্রা শুরু ১৯৭৩-৭৪ মৌসুমে। ২০১৩-১৪ মৌসুমে এই টুর্নামেন্টকে লিস্ট ‘এ’ ক্যাটাগরিভুক্ত করা হয়। এর আগে থেকেই ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে অনেক বিদেশি তারকা খেলে গেছেন। অরুণ লাল, প্রণব রায়, ওয়াসিম জাফর, অজয় জাদেজা থেকে অরবিন্দ ডি সিলভা, সনাথ জয়াসুরিয়া, ওয়াসিম আকরামরা খেলেছেন একসময়। পাকিস্তান থেকে শুধু ওয়াসিম আকরামই নন, সেলিম মালিক, ইজাজ আহমেদ ও মোহাম্মদ ইউসুফও খেলেছেন। ইংল্যান্ড থেকে খেলেছেন নিল ফেয়ারব্রাদার ও রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে গাস লোগি। কেনিয়া থেকে খেলেছেন স্টিভ টিকোলো ও মরিস ওদুম্বেরা।