এ হার নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা উচিত হবে না

আগেই জানা ছিল, এ ম্যাচ জেতা অনেক কঠিন হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে হয়তো আশার একটু আলো ছিল। তবে ম্যাচ এতটা একপেশে হয়ে যাবে, হারের ব্যবধান এত বড় হবে, সেটি ভাবিনি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে নেট রান রেট যা বেড়েছিল, সেটি সংকুচিত হয়ে গেল।

তবে বাংলাদেশ দলের এ হার নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা উচিত হবে না, পরের ম্যাচের দিকেই নজর দিতে হবে। এমন নয় যে জেতা ম্যাচ হেরে গেছে। তবে যে ব্যাপারগুলো ঠিক করার ছিল, সেগুলো কতটুকু হলো, তা তো ভাবতেই হবে।

নতুন একটা উইকেটে খেলা হয়েছে, যেটি আগের ম্যাচের চেয়ে একটু ভালো ছিল। সাকিব আল হাসানের টসে জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার সিদ্ধান্তটা ঠিকই ছিল মনে হয়। হয়তো তিনি আশা করেছিলেন, বোলাররা আরেকটু সুবিধা আদায় করে নিতে পারবেন।

মেহেদীকে আউট করার পর ইংলিশদের উদ্‌যাপন। গতকাল ধর্মশালায়
ছবি : আইসিসি

তবে শুরুতে ভাগ্যও পাশে ছিল না। বেশ কয়েকটি বলে পরাস্ত হয়েছিলেন ব্যাটসম্যানরা, এর যেকোনো একটিতে তাঁরা আউট হতে পারতেন। অবশ্য নতুন বলে তিন পেসারও ধারাবাহিকভাবে চাপ তৈরি করে যেতে পারেননি। ইংল্যান্ডের প্রথম তিন ব্যাটসম্যানই বড় স্কোর গড়েছেন। ডেভিড ম্যালানের ইনিংসই ম্যাচটাকে তাদের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। সঙ্গে জো রুটের বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিং বাংলাদেশকে হতাশ করার জন্য যথেষ্ট।

৩১-৪০ ওভারের মধ্যে যে ১১১ রান হয়েছে, সেখানেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি ওদের হাতে চলে গেছে। তবে শেষ ১০ ওভারে বোলাররা নিজেদের দক্ষতা এবং উইকেট থেকে পাওয়া সহায়তা কাজে লাগিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। না হলে ইংল্যান্ডের স্কোর আরও বড় হতো। গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ে কিছু মিস হলেও ক্যাচিং বেশ ভালো ছিল।

একাদশে বাড়তি একজন বোলার নেওয়ার যথার্থতা প্রমাণিত হয়েছে। মেহেদী হাসান প্রমাণ করেছেন, তাঁকে দলে নেওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। প্রতিপক্ষ শক্তিশালী হলে ষষ্ঠ একজন বোলার দরকার, সামনেও সেটি মাথায় রাখতে হবে। তবে বোলিং বিভাগের নিয়মিত সদস্যরা সাফল্য এনে দিতে পারেননি। সামগ্রিকভাবে বোলিং ব্যর্থ হয়েছে। না হলে ইংল্যান্ডকে ৩০০-এর আশপাশেও আটকে রাখা যেত। এ ম্যাচে কিছু জায়গায় উন্নতির দরকার ছিল, তার মধ্যে একটি—নতুন বলে উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর চাপ তৈরি করা। সেটি হয়নি। টস জেতাটা তাই কাজে আসেনি।

শুরুতেই ৩ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ
ছবি : এএফপি

পেস বোলিং আক্রমণের নেতৃত্ব যাঁর হাতে, সেই তাসকিনকে ছন্দে দেখছি না। অবশ্য এ মাঠে রানআপের জায়গাটা তেমন ভালো না, সেটিও প্রভাব ফেলতে পারে। তবে নতুন বলে উইকেট নেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ তাঁকে আরও কার্যকর ভূমিকায় দেখতে চায়। এ টুর্নামেন্টে সাফল্য নতুন বলে উইকেট নেওয়ার মধ্যেই নিহিত থাকবে।

ম্যাচের মাঝপথে শরীরী ভাষা যতই চাঙা থাকুক না কেন, আমি নিশ্চিত মানসিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ দল পিছিয়ে পড়েছিল। ইংল্যান্ড দলে চার পেসারের সঙ্গে আদিল রশিদের মতো স্পিনার ছিলেন। তাঁরা বাংলাদেশের দুর্বলতা জানেন, উইকেটের চাহিদা মেটানো বোলিংও করেছেন। ৬ ওভারের মধ্যে ৩ জন আউট হওয়ার পরই ড্রেসিংরুম আত্মবিশ্বাসের জায়গাটা নড়বড়ে হয়ে যাওয়ার কথা। তানজিদ বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে আউট হয়েছেন। তাঁকে আরেকটু কাউন্সেলিং করা দরকার। তবে এখনই দুশ্চিন্তা করা উচিত হবে না, আশা করি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে রান পাবেন।

সাকিবের আউট হওয়ার বলটি দুর্দান্ত, তবে সেটি মোকাবিলা করার মতো সামর্থ্য তাঁর আছে। প্রথম ১০ ওভারে ৪ উইকেট হারানোর পরই লড়াই থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। তখনোই বোঝা যাচ্ছিল, এ ম্যাচে বেশি দূর যাওয়া বেশ কঠিন হবে।

লিটন ও মুশফিকের ফিফটিতে বাংলাদেশ কিছুটা লড়াই করেছে
ছবি : এএফপি

তবে লিটনের রানে ফেরা বেশ ইতিবাচক। সতীর্থরা না পারলেও তিনি সহজাত খেলা খেলেছেন। উইকেটে যতক্ষণ ছিলেন, কর্তৃত্ব নিয়েই খেলেছেন। এটিকেই বড় করে দেখি। মুশফিক ও হৃদয়ও উইকেটে সময় কাটাতে পেরেছেন, যেটি আস্থা ফেরাতে ও আত্মবিশ্বাস বাড়াতে কাজে দেবে।

গাজী আশরাফ হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক