‘স্বার্থপর’ বাবর-রিজওয়ানের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক আফ্রিদির

অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ২০৩ রান তুলে পাকিস্তানের জয় নিশ্চিতের পর বাবর–রিজওয়ানছবি: এএফপি

এশিয়া কাপে রান পেলেও স্ট্রাইক রেট নিয়ে সমালোচিত ছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। আর বাবর আজমের সমালোচনা হচ্ছিল ফর্ম ও স্ট্রাইক রেট নিয়ে। কাল রাতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করাচি ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে দুজনে যা ব্যাটিং করলেন, একেকটি শট ছিল যেন সমালোচকদের মুখে চপেটাঘাত। জুটিতে রান তাড়ায় গড়েছেন টি–টোয়েন্টির বিশ্বরেকর্ড, পেরিয়ে যান ব্যক্তিগত মাইলফলকও।

আরও পড়ুন

ইংল্যান্ডের ৫ উইকেটে ১৯৯ রান তাড়ায় ৩ বল হাতে রেখে অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ২০৩ রান তোলেন বাবর–রিজওয়ান। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে রান তাড়ায় এটিই যেকোনো উইকেট জুটির সর্বোচ্চ।

আগের সেরাও ছিল এই দুজনেরই। ২০২১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে গড়েছিলেন ১৯৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি।

জুটির কীর্তি অবশ্য এখানেই শেষ নয়। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে যেকোনো উইকেটে এখন সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৯২৯ রান বাবর–রিজওয়ানের। ৫৬.৭৩ গড়ে যে রান তুলেছেন ৩৬ ইনিংসে।

এত দিন ৫২ ইনিংসে ১ হাজার ৭৪৩ রান নিয়ে শীর্ষে ছিলেন ভারতের শিখর ধাওয়ান–রোহিত শর্মা জুটি।

রেকর্ডময় জুটিটি এসেছে বাবর–রিজওয়ানের ব্যক্তিগত নৈপূণ্যে। রিজওয়ান ৫১ বলে ৮৮ রান করেন ১৭২.৫৪ স্ট্রাইক রেটে, আর বাবরের ৬৬ বলে ১১০ রানের ইনিংসে স্ট্রাইক রেট ১৬৬.৬৬। দুজনের দেড়শ ছাড়ানো স্ট্রাইক রেটের সুবাদে ২০তম ওভারের তৃতীয় বলে জয় নিশ্চিত করে পাকিস্তান।

বাবর–রিজওয়ানের এ পারফরম্যান্সকে ইঙ্গিত করে সমালোচকদের তীর্যক মন্তব্যে খোঁচা দিয়েছেন পাকিস্তানি পেসার শাহিন আফ্রিদি, ‘আমার মনে হয় অধিনায়ক বাবর ও রিজওয়ানের কাছ থেকে এখন মুক্তি পাওয়া দরকার। ওরা এমন স্বার্থপর খেলোয়াড়। যদি ঠিকঠাকভাবে খেলত, তাহলে ১৫ ওভারের মধ্যে রান তাড়া হয়ে যেত। কিন্তু ম্যাচটা তারা শেষ ওভার পর্যন্ত নিয়ে গেল। এ নিয়ে একটা আন্দোলন করা যায়, করা যায় না?’

খোঁচা দিয়ে একটি ইমোজিও ব্যবহার করেছেন শাহিন। লন্ডনে চোট–পরবর্তী পুনর্বাসনের মধ্যে থাকা এ পেসার শেষে লিখেছেন, ‘পাকিস্তানের এ দারুণ দলটা নিয়ে আমি ভীষণভাবে গর্বিত।’

বাবর–রিজওয়ানের জুটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন তাঁদের আরেক সতীর্থ শাদাব খানও।

নেতৃত্বে বাবরের সহকারী হিসেবে থাকা এ অলরাউন্ডার লিখেছেন, ‘মনে রাখবেন, রাজা সব সময় রাজাই থাকে, বাবর আমাদের রাজা। দুনিয়া খুব দ্রুত সব ভুলে যায়। আমাদের রিজওয়ান যে মাপের লড়াকু মানুষ, এমনটা আমি আর কাউকে দেখিনি। আমরা হারি, আমরা জিতি, এটা ক্রিকেটেরই অংশ। এটাই আমাদের পাকিস্তান, এটাই আমাদের দল।’

আরও পড়ুন

শুধু পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা নন, ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক নাসের হুসাইনও বাবর–রিজওয়ানের জুটি নিয়ে প্রশংসা করেছেন, ‘আপনি যদি মনে করে বাবর–রিজওয়ানের ব্যাটিংয়ে সমস্যা, তাহলে তাদের কয়েক বছরের খেলা আপনি দেখেননি।’

এ ম্যাচে জুটির পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ব্যক্তিগত মাইলফলকও পার করেছেন বাবর। পাকিস্তানের অধিনায়কদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১০টি সেঞ্চুরি এখন তাঁর, ৯ সেঞ্চুরি নিয়ে যৌথভাবে শীর্ষে ছিলেন ইনজামাম উল হকের সঙ্গে।

ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টি সেঞ্চুরির পর উচ্ছ্বাসে লাফ দেন বাবর আজম।
ছবি: এএফপি

টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পর প্রথম পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে তিন হাজার রানও পূর্ণ হয়েছে বাবরের। সব টি–টোয়েন্টি মিলে পূর্ণ হয়েছে আট হাজার রান, যেখানে পাকিস্তানিদের মধ্যে আছেন শুধু শোয়েব মালিক।

টি-টোয়েন্টিতে ৮ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করতে ২১৮ ইনিংস লেগেছে বাবরের, যা ক্রিস গেইলের (২১৩ ইনিংস) পর দ্বিতীয় দ্রুততম। বয়সের দিক থেকে (২৭ বছর ৩৪২ দিন) বাবরই আবার সবার ওপরে। এত দিন শীর্ষে ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার কুইন্টন ডি কক (২৯ বছর ২৫১ দিন)।