সিলেটে হঠাৎ সাংবাদিক হয়ে গেলেন নেদারল্যান্ডসের ক্রিকেটার
বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি–টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে নেদারল্যান্ডস দল এখন সিলেটে। শনিবার প্রথম টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জিতেছে।
তাঁর হাতে ক্যামেরা। পকেটে ফোন। মাথায় নেদারল্যান্ডস ক্রিকেট দলের ক্যাপ। গায়ে অনুশীলন জার্সি। কোথায় যাচ্ছেন? ক্রিকেটার হিসেবে তাঁর যাওয়ার কথা সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আউটার মাঠের অনুশীলনে। কিন্তু বাকি সবাই ওই পথ ধরলেও ম্যাক্স ও’ডাউড থমকে গেলেন সংবাদ সম্মেলন কক্ষের কাছে এসে।
নেদারল্যান্ডসের কয়েকজন ক্রিকেটার বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন। সেটিরই ভিডিও ধারণ করতে শুরু করলেন ও’ডাউড। কিন্তু এরপর?
নেদারল্যান্ডসের মিডিয়া ম্যানেজার কোরে রুটগার্ডস একটু অবাক করে দিয়েই বলে উঠলেন, ম্যাক্স আজ সাংবাদিক হিসেবে আপনাদের সঙ্গে থাকবে। তখনো পর্যন্ত তা নেহাত রসিকতা মনে না হওয়ার কারণ নেই।
কিন্তু ম্যাক্স ও’ডাউডের গন্তব্য সত্যিই সংবাদ সম্মেলন কক্ষ। ছোট্ট সংবাদ সম্মেলনে কক্ষের সব চেয়ারেই তখন বাংলাদেশি সাংবাদিকেরা বসা। ম্যাক্স পেছনের দিকে গিয়ে একটা চেয়ার পেয়ে সেখানে বসে পড়লেন। নেদারল্যান্ডস দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলবেন নোয়াহ ক্রস, তার আগেই এই প্রতিবেদক ও’ডাউডের কাছে জানতে চাইলেন, ‘তুমি কি সত্যিই আজ সাংবাদিকের ভূমিকায় থাকবে?’
মুখে একটা চওড়া হাসি রেখেই ও ডাউড বললেন, ‘অবশ্যই! এটাই হয়তো আমার ভবিষ্যতের চাকরি…’। ভিনদেশিদের রসিকতা বোঝা মাঝেমধ্যে কঠিন হয়ে পড়ে। ও’ডাউডও তেমন কিছু করলেন কি না, তা বুঝতে অপেক্ষা করতে হলো আরও কিছুক্ষণ।
ও’ডাউড বা নেদারল্যান্ডসের মিডিয়া ম্যানেজার যে মজা করেননি— তা বোঝা গেল একটু পর প্রশ্ন করতে তাঁর হাত তোলাতে। সিরিজ কাভার করতে নেদারল্যান্ডসের কোনো সাংবাদিক বাংলাদেশে আসেননি। সে অভাবটাই যেন পূরণ করতে চাইলেন ও’ডাউড। সামনে বসা সতীর্থ ক্রসকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার টঙ্কার ডাকনামের গল্পটা একটু বলবে?’
ক্রসও স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দিলেন, ‘ধন্যবাদ ম্যাক্স, তোমাকে ওখানে দেখে ভালো লাগছে।’ এরপর বললেন ডাকনামের কারণও, পছন্দের এক বেসবল খেলোয়াড়ের কারণেই তাঁর নামের পাশে বসে গেছে তা।
সংবাদ সম্মেলনের বাকি অংশেও মনোযোগী দেখা গেছে ও’ডাউডকে। কখনো হাতের ছোট ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও করেছেন, কখনো ফোন দিয়ে তুলে রেখেছেন ছবি। শেষদিকে ক্রসকে তিনি প্রশ্ন করেন আরও একটি, বাংলাদেশে তোমার পছন্দের ক্রিকেটার কে?
উত্তর দেওয়ার আগে ও’ডাউডকে খোঁচাই দিয়ে রাখলেন নোয়াহ, ‘ভালো প্রশ্ন করেছ’। এরপর বলেছেন, ‘অনেকের নামই বলা যায়। আমি গত বছর মোস্তাফিজের বিপক্ষে খেলেছি—সেটা ছিল দারুণ এক অভিজ্ঞতা।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে অনুশীলনে যাওয়ার পথে সাংবাদিক হিসেবে নিজের পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন চাইলেন ও’ডাউড। ‘তুমি ভবিষ্যতে ভালো সাংবাদিক হতে পারবে’ বাংলাদেশি এক সাংবাদিক এমন বলার পর যেন সনদ অর্জনের আনন্দই দেখা গেল তাঁর চোখেমুখে। ক্রসও অবশ্য ও’ডাউডের সম্ভাব্য ক্যারিয়ার নিয়ে আশাবাদী, ‘আমার মনে হয় সে এখানে ক্যারিয়ার গড়তে পারবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সে অনেক সরব।’
কে জানে, কয়েক বছর পর হয়তো নেদারল্যান্ডসের ম্যাচ কাভার করতে তাঁদের দেশের কারও প্রেসবক্সে না থাকার আক্ষেপটা দূর করবেন ও’ডাউড। ক্রসের কোনো কীর্তি নিয়ে কী লিখবেন তিনি? প্রশ্নটা সময়ের হাতে তোলা থাকল!