আগামী বছরে কি আবার আইপিএল-পিএসএল সংঘাত
ক্রিকেটকে বাণিজ্যিকীকরণ করে ফেলার পর বিশ্বজুড়ে এখন এত ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি লিগ হয় যে একটির সঙ্গে আরেকটি সূচি সাংঘর্ষিক হয়েই যায়।
কয়েক বছর ধরে বিপিএলের সময়ে হয়ে আসছে আরও চার টুর্নামেন্ট—অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ লিগ, নিউজিল্যান্ডের সুপার স্ম্যাশ, দক্ষিণ আফ্রিকার এসএ২০ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইএলটি২০।
তবে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও দামি ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আইপিএলের জন্য সাধারণত এমন সময় বরাদ্দ থাকে, যে সময়ে অন্য লিগ থাকে না। কিন্তু আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির কারণে এ বছর এই অলিখিত নিয়মের ব্যতয় ঘটেছে।
গত ফেব্রুয়ারি–মার্চে আরব আমিরাতকে নিয়ে হাইব্রিড মডেলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আয়োজন করেছে পাকিস্তান। দেশটির শীর্ষ টি–টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা পাকিস্তান সুপার লিগও (পিএসএল) ফেব্রুয়ারি–মার্চে হয়ে থাকে। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস ট্রফির কারণে পিএসএল এবার পিছিয়ে নেওয়া হয় এপ্রিল–মে মাসে, আইপিএলের সময়ে।
২০২৬ সালেও আইপিএল–পিএসএলের সূচি সাংঘর্ষিক হয়ে উঠতে পারে বলে জানিয়েছে ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই। কারণ, টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। আগামী বছর ভারত ও শ্রীলঙ্কা যৌথভাবে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণের দশম বিশ্ব আসর হওয়ার কথা ফেব্রুয়ারি–মার্চে, পিএসএলের সময়ে। ফলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) আগামী বছরও আইপিএলের সময়ে (এপ্রিল–মে) নিজেদের লিগ আয়োজনের পরিকল্পনা করছে।
পিটিআইকে পিসিবির একটি সূত্র বলেছে, ‘ডিসেম্বর ও জানুয়ারির প্রথমার্ধে একটি ফাঁকা সময় আছে। কিন্তু বোর্ড এরই মধ্যে পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ লিগে খেলার জন্য অনাপত্তিপত্র দিয়েছে। এ ছাড়া ওই সময় বোর্ডের কিছু ঘরোয়া কার্যক্রমও পরিকল্পনায় আছে। তাই আলোচনায় বসলে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের বলা হবে, তাঁরা যেন এই বছরের মতো আগামী বছরেরও এপ্রিল–মে মাসে পিএসএল খেলার জন্য প্রস্তুতি নেন।’
পিএসএল সচিবালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এ বছর চ্যাম্পিয়নস ট্রফির কারণে পিএসএল ফেব্রুয়ারি-মার্চে না হয়ে আইপিএলের সময়ে হয়েছে। এতেও পিএসএলের স্বাভাবিক দর্শকসংখ্যা ও আগ্রহে কোনো প্রভাব পড়েনি। শুরুতে কিছুটা উদ্বেগ ছিল যে একই সময়ে দুটি লিগ হলে আমাদের লিগ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে টিভি ও অন্যান্য মাধ্যমে দর্শকসংখ্যা বেড়েছে এবং ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো এমন কয়েকজন বিদেশি খেলোয়াড়কে সই করাতে পেরেছিল, যাঁরা আইপিএল নিলামে বিক্রি হননি।’
আগামী বছর থেকে পিএসএলে দুটি দল বাড়ানোর পরিকল্পনাও করছে পিসিবি, যার প্রস্তুতি এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। পিসিবি আগামী ১০ বছরের টাইটেল স্পনসরশিপ চুক্তিও পুনর্বিবেচনার কথা ভাবছে এবং এর সঙ্গে একটি নতুন লাইভ স্ট্রিমিং চুক্তিও হবে। মুলতান সুলতানস ছাড়া বাকি পাঁচ ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক ২০৩৫ সাল পর্যন্ত পিএসএলে তাঁদের মালিকানা ধরে রাখার ব্যাপারে লিখিতভাবে সম্মতি জানিয়েছেন।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন জানিয়েছে, বর্তমানে পিসিবি টাইটেল স্পনসরশিপ থেকে প্রতিবছর আনুমানিক ৯০ কোটি পাকিস্তানি রুপি আয় করে। গত বছর লাইভ স্ট্রিমিং স্বত্ব আনুমানিক ১৮০ কোটি রুপিতে বিক্রি হয়। স্থানীয় সম্প্রচারের স্বত্ব থেকে প্রায় ৬৩০ কোটি রুপি এবং আন্তর্জাতিক স্বত্ব থেকে ৪৬ লাখ মার্কিন ডলার আয় হয়। আর মাঠের স্বত্ব দুই বছরের জন্য প্রায় ২০০ কোটি রুপিতে বিক্রি হয়।
মে মাসের শুরুতে কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার জেরে সংঘাতে জড়িয়েছিল ভারত–পাকিস্তান। যার ফলে আইপিএল ও পিএসএল প্রায় ১০ দিন বন্ধ ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলে টুর্নামেন্ট দুটি শেষ অংশ আবার মাঠে গড়ায়। পরবর্তিত সূচিতে পিএসএল ২৫ মে শেষ হলেও আইপিএল শেষ হয়েছে ৩ জুন।