‘ধোনি ও ওয়াংখেড়ের প্রেমের গল্পটাই আলাদা’

ওয়াংখেড়েতে ৪ বলে ২০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে উঠে যাওয়ার পথে মহেন্দ্র সিং ধোনিআইপিএল

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিসিসিআইয়ের অফিশিয়াল আইডি থেকে ছবিগুলো পোস্ট করা হয়েছিল এ ম্যাচের আগের দিন। মহেন্দ্র সিং ধোনি ছুঁয়ে দেখছেন ২০১১ সালে জেতা বিশ্বকাপ ট্রফিটা। ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কার্যালয় ওয়াংখেড়েতে, সেখানেই রাখা আছে সেটি। ১৩ বছর আগের এক এপ্রিলে নুয়ান কুলাসেকেরাকে ছক্কা মেরে ভারতের ২৮ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়েছিলেন ধোনি।

আরেক এপ্রিলে ধোনি আরেকবার ফিরলেন সেই ওয়াংখেড়েতে। ম্যাচের আগেই চেন্নাই কোচ স্টিফেন ফ্লেমিং বলেছিলেন, প্রতিপক্ষের ঘরের মাঠেও ধোনি যেভাবে সমর্থন পাচ্ছেন—সেটি অসাধারণ। গতকাল মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের ঘরের মাঠে ধোনি যখন ব্যাট হাতে নামেন, চেন্নাইয়ের ইনিংসে বাকি ৪ বল। স্কোর ১৮৫/৩। ম্যাচ শেষে চেন্নাই অধিনায়ক রুতুরাজ গায়কোয়াড় নিজেই বলেছেন, তাদের লক্ষ্য ছিল ২১৫ থেকে ২২০ রানের মতো। যশপ্রীত বুমরার ডেথ ওভারের বোলিংয়ে সে লক্ষ্য থেকে তখনো বেশ খানিকটা পিছিয়ে চেন্নাই।

ধোনি নামলেন, রাতের সবচেয়ে বড় গর্জনটা যেন শোনা গেল তখন। যেমন শোনা গিয়েছিল ২০১১ সালের এপ্রিলে কুলাসেকেরাকে মারা ওই ছক্কার পর।

৪২ বছরের 'তরুণ' ধোনি
বিসিসিআই

পান্ডিয়ার বলে ধোনির পরের ৪ বলের স্কোরিং শট এমন—৬, ৬, ৬, ২। এক লাফে চেন্নাই ২০৬ রানে। ইনিংসের পরই পান্ডিয়াকে স্টার স্পোর্টসে ধুয়ে দিলেন সুনীল গাভাস্কার, ‘অনেক দিন পর এত বাজে ডেথ বোলিং দেখলাম। সাদামাটা বোলিং, সাদামাটা অধিনায়কত্ব। চেন্নাইকে ১৮৫ রানের মধ্যে আটকে রাখা উচিত ছিল।’

সেটি মুম্বাই পারেনি ৪২ বছর বয়সী ধোনির কারণেই। শেষ ৪ বলে ধোনি তুলেছেন ২০ রান, চেন্নাই ম্যাচটি জিতেছে ঠিক ওই ব্যবধানেই। ম্যাচ শেষে গায়কোয়াড় বললেন, পার্থক্য গড়ে দিয়েছে শেষের ঝড়টিই, ‘আমাদের “তরুণ” উইকেটকিপার নিচের দিকে তিনটি ছক্কা মেরে অনেক সহায়তা করেছে। আমার মনে হয় সেটিই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। ম্যাচের শুরুতে আপনি এমন মাঠে ১০-১৫ রান অতিরিক্ত চাইবেন।’

আরও পড়ুন

অবশ্য লক্ষ্যটা বড় হলেও নাগালের বাইরে ছিল না মুম্বাইয়ের, অধিনায়ক পান্ডিয়া মনে করেন এমন। সেটি না হওয়ার পেছনে তিনি কারণ হিসেবে দেখেন চেন্নাইয়ের ‘স্মার্ট’ পরিকল্পনাকে—তাদের বোলাররা দীর্ঘ বাউন্ডারির দিকে মারতে মুম্বাই ব্যাটারদের বাধ্য করেছে। পান্ডিয়া এরপর বলেছেন আরেকটি ‘কারণ’, ‘স্টাম্পের পেছনে তাদের এক লোক আছে, যিনি বলে দিচ্ছিলেন কী কাজে দিচ্ছে এখানে। বল একটু উইকেটে ধরছিল এবং তারা এতেই ম্যাচে একটু এগিয়ে গেছে।’

টানা তিন হারের পর দুটি জয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিল মুম্বাই। চেন্নাইয়ের সামনে পড়ে আটকে যেতে হলো তাদের। ধোনিদের এ জয়ের সেরা খেলোয়াড় মাতিশা পাতিরানা, ‘চেন্নাইয়ের মালিঙ্গা’ ছিলেন দুর্দান্ত। শার্দুল ঠাকুরের মতে, তরুণ লঙ্কান পেসার ছিলেন ‘জাদুকরি’।

আরও পড়ুন

তবে ওয়াংখেড়ের দর্শকদের তাতে বয়েই গেছে। তারা যে লক্ষ্যে এসেছিল, তা তো পূরণ হয়ে গেছে প্রথম ইনিংসের শেষ ৪ বলেই। ৪২ বছরের ‘তরুণ’ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান যে রাতে ফিরিয়ে এনেছিলেন ১৩ বছর আগের স্মৃতি।

ভারত নারী দলের ক্রিকেটার জেমিমা রদ্রিগজ যেমন এক্সে পোস্ট করে বলেছেন, ‘মহেন্দ্র সিং ধোনি ও ওয়াংখেড়ে—এ প্রেমের গল্পটাই আলাদা!’