বাসচালকও জানেন কোহলিকে কীভাবে আউট করতে হয়
স্বপ্নের ডেলিভারিতে স্বপ্নের উইকেট!
হিমাংশু সাঙ্গওয়ানের অফ স্টাম্পের একটু বাইরে ফেলা বলটি যেভাবে ইনসুইং করে ঢুকে স্টাম্প উড়িয়েছে, তা দেখে থাকলে সবাই এ কথাই বলতেন।
হিমাংশুকে খুব বেশি মানুষের চেনার কথা নয়। কিন্তু ২৯ বছর বয়সী এই পেসারের বলে যিনি বোল্ড হয়েছেন, তাঁর নাম ও ভারের কারণেই হিমাংশু এখন আলোচনায়। হিমাংশুর শিকারের নাম যে বিরাট কোহলি!
এক যুগের বেশি সময় পর গত বৃহস্পতিবার দিল্লি-রেলওয়ে ম্যাচ দিয়ে রঞ্জি ট্রফিতে খেলতে নামেন কোহলি। তাঁর প্রত্যাবর্তন ম্যাচটার ভেন্যু আবার জন্মশহর দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম।
ঘরের ছেলেকে দীর্ঘ সময় পর দিল্লির হয়ে খেলতে দেখতে তাই তর সইছিল না ভারতের রাজধানীবাসীর। স্টেডিয়ামের গেটে রাত ৩টা থেকে লাইন পড়ে যায়, সেই লাইন ছিল ২ কিলোমিটার বিস্তৃত। সকাল সকাল দর্শকে টইটম্বুর হয়ে যায় সব গ্যালারি। রঞ্জিতে কোহলির প্রত্যাবর্তন ঘিরে দর্শকের এমন আগ্রহ দেখে ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচারের সিদ্ধান্ত নেয় স্পোর্টস-১৮ ও জিও সিনেমা কর্তৃপক্ষ।
গত শনিবার শেষ হওয়া সেই ম্যাচে হিমাংশুর রেলওয়েকে ইনিংস ও ১৯ রানে হারায় কোহলির দিল্লি। কিন্তু ব্যাট হাতে ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়া কোহলি এই ম্যাচেও সাফল্যের দেখা পাননি। ম্যাচে একবারই ব্যাট করার সুযোগ পাওয়া ভারতীয় কিংবদন্তি হিমাংশুর বলে বোল্ড হওয়ার আগে করতে পারেন মাত্র ৬ রান। ৫৫ রানে ৪ উইকেট নিয়ে রেলওয়ের সেরা বোলারও ছিলেন হিমাংশু। ২৯টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা এই পেসার তার পর থেকেই আলোচনায়।
তা কোহলির মতো ব্যাটসম্যানকে আউট করার উপায় কীভাবে বের করলেন, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসকে সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন হিমাংশু। কোহলির বিপক্ষে কল্পিত চতুর্থ ও পঞ্চম স্টাম্পে (অফ স্টাম্পের বাইরে) বল করতে বলা হয়েছিল হিমাংশুকে। তাঁকে নাকি এ পরামর্শ দিয়েছিলেন রেলওয়ের টিম বাসের চালক!
হিন্দুস্তান টাইমসকে হিমাংশু বলেছেন, ‘ম্যাচ শুরুর আগে শোনা যাচ্ছিল যে বিরাট কোহলি ও ঋষভ পন্ত দিল্লির হয়ে খেলতে পারে। সেই সময় আমরা জানতাম না খেলাটা টিভিতে সরাসরি দেখানো হবে। পরে জানতে পারলাম পন্ত খেলবে না, তবে বিরাট খেলবে এবং ম্যাচটা সরাসরি সম্প্রচার করা হবে আর আমি রেলওয়ের পেস আক্রমণের নেতৃত্বে থাকব। দলের প্রত্যেক সদস্য আমাকে বলে যে তাদের ধারণা আমিই বিরাট কোহলির উইকেট পাব।’
হিমাংশু এরপর বলেন, ‘এমনকি যে বাসে আমরা (মাঠে) যাওয়া-আসা করছিলাম, সেই বাসের চালকও আমাকে বলে যে কোহলির উইকেট পাওয়ার জন্য আমার চতুর্থ-পঞ্চম স্টাম্পে বল রাখা উচিত। তাহলেই নাকি কোহলি আউট হবে। নিজের প্রতি বিশ্বাস ছিল। আমি কারও দুর্বলতা নিয়ে ভাবার চেয়ে নিজের শক্তি অনুযায়ী বল করায় বেশি মনোযোগী ছিলাম। সেভাবেই বল করেছি এবং উইকেট পেয়েছি।’
কোহলিকে বোল্ড করে আগ্রাসী উদ্যাপন করেন হিমাংশু, যা কোহলির ভক্তরা ভালোভাবে নেননি। তবে কোহলি এই পেসারের বোলিংয়ে মুগ্ধ হয়েছেন। ম্যাচ শেষে কোহলিকে আউট করা বল নিয়ে দিল্লির ড্রেসিংরুমে যান হিমাংশু। সেই বলে অটোগ্রাফ দেন কোহলি এবং দুজন ছবিও তোলেন।
অফ স্টাম্পের বাইরের বল সামলানোয় কোহলির দুর্বলতার কথা কারও অজানা নয়। সর্বশেষ বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার পেসারদের বলে এভাবে উইকেট বিলিয়ে দেওয়াকে ‘ট্রেন্ড’ বানিয়ে ফেলেছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভারতের ৩-১ ব্যবধানে হেরে যাওয়া সিরিজে কোহলি ৯ ইনিংসে ২৩.৭৫ গড়ে করতে পারেন ১৯০ রান। সিরিজের সর্বশেষ ৭ ইনিংসের পারফরম্যান্স তাঁর নামের সঙ্গে একেবারেই বেমানান—১২.১৪ গড়ে মাত্র ৮৫ রান। সবচেয়ে দৃষ্টিকটু ব্যাপার ছিল তাঁর আউট হওয়ার মুহূর্তগুলো। সিরিজে ৮ বার তিনি আউট হয়েছেন। প্রতিবারই অস্ট্রেলিয়ান পেসারদের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে কিপারকে অথবা স্লিপে ক্যাচ দিয়ে।
ব্যাটিংয়ের সেই ছন্দহীনতা রঞ্জি ট্রফিতেও বয়ে এনেছেন কোহলি। হিমাংশুর বলে বোল্ড হয়েছেন সেই অফ স্টাম্পের বাইরে পড়া বলেই।
কোহলির সামনে এবার সাদা বলের চ্যালেঞ্জ। আগামী বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে ভারত-ইংল্যান্ড ওয়ানডে সিরিজ। প্রথম ম্যাচটা হবে নাগপুরে। ভারতীয় দলের সঙ্গে কোহলি এখন নাগপুরেই আছেন।