২৩ বছর আগের রেকর্ড চোখ রাঙাচ্ছে ইংল্যান্ডকে

অ্যাডিলেডে সেঞ্চুরির পর ট্রাভিস হেড। আজ তৃতীয় দিনেএএফপি

অ্যাডিলেডে আজ খেলা শেষেই প্রশ্নটি উঠেছে—দ্রুততম সময়ের মধ্যে অ্যাশেজ হারের রেকর্ডটি কি তাহলে ভেঙে যাচ্ছে? অথচ পাঁচ টেস্টের এই সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে তৃতীয় দিনের খেলা মাত্র হলো। সিরিজ শুরুর আগে যে অস্ট্রেলিয়াকে সবাই ‘বুড়োদের দল’ বলছিল, সেই অস্ট্রেলিয়াই এই ইংল্যান্ডের জন্য বড্ড ভালো।

কতটা ভালো, সেটা মনে করিয়ে দেওয়া যাক। পার্থে দুই দিনে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া, ব্রিসবেনে চার দিনে। অ্যাডিলেডে আজ তৃতীয় দিন শেষে অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে ৩৫৬ রানে। হাতে এখনো দ্বিতীয় ইনিংসের ৬ উইকেট। আগামীকাল অস্ট্রেলিয়া লিডটাকে আরও কত বাড়িয়ে নেবে, সেই আলোচনা না করলেও হয়তো চলে। কারণ, এই মাঠে চতুর্থ ইনিংসে ৩০০ রান তাড়া করে জয়ের সর্বশেষ ঘটনা ১২৩ বছর আগে। সেটাও ঘরের ছেলে ক্লেম হিলের ব্যাটে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়াই। ইংল্যান্ড চলতি অ্যাশেজে পাঁচ ইনিংসে তিন শর দেখা পেয়েছে মাত্র একবার। তাহলে?

তাহলে আর কী? অ্যাশেজের মীমাংসা হয়ে যাচ্ছে এই টেস্টেই এবং সম্ভবত তা অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সংক্ষিপ্ততম সময়ে। তিন টেস্ট মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৯ দিনের খেলা হয়েছে। ধরে নেওয়া যাক, অস্ট্রেলিয়া আগামীকাল সকালের সেশনে দ্রুত চার শর ওপাশে গিয়ে ইনিংস ঘোষণা করল। ইংল্যান্ড দিনের বাকি সময় টিকে থেকে ম্যাচটা পঞ্চম দিনে নিয়ে যেতে পারলেও সেটা হবে চলতি অ্যাশেজের ১১তম দিন।

অস্ট্রেলিয়ায় পাঁচ ম্যাচের অ্যাশেজে দ্রুততম সময়ে সিরিজ হারের রেকর্ডও ১১ দিনেই। সেটি ২০০২–০৩ মৌসুমে। আগামীকালই ইংল্যান্ড হেরে গেলে সেই রেকর্ড ভেঙে যাবে। ম্যাচ শেষ দিন পর্যন্ত গড়ালেও সমান হবে রেকর্ড। অস্ট্রেলিয়ায় না ইংল্যান্ডে খেলা—এটা ভুলে গেলে অবশ্য রেকর্ডটা ভাঙা খুব কঠিন। ১৯২১ সালে ইংল্যান্ড সফরে গিয়ে আট দিনেই অ্যাশেজ জিতে গিয়েছিল ওয়ারউইক আর্মস্ট্রংয়ের অস্ট্রেলিয়া।

পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে আউট হওয়ার পর স্টোকস
এএফপি

অ্যাডিলেডেও অনেকটা প্রথম দুই টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার আধিপত্যেরই পুনরাভিনয় হচ্ছে। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার ৩৭১ রানের জবাবে ইংল্যান্ড দ্বিতীয় দিন শেষ করেছিল ৮ উইকেটে ২১৩ রানে। পিছিয়ে ছিল ১৫৮ রানে। টিমটিমে আশা হয়ে জ্বলছিল অবিচ্ছিন্ন নবম উইকেটে ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস ও পেসার জফরা আর্চারের ৪৫ রানের জুটি। আজ তৃতীয় দিনে আরও চওড়া হয় তাঁদের পাল্টা প্রতিরোধের ব্যাট। সকালের সেশনে আরও ১৬.১ ওভার ব্যাট করে জুটিটি ১৮১ বলে ১০৬ রানে উন্নীত করে ব্যক্তিগত ৮৩ রানে আউট হন স্টোকস। ১০৫ বলে ৫১ করেন আর্চার। টেস্টে তাঁর প্রথম ফিফটি—বলা ভালো, স্টোকসের সঙ্গে চোয়ালবদ্ধ পাল্টা লড়াইয়ের প্রতিজ্ঞায় ঢুকে গেছেন রেকর্ড বইয়ে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে গত ১০১ বছরের মধ্যে ইংল্যান্ডের নবম উইকেটে এটাই সর্বোচ্চ রানের জুটি।

আরও পড়ুন

ইংল্যান্ডের সিরিজে ফেরার একমাত্র সুযোগ ছিল দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়াকে কম রানে গুটিয়ে দেওয়া। তা আর হলো কই! উল্টো অস্ট্রেলিয়া ৬৬ ওভারেই তুলে ফেলেছে ৪ উইকেটে ২৭১। ১৯৬ বলে ১৪২ রানে অপরাজিত ক্লেম হিলের মতোই ঘরের ছেলে ট্রাভিস হেড। অ্যালেক্স ক্যারি অন্য প্রান্তে অপরাজিত ৫২ রানে। অ্যাডিলেডে টানা চার টেস্টেই সেঞ্চুরি করে মাইকেল ক্লার্ক, স্টিভেন স্মিথ ও ডন ব্র্যাডম্যানের পাশে বসেছেন হেড। এই চারজনেরই এক ভেন্যুতে টানা চার টেস্টে সেঞ্চুরি আছে। ব্র্যাডম্যানের আছে দুবার—মেলবোর্ন ও লিডসে।

সাধারণ ক্রিকেটীয় বিবেচনায় অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের জয়ের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কিন্তু ইংল্যান্ড কি সত্যি বিশ্বাস করে এখান থেকেও জেতা সম্ভব? সংবাদ সম্মেলনে দলের স্পিন বোলিং কোচ জিতান প্যাটেল তেমন দাবিই করেছেন, ‘দেখুন, আমরা শুধু ওটা ভেবেই খেলি। অন্য কোনো ফলের কথা আমরা চিন্তাই করি না। সকালে কিছু উইকেট দরকার। চাপটা অস্ট্রেলিয়াকে ফিরিয়ে দিতে হবে।’

কত রান তাড়া করতে পারবে ইংল্যান্ড—এ প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘জাদুকরি সেই সংখ্যাটা কত, আমরা জানি না!’

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অস্ট্রেলিয়া: ৩৭১ ও ২৭১/৪ (হেড ১৪২*, ক্যারি ৫২*, খাজা ৪০; টাং ২/৫৯, কার্স ১/৪৮, জ্যাকস ১/১০৭)

ইংল্যান্ড: ২৮৬ (স্টোকস ৮৩, আর্চার ৫১, ব্রুক ৪৫; কামিন্স ৩/৬৯, বোল্যান্ড ৩/৪৫, লায়ন ২/৭০)

(তৃতীয় দিন শেষে)

আরও পড়ুন