কনকাশন বিতর্ক আর বোলারদের দাপটের দিন

শেখ জামালকে হারিয়ে লিগে অপরাজেয়–যাত্রা ধরে রেখেছে আবাহনীপ্রথম আলো

লড়াইটা যখন প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দুই দলের, তখন হাড্ডাহাড্ডি লড়াই প্রত্যাশা করাই যায়। কিন্তু আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আবাহনী ও শেখ জামালের ম্যাচে হলো ঠিক উল্টোটা। আবাহনীর সামনে দাঁড়াতেই পারেনি শেখ জামাল।

আগে ব্যাট করা শেখ জামালকে মাত্র ৮৮ রানে অলআউট করে দেয় আবাহনী। সে রান ১০.২ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে টপকে যায় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। আর তাতে ১০ উইকেটের জয়ে অপরাজিত থেকেই রাউন্ড রবিন লিগ শেষ করল নাজমুল হোসেনের দল। দাপুটে এই জয় তুলে নিয়ে শিরোপা ধরে রাখার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল আবাহনী। এখন সুপার লিগের ৫ ম্যাচের মধ্যে ৩টি জিতলেই শিরোপা উৎসব করতে পারবে ধানমন্ডির ক্লাবটি।

ফতুল্লার ম্যাচে গাজী টায়ার্সকে ১৪১ রানে হারিয়েছে প্রাইম ব্যাংক। বড় জয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন মুশফিকুর রহিম। বিকেএসপিতে শাইনপুকুর ও লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের অন্য ম্যাচটি জন্ম দিয়েছে বিতর্কের।

শাইনপুকুরের পেসার রবিউল ইসলামের কনকাশন বদলি হিসেবে আরেক পেসার মুকিদুল ইসলামকে নামানোর সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি রূপগঞ্জের কর্মকর্তারা। এ নিয়ে ম্যাচ রেফারির সঙ্গে কথা–কাটাকাটিতে খেলা বন্ধ থাকে প্রায় ৩০ মিনিট। পরে রূপগঞ্জের মাশরাফি বিন মুর্তজার হস্তক্ষেপে খেলা আবার শুরু হয়। আগে ব্যাট করা শাইনপুকুরের ৯ উইকেটে ২৫৯ রানের জবাবে শেষ পর্যন্ত রূপগঞ্জ করতে পেরেছে ৯ উইকেটে ১৮৯ রান। ৬৭ রানের জয়ের দিন ম্যাচসেরা হয়েছেন শতক করা শাইনপুকুরের ইরফান শুক্কুর।

শেখ জামালের বিপক্ষে ৪ উইকেট নিয়েছেন আবাহনীর শরীফুল ইসলাম
প্রথম আলো

আবাহনী-শেখ জামাল

টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা শেখ জামালকে শুরুতেই চেপে ধরেন আবাহনীর পেসার শরীফুল ইসলাম। দলীয় ১৭ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর বৃষ্টিতে খেলা কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে। এরপর তাসকিন আহমেদ ও তানভীর ইসলামের দুর্দান্ত বোলিংয়ে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে শেখ জামাল। শরীফুল নিয়েছেন সর্বোচ্চ ৪ উইকেট, ২টি করে উইকেট নিয়েছেন তাসকিন ও তানভীর। শেখ জামালের হয়ে সর্বোচ্চ ২৩ রান করেন সৈকত আলী।

ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের পথই বেছে নেন আবাহনীর দুই ওপেনার এনামুল হক ও মোহাম্মদ নাঈম শেখ। অর্ধশত তুলে নিয়ে নাঈম ৪০ বলে ৮টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। ২২ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৩৭ রানে অপরাজিত ছিলেন এনামুল। ম্যাচসেরা হয়েছেন শরীফুল।

শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব: ২২.৪ ওভারে ৮৮ (সৈকত ২৩, ইয়াসির ১৭, সাইফ ১৬; শরীফুল ৪/৩৫, তাসকিন ২/১৬, তানভির ২/৭)। আবাহনী: ১০.২ ওভারে ৯১/০ (এনামুল ৩৭*, নাঈম ৫৩*; শফিকুল ০/১৮)। ফল: আবাহনী ১০ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: শরীফুল ইসলাম।
আরও পড়ুন

প্রাইম ব্যাংক-গাজী টায়ার্স

ফতুল্লায় প্রাইম ব্যাংক ও গাজী টায়ার্সের ম্যাচও ছিল একপেশে। মুশফিকুর রহিমের ৭১ রানের ইনিংসের সৌজন্যে প্রাইম ব্যাংক ৯ উইকেটে ২৬৯ রান করে। জবাবে গাজী টায়ার্সের ব্যাটিংয়ে ধস নামান হাসান মাহমুদ ও শেখ মেহেদী হাসান। দুজনের বোলিংয়ে ১২৮ রানে অলআউট হয় গাজী টায়ার্স। ১৪১ রানের বড় জয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন মুশফিক।

আগে ব্যাট করা প্রাইম ব্যাংকের টপ অর্ডার থেকে বড় রান আসেনি। তামিম ইকবাল ১৫ বলে ২০ রান করে আউট হয়েছেন, পারভেজ হোসেন ৪৬ বলে করেছেন ৩৬ রান। থিতু হয়ে আউট হয়েছেন শাহাদাত হোসেন (২০) এবং জাকির হাসানও (৩৬)। ইনিংস বড় করতে পেরেছেন একমাত্র মুশফিকই। আগের ম্যাচে শতক করা এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের ব্যাট থেকে আসে ৬৯ বলে ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় সাজানো ৭১ রানের ইনিংস।

ফতুল্লায় গাজী টায়ার্সকে হারিয়েছে প্রাইম ব্যাংক
সংগৃহীত

তবে প্রাইম ব্যাংকের রানটাকে আড়াই শর ওপারে নিয়েছেন দুই পেসার আশিকুর জামান (৩৬) ও হাসান মাহমুদ (১৬)। দুজন মিলে শেষ উইকেট জুটিতে ৪৬ রান যোগ করেন। বল হাতেও প্রাইম ব্যাংককে ভালো শুরু এনে দেন আশিকুর ও হাসান। পরে গাজীর ব্যাটিংয়ে ধস নামান শেখ মেহেদী। ৭ ওভারে ২৪ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিলে ৩২.২ ওভারে ১২৮ রানে থামে গাজীর ইনিংস।

প্রাইম ব্যাংক: ৫০ ওভারে ২৬৯/৯ (মুশফিক ৭১, পারভেজ ৩৬, জাকির ৩৬; শামিম ৩/৪১, সানদীদ ২/৪১, সাজ্জাদ ২/৪৯)। গাজী টায়ার্স: ৩২.২ ওভারে ১২৮ (আশরাফুল ৩৪, হাফিজুর ২৯, শামিম ২৮; হাসান ৩/২৯, মেহেদী ৪/২৪)। ফল: প্রাইম ব্যাংক ১৪১ রানে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মুশফিকুর রহিম।
আরও পড়ুন

শাইনপুকুর-লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ

বিকেএসপিতে শতকের দেখা পেয়েছেন শাইনপুকুরের ইরফান শুক্কুর। তাঁর ৮৮ বলে ১০৬ রানের অপরাজিত ইনিংসের সৌজন্যে ৯ উইকেটে ২৫৬ রান করে শাইনপুকুর। জবাবে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ৯ উইকেটে করে ১৮৯ রান। সেটাও নিচের দিকের ব্যাটসম্যান আবদুল হালিমের অপরাজিত ৬৭ বলে ৬০ রানের সৌজন্যে। শাইনপুকুর জিতেছে ৬৭ রানে।

শাইনপুকুরের ইনিংসের সময় কনকাশন বিতর্কের কারণে খেলা বন্ধ ছিল ৩০ মিনিটের মতো। হালিমের করা ৪৩তম ওভারের চতুর্থ বলে দৌড়ে রান নিতে গিয়ে পেসার রবিউল হক পড়ে গিয়ে চোট পান। তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে রূপগঞ্জ ব্যাটিংয়ে নেমে দেখে রবিউলের কনকাশন সাব হিসেবে মাঠে নেমেছেন শাইনপুকুরের পেসার মুকিদুল ইসলাম।

রূপগঞ্জের কর্মকর্তারা এর প্রতিবাদ করেন। ম্যাচ রেফারি সাঈদ আসিফ হোসেনের সঙ্গে এ নিয়ে কথা–কাটাকাটিও হয় তাঁদের। একপর্যায়ে দুই দলের খেলোয়াড়েরাই ড্রেসিংরুমে ফিরে যান। শেষ পর্যন্ত রূপগঞ্জ অধিনায়ক মাশরাফির মধ্যস্থতায় আবার খেলা শুরু হয়। মুকিদুল ৮ ওভার বল করে মাত্র ১১ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছেন। আরেক পেসার নাহিদ রানা ৮ ওভারে ১১ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট।

রূপগঞ্জের দাবি, শাইনপুকুর রবিউলের চোট নিয়ে ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছে। রবিউলের পায়ের চোটকে মাথার চোট হিসেবে দেখিয়ে কনকাশন সাব নিয়মের সুযোগ নিয়েছে। তবে এ নিয়ে তারা কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করবে না বলে জানিয়েছে ক্লাব সূত্র। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্লাবের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘অভিযোগ করে কোনো লাভ নেই। তারা নিয়মের ফাঁক বের করে তাদের সিদ্ধান্তই সঠিক বলবে।’

শাইনপুকুর: ৫০ ওভারে ২৫৬/৯ (ইরফান ১০৬, জিশান ৪২, মার্শাল ৩৫; মুমিনুল ১/১৮, শহিদুল ১/৩৯, মাশরাফি ১/৫২)। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ৫০ ওভারে ১৮৯/৯ (হালিম ৬০*, আমিনুল ৩৪; নাহিদ ৩/১১, রিশাদ ২/৩১, নাঈম ২/৬১)। ফল: শাইনপুকুর ৬৭ রানে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ইরফান শুক্কুর।
আরও পড়ুন