‘গর্ত খোঁড়া’ ম্যাককালাম থাকতে চাইলেও তাঁর বিদায় চান বয়কট

ইংল্যান্ড দলের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামএএফপি

ইংল্যান্ড ক্রিকেটে বাঁকবদল ঘটে ২০২২ সালে। টেস্ট দলের অধিনায়ক হন বেন স্টোকস, প্রধান কোচের দায়িত্ব নেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। দুজন মিলে টেস্টে আক্রমণাত্মক খেলার নতুন ধারা শুরু করেন, নাম তাঁর ‘বাজবল’। শুরুর দিকে এল সফলতাও। এই কোচ ও অধিনায়ক জুটি মিলে প্রথম ১১ টেস্টের ১০টিতেই জিতেছেন। কিন্তু তারপর?

অস্ট্রেলিয়া কিংবা ভারতের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ জিততে পারেনি ইংল্যান্ড। প্রাথমিক সেই সাফল্যের পর এ পর্যন্ত ৩৩ টেস্টের মধ্যে ইংল্যান্ডের জয় ১৫টি, হার ১৬টি। সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে চলতি অ্যাশেজে দুই ম্যাচ হাতে রেখেই প্রথম তিনটি টেস্ট হেরে সিরিজ হারও নিশ্চিত হয়েছে ইংল্যান্ডের। শুধু কি তা–ই, হারের ধরনটা কেমন ছিল, সেটা বোঝা যায় এই পরিসংখ্যানে—মাঠের খেলায় ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার কাছে সিরিজ হেরেছে মাত্র ১১ দিনেই, যেখানে পাঁচ টেস্ট মিলিয়ে মাঠে খেলা হওয়ার কথা ২৫ দিন। তাতে ওলট–পালট হয়েছে রেকর্ড বইও।

ইংল্যান্ড কিংবদন্তি জিওফ্রে বয়কট
এএফপি

পরিস্থিতি যখন এমন, তখন ইংল্যান্ড থেকে স্টোকস–ম্যাককালামদের বিপক্ষে তোপ দাগাই স্বাভাবিক। আর সেই কাজটি বেশ ঝাঁজের সঙ্গেই করেছেন ইংল্যান্ডের সাবেক ওপেনার জিওফ্রে বয়কট। সাবেক এই ওপেনার ইংল্যান্ড ক্রিকেটের খেলার ধারা পাল্টে দেওয়ার প্রাপ্য কৃতিত্ব দিয়েছেন স্টোকস–ম্যাককালামকে। কিন্তু পাশাপাশি এটাও মনে করেন, ইংল্যান্ডের জন্য ম্যাককালামের সঙ্গে সম্পর্কছেদের সময়টাও এখনই।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য টেলিগ্রাফ’–এ কলাম লিখেছেন ষাটের দশকের শুরু থেকে আশির দশকের প্রারম্ভ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের হয়ে ১০৮ টেস্ট ও ৩৬ ওয়ানডে খেলা বয়কট। সেখানে তিনি তিনটি পরামর্শও দেন—আরও বাস্তববাদী হয়ে খেলা, বাজবল–দর্শন ত্যাগ করা এবং নতুন একজন কোচ নিয়োগ করা।

আরও পড়ুন

বয়কট লেখেন, ‘আমাদের ক্রিকেটের জন্য বেন স্টোকস ও ব্রেন্ডন ম্যাককালাম যা করেছেন, সে জন্য তাঁদের অনেক কৃতিত্ব পাওয়া উচিত। কিন্তু এটা নিশ্চিত যে বাজবলের সময়সীমা শেষ হয়েছে।’ বয়কট এরপর যুক্তি দেন, ‘অতিরিক্ত অহংকার সাধারণ বিচারবুদ্ধির জায়গাটা নিয়ে নিয়েছে এবং এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। স্টোকস এবং ম্যাককালাম এমন মানুষ, যাঁরা কোথায় গর্ত খুঁড়ছেন জানেন না। তাঁরা যেটা করছেন, সেটা কাজ না করলে অবশ্যই গর্ত খোঁড়া থামাতে হবে। পরবর্তী ধাপে উঠতে পরিবর্তন অত্যাবশ্যক। কী করা যায়? কোচ পাল্টানো যায়।’

৮৫ বছর বয়সী বয়কট এরপর ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক রব কি–কে পরামর্শ দেন তাঁর কলামে, ‘ভালো খেলার বিষয়ে আমরা এই যুগলকে (ম্যাককালাম এবং স্টোকস) নিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। সেরা দলগুলোর বিপক্ষে প্রত্যাশিত ফল মিলছে না। তাই রব কির জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার সময়টাও এখনই।’

ইংল্যান্ডের অনুশীলনে সতীর্থ হ্যারি ব্রুকের সঙ্গে অধিনায়ক বেন স্টোকস
এএফপি

ম্যাককালামের সঙ্গে ইংল্যান্ডের বর্তমান চুক্তির মেয়াদ ফুরোবে ২০২৭ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর। এর মধ্যে ঘরের মাঠে অ্যাশেজও খেলবে ইংল্যান্ড। ২০২৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ইংল্যান্ড জয়ের (১২) চেয়ে টেস্ট হেরেছে (১৩) বেশি। সব মিলিয়ে স্টোকস–ম্যাককালাম জুটিতে ৪৪ টেস্টে ২৫ জয় ও ১৭ ম্যাচ হেরেছে ইংল্যান্ড। ম্যাককালামের সময়ে ইংল্যান্ড চারবার পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে অংশ নিয়ে একবারও জিততে পারেনি।

আরও পড়ুন

ম্যাককালাম স্বীকার করেছেন ইংল্যান্ড কোচ হিসেবে তাঁর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। তবে এই পদে থাকার ইচ্ছার কথাও জানিয়েছেন ৪৪ বছর বয়সী এই কোচ। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ২০২৬ সালে ইংলিশ সামারে তিনি নিজেকে এই দলের কোচ হিসেবে দেখেন কি না? ম্যাককালামের উত্তর, ‘আমি জানি না। এটা আমার ওপর নির্ভর করছে না। আমি শুধু নিজের কাজটা করে যাব। এখানে (অস্ট্রেলিয়া) যে ভুলগুলো করেছি, সেগুলো থেকে শেখার চেষ্টা করব। কিছু সমন্বয় করব। এ প্রশ্নটি অন্য কারও জন্য, আমার জন্য না।’

নিউজিল্যান্ডের সাবেক এই ওপেনার যে ইংল্যান্ডের কোচের পদটি ছাড়তে চান না, সেটা বোঝা গেল তাঁর পরের কথায়, ‘কাজটা ভালো। মজা লাগে। ছেলেদের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করতে হয়। কিছু অর্জন করতে রোমাঞ্চকর ক্রিকেট খেলতে হয়, আমার জন্য এটা হলো মানুষের ভেতর থেকে সেরাটা বের করে আনা।’

অ্যাডিলেড টেস্টে হারে অ্যাশেজ হারও নিশ্চিত হয় ইংল্যান্ডের
এএফপি

অ্যাডিলেডে গতকাল ৮২ রানের হারে অ্যাশেজে ৩–০–তে পিছিয়ে পড়ে সিরিজ হার নিশ্চিত হয় ইংল্যান্ডের। ম্যাককালাম এই হারের পর বলেন, প্রস্তুতিতে ভুল করেছে ইংল্যান্ড। তবে শুধু বয়কটই নয়, অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি রিকি পন্টিংও ইংল্যান্ডের খেলার ধরনের সমালোচনা করেন। চ্যানেল সেভেনকে পন্টিং বলেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে ইংল্যান্ড দল কত ভালো, তা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। চলতি শতকে তারা তাদের সেরা দল ও স্কোয়াড নিয়ে এসেছে। কিন্তু ১১ দিনের মধ্যে সিরিজের নিষ্পত্তি হয়ে গেল এবং ইংল্যান্ড হতাশ। ভেবেছিলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে, অস্ট্রেলিয়া ৩–২ ব্যবধানে জিতবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত অ্যাশেজ জিততে যে ধরনের ক্রিকেট খেলা দরকার, তারা সেটা খেলতে পারেনি।’

মেলবোর্নে ২৬ ডিসেম্বর শুরু হবে সিরিজের চতুর্থ টেস্ট।