গ্রুপ ‘১’-এ সেমিফাইনালের গতিপথ শেষ পর্যন্ত ঠিক করে দিতে পারে বলে এ ম্যাচের আগে থেকে জয়-পরাজয়ের সঙ্গে আলোচনা ছিল নেট রানরেট নিয়েও। যদিও অস্ট্রেলিয়া বারবারই বলে এসেছে, নেট রানরেটের কথা ভেবে নিজেদের কোনো ফাঁদে ফেলতে চায় না তারা। ব্রিসবেনে অস্ট্রেলিয়ার ১৮০ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে চতুর্থ ওভারে ২৫ রানের মধ্যেই ৫ উইকেট হারাল আইরিশরা, শেষ পর্যন্ত আলোচনা গিয়ে ঠেকল ওই নেট রানরেটেই। আয়ারল্যান্ডকে ১০৫ রানের মধ্যে আটকে রাখতে পারলে নেট রানরেটে ইংল্যান্ডকে টপকে যেতে পারত অস্ট্রেলিয়া। লোরকান টাকারের ৪৮ বলে ৭১ রানের ইনিংসে সেটি হয়নি, তবে ৪২ রানের বড় জয় ঠিকই পেয়েছে স্বাগতিকেরা। ৪ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে উঠে এসেছে অ্যারন ফিঞ্চের দল। তাদের নেট রানরেট এখন -০.৩০৪।
প্রথম ওভারে জশ হ্যাজলউডকে অ্যান্ডি বলবার্নি, পরের ওভারে প্যাট কামিন্সকে মারা পল স্টার্লিংয়ের ছক্কায় শুরুটা আক্রমণাত্মক হয়েছিল আইরিশদের। দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে কামিন্সের ফুল ও স্ট্রেট ডেলিভারিটা ভাঙল বলবার্নির স্টাম্প, আয়ারল্যান্ডের পথ হারানোর শুরুও তাতেই। পাওয়ারপ্লের তৃতীয় ওভারেই দুই ডানহাতির সামনে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে আনার জুয়াটা খেললেন অ্যারন ফিঞ্চ, হয়তো স্কয়ারে বড় বাউন্ডারির কথা ভেবেই। কাজেও লেগে গেল সেটি। স্টার্লিং পার করাতে পারলেন না মিড অফই। এরপর চলল ধ্বংসযজ্ঞ। ম্যাক্সওয়েলকে পুল করতে গিয়ে ওই ওভারেই স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিলেন হ্যারি টেক্টর। পরের ওভারে মিচেল স্টার্কের গোলার সামনে পড়ে স্টাম্প হারালেন কার্টিস ক্যাম্ফার ও জর্জ ডকরেল।
উইকেটের ধসে একটু বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন এরপর টাকার ও গ্যারেথ ডিলানি। ষষ্ঠ উইকেটে ৩৩ বলে ৪৩ রান তোলেন দুজন, পাওয়ারপ্লের শেষ ২ ওভারে ওঠে ২৬ রান। মাঝের ওভারগুলোতে আবার কমে আসে রানের গতি। ডিলানি স্টয়নিসের বলে মিডউইকেটে ম্যাক্সওয়েলের দারুণ ক্যাচে পরিণত হলে ভাঙে টাকারের সঙ্গে জুটি। আইরিশদের লড়াইটা এরপর বলতে গেলে টাকারকে একাই করতে হয়েছে। মার্ক এডেয়ার ও ফিওন হ্যান্ড সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করেন, তবে প্রয়োজনীয় রানরেটে বেশ পিছিয়ে পড়ে আইরিশরা। ১৬ ও ১৭তম ওভারে হ্যাজলউড ও স্টার্কের ওপর চড়াও হন টাকার, ওঠে ৩০ রান। ১৮ বলে তখন প্রয়োজন ছিল ৪৪ রান। টাকার অবশ্য আরেকটি অঘটনের গল্পটা লিখতে পারেননি, অন্যপ্রান্তে ব্যারি ম্যাকার্থি ও জশ লিটল ফেরেন তাঁকে রেখে। ১৮.১ ওভারেই গুটিয়ে যায় আয়ারল্যান্ড।
এর আগে ব্রিসবেনের তুলনামূলক ধীর গতির উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের গতি বদলেছে বারবার। তৃতীয় ওভারেই ডেভিড ওয়ার্নার ফেরার পর পাওয়ারপ্লেতে ৩৮ রানের বেশি তুলতে পারেনি স্বাগতিকেরা। মাঝের ওভারগুলোয় সুযোগ বুঝে রানের গতিটা বাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন ফিঞ্চ, মার্শরা। অবশ্য মিচেল মার্শ ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ফিরে যাওয়াতে ওই সময়ে ঠিক টানা আক্রমণ করতে পারেনি তারা।
সে আক্রমণ শুরু হয় ১৪তম ওভারে। ওই সময়ে ৩ ওভারেই ওঠে ৫৩ রান। সে গতিতে লাগাম টানেন ম্যাকার্থি, তাঁর লো ফুলটসে লং অনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৪৪ বলে ৬৩ রান করা ফিঞ্চ। ফিঞ্চ আজও শুরুতে ধুঁকছিলেন, প্রথম ১২ বলে করেছিলেন ১১ রান। অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক অবশ্য পথ খুঁজে নিয়েছেন ঠিকই। স্টয়নিসের সঙ্গে তাঁর ৩৬ বলে ৭০ রানের জুটি অস্ট্রেলিয়াকে এগিয়ে নিয়েছে বেশ ভালো একটা স্কোরের দিকে।
অবশ্য ডেথ ওভারের আগেই আক্রমণ শুরু করা অস্ট্রেলিয়া ১৮ ও ১৯তম ওভারে তোলে মাত্র ৭ রান। সেটির খানিকটা তারা পুষিয়ে নেয় এডেয়ারের করা শেষ ওভারে ১৭ রান তুলে। এডেয়ার ৪ ওভারে দিয়েছেন ৫৯ রান, অস্ট্রেলিয়া তাঁর ওপর চড়াও হয়েছে ভালোভাবেই। এডেয়ারের বদলে ক্যাম্ফারকে আনতে পারতেন কি না বলবার্নি, সে প্রশ্ন থেকেই গেছে। স্বস্তির জয়ে খচখচানি আছে অস্ট্রেলিয়ারও। ফিঞ্চসহ চোটের সমস্যা আছে টিম ডেভিড, স্টয়নিসকে ঘিরে। হ্যামস্ট্রিংয়ের সমস্যার কারণে ইনিংসের প্রায় অর্ধেক সময় মাঠে ছিলেন না অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক, ফিল্ডিং করতেই নামেননি ডেভিড। আর স্টয়নিস ছিলেন মাঠে ওঠানামার মধ্যে।