দিল্লির বাতাস এখন একটু ‘কম খারাপ’

দিল্লিতে বাতাসের খুব বেশি উন্নতি হয়নিএএফপি

আগের দুই দিনের তুলনায় রোববার দিল্লির বাতাস অনেক ভালো। ভালো মানে কম খারাপ আরকি! একিউআই, মানে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স অনুযায়ী, মানবদেহের জন্য তা একই রকম ক্ষতিকর। টানা চতুর্থ দিন যেটি ৪০০ ছাড়ানো। একিউআই ৩০০-এর বেশি হলেই যেখানে তা লাল বাতি জ্বলে যাওয়ার মতো বিপজ্জনক।

গত বৃহস্পতিবার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পর শহরের স্কুলগুলোতে শুক্র ও শনিবার ছুটি দেওয়া হয়েছিল। এদিন সেই ছুটি বাড়ানো হয়েছে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত। প্রয়োজনে অনলাইন ক্লাস করানোর প্রস্তুতিও নিয়ে রাখতে হয়েছে স্কুলগুলোর।

আগের দুই দিনের তুলনায় ভালো কীভাবে বুঝলাম? পার্থক্যটা যে চোখেই ধরা পড়ছিল। শুক্রবার রাতে দিল্লিতে নেমেই বাতাস ভারী ভারী লেগেছিল। শনিবার তো পুরো শহর ধোঁয়াশায় আচ্ছন্ন। ধোঁয়াশাকে ধোঁয়া আর কুয়াশার সন্ধি বলে ধরে নিতে পারেন। প্রথমে তো কুয়াশা বলেই ভুল করেছিলাম। পরে না জানলাম, এটা আসলে ধোঁয়া। যে ধোঁয়ায় সূর্যকিরণও অদৃশ্য। একটু দূরেই কিছু দেখা যায় না।

যেখানে রোববার সকাল থেকেই ঝকঝকে রোদ। ধোঁয়া বা কুয়াশা যেটাই হোক, তা দৃশ্যমান অনেক দূরে। একিউআইয়ে অবশ্য সেভাবে এর প্রতিফলন নেই। তা আগের মতোই লাল বাতি জ্বালিয়ে যাচ্ছে। শহরে বায়ুদূষণের হটস্পটগুলোতে পানি ছিটানো হচ্ছে। আর কী কী করা যায়, ঠিক করা হচ্ছে সেই রণকৌশলও। তবে আগামী দুই-তিন দিনে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হবে বলে আশা দিতে পারছেন না কেউই।

দিল্লির মানুষেরা মনে হয় এতে অভ্যস্তই হয়ে গেছেন। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চলছে। হোটেল থেকে স্টেডিয়ামে যাওয়া-আসার পথে কারও কারও মুখে মাস্ক দেখলাম বটে, তবে বলতে গেলে তাঁদের সবাই বিদেশি। স্টেডিয়ামেও যেসব সাংবাদিকের মুখে মাস্ক, তাঁদের সবাই বাংলাদেশের। গলাব্যথা, কাশির মতো সমস্যাও এরই মধ্যে হয়ে গেছে কারও কারও।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কারও কোনো সমস্যা অবশ্য হয়নি এখনো। দিল্লিতে আসার পর গতকাল প্রথম অনুশীলনে লিটন আর মোস্তাফিজ আসেননি। বাকি সবাই পুরোদমেই অনুশীলন করেছেন, কেউই তেমন কোনো সমস্যা বোধ করেননি। তবে আগেই সবাইকে বলে দেওয়া হয়েছিল, বাইরে যতটা সম্ভব কম থাকতে। ব্যাটিং-বোলিং করেই তাই সবাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ড্রেসিংরুমের আশ্রয়ে ফিরে এসেছেন।

ম্যাচের আগের দিনের অনুশীলন এমনিতেই একটু ঢিলেঢালা থাকে। এদিন আবার মাত্র আটজন ক্রিকেটারই এসেছেন অনুশীলনে।  

দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে অনুশীলন করছে শ্রীলঙ্কা দল
এএফপি

দল বেঁধে আসেননি পাঁচ পেস বোলার, মেহেদী হাসান মিরাজ ও তানজিদ হাসানও। সংবাদ সম্মেলনে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে জানালেন, যাঁদের একটু হাঁপানির সমস্যা আছে, তাঁরাই এদিন অনুশীলনে আসেননি। পাঁচ পেসার না আসায় অবশ্য বোঝা গেল, শুধু শ্বাসকষ্টের সমস্যাই হয়তো বিবেচনায় ছিল না, বাড়তি সাবধানতাও ভূমিকা রেখেছে এতে। এই বাতাসে পেসারদেরই তো বেশি সমস্যা হওয়ার কথা।

দিল্লির বাতাসের এমন ‘বিপজ্জনক’ রূপ আজকের নয়। সেই ১৯৯৬ সালে এখানে টেস্ট ম্যাচে পরাজয়ের পর অস্ট্রেলিয়া দল বায়ুদূষণকে দায়ী করেছিল। তখন তো আর বায়ুদূষণের ভয়াবহতা নিয়ে সেভাবে আলোচনা হতো না। অনেকের কাছেই তা ছিল নতুন ব্যাপার। যে কারণে এটাকে ‘পরাজয়ের অজুহাত’ বলেই ধরে নিয়েছিলেন অনেকে। ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়া তো এমনই, হারলে পরেই কোনো কোনো অজুহাত বের করে ফেলে।

ব্যাটিং অনুশীলনের প্রস্তুতিতে নাজমুল হোসেন
আইসিসি

আসলে যে তা অজুহাত ছিল না, পরে অবশ্য তা প্রমাণিত। বায়ুদূষণের দিল্লিতে ক্রিকেট খেলা কতটা কঠিন, এর উদাহরণ হিসেবে বারবার আসছে ২০১৭ সালে ভারত-শ্রীলঙ্কা টেস্ট ম্যাচের কথা। সেই টেস্টে শ্রীলঙ্কার বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। দেখা গিয়েছিল, মাঠে মাস্ক পরে খেলতে নামার অভাবনীয় দৃশ্যও। সেই শ্রীলঙ্কা দলের কোচ নিক পোথাস এখন সহকারী কোচ হিসেবে বাংলাদেশ দলে। তাঁর সেই অভিজ্ঞতা কিছুটা হলেও কাজে লাগছে। সেবার কীভাবে কী হয়েছিল, কী করলে সমস্যাটা খুব বেশি আক্রান্ত করবে না—এসব নিয়ে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট বিস্তারিত আলোচনা করেছে। কারণ পরিস্থিতি যা-ই হোক, খেলতে তো হবেই।

আরও পড়ুন

গত শনিবার আইসিসি দিল্লির বাতাসের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানিয়েছিল। তবে একটা সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখান থেকে ম্যাচ সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। এখন তো আর তা করার সময়ই নেই। ম্যাচের দিন যদি পরিস্থিতি বেশি খারাপ হয়ে যায়, ম্যাচ রেফারি নিয়ম অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবেন। ঝড়-বৃষ্টির মতো আবহাওয়ার অন্য সব বৈরী আচরণের মুখে ক্রিকেট ম্যাচে যা হয়, এখানেও তা-ই হবে। তার মানে কি ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করবেন ম্যাচ রেফারি, দুই দলই ১ পয়েন্ট করে পাবে?

সূত্র জানাচ্ছে, সেই সম্ভাবনা খুবই কম। পরিস্থিতি যেমনই হোক, খেলা শেষ করার চেষ্টা করা হবে। তা করতে পারলে আইসিসি আর বিসিসিআইও হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। দিল্লিতে এটাই তো এই বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ।