সঞ্জু স্যামসনের বাদ পড়া নিয়ে ক্ষুব্ধ বাবার অভিযোগ
নিজের সর্বশেষ ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করেছেন, সর্বশেষ টি-টোয়েন্টিতেও। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন দারুণ ছন্দে থাকা সঞ্জু স্যামসনের কিনা জায়গা হয়নি ভারতের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে!
কেউ বলছেন প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীর দলে রাখতে চেয়েছিলেন স্যামসনকে, কিন্তু নির্বাচক অজিত আগারকার ও অধিনায়ক রোহিত শর্মা চাননি। আবার কেউ বলছেন, স্যামসন বিজয় হাজারে ট্রফি না খেলাতেই বাদ পড়েছেন দল থেকে।
এসব প্রশ্নের যখন উত্তর খুঁজতে শুরু করেছেন ভারতীয় অনেক ক্রিকেটপ্রেমী, সে সময়ই এ নিয়ে মুখ খুলেছেন স্যামসনের বাবা বিশ্বনাথ স্যামসন। ছেলেকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে না রাখায় ক্ষুব্ধ বাবা কাঠগড়ায় তুলেছেন কেরালা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনকে (কেসিএ)। বিশ্বনাথের দাবি, তাঁর ছেলে ক্রিকেট রাজনীতির শিকার, কেসিএর কিছু লোক চায় না তাঁর ছেলে ভারতের হয়ে খেলুক।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ভারত দলে উইকেটরক্ষক রাখা হয়েছে দুজন—ঋষভ পন্ত ও লোকেশ রাহুল। তবে সীমিত ওভারের সর্বশেষ যে সিরিজটা ভারত খেলেছে, গত বছরের ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৪ ম্যাচের সেই টি-টোয়েন্টি সিরিজে দুটি সেঞ্চুরি করেছেন স্যামসন। যে ফরম্যাটে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি হবে, সেই ৫০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে স্যামসনের গড় ৫৬.৬৬। অন্তত ১০ ইনিংস খেলা ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে স্যামসনের চেয়ে বেশি ওয়ানডে গড় শুধু বিরাট কোহলি (৫৮.১৮) ও শুবমান গিলের (৫৮.২০)।
খুব স্বাভাবিকভাবেই স্যামসনের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে জায়গা না হওয়া নিয়ে আলোচনা হচ্ছে খুব। স্যামসনকে না রাখার সবচেয়ে বড় যে কারণের কথা ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে এসেছে, সেটা হচ্ছে তিনি সম্প্রতি বিজয় হাজারে ট্রফির (ভারতের ঘরোয়া ৫০ ওভারের টুর্নামেন্ট) কেরালা দলেও জায়গা পাননি। অথচ বিজয় হাজারে ট্রফির আগে হওয়া সৈয়দ মুস্তাক আলী ট্রফিতে (ভারতের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা) কেরালার অধিনায়ক ছিলেন স্যামসন।
বিজয় হাজারে ট্রফির আগে ৩০ জনকে নিয়ে একটি ক্যাম্প করেছিল স্যামসনের রাজ্য দল কেরালা। সেই ক্যাম্পে যোগ দেননি এই উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান। সংবাদমাধ্যমে কেরালা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (কেসিএ) সভাপতি জয়েশ জর্জ বলেছিলেন, মাত্র এক লাইনের মেসেজ পাঠিয়ে দায়সারাভাবে স্যামসন জানিয়েছিলেন, ক্যাম্পে তিনি থাকতে পারবেন না।
কেরালার দৈনিক মাতৃভূমিকে স্যামসনের বাবা বিশ্বনাথ বলেছেন, ‘কেসিএর কিছু লোক আমার ছেলেকে পছন্দ করে না। এর আগে কখনো সংস্থার বিরুদ্ধে কথা বলিনি। কিন্তু এবার যেটা হয়েছে, সেটা বাড়াবাড়ি। সঞ্জু একা ওই ক্যাম্পে যায়নি, এমনটা নয়, অনেকেই যায়নি। তাদের তো খেলতে দেওয়া হয়েছে।’
স্যামসনের বাবার ক্ষোভ, স্থানীয় ক্রিকেট সংস্থার কিছু লোক তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে লেগেছেন, ‘জয়েশ জর্জ বা বিনোদ এস কুমার (কেসিএ সচিব) নন, রাজ্য ক্রিকেট সংস্থায় মাঝখানে কিছু লোক আছেন, যাঁরা তুচ্ছ অনেক বিষয়কে বিষাক্ত করে তোলেন। আমরা ক্রীড়াবিদ, খেলা নিয়ে বাণিজ্য করতে চাই না। আমি চাই, আমার ছেলেকে খেলার ন্যায্য সুযোগ দেওয়া হোক। যদি কোনো ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকে, তাহলে আলোচনা করে সেটা ঠিক করতে তৈরি আছি।’
শুধু স্যামসনের বাবাই নন, এর আগে তাঁর বাদ পড়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভারতীয় রাজনীতিবিদ ও কংগ্রেস থেকে নির্বাচিত কেরালার তিরুবনন্তপুরমের সংসদ সদস্য শশী থারুর।
নিজের এক্স হ্যান্ডলে কংগ্রেসের এই প্রভাবশালী নেতা লিখেছেন, ‘সঞ্জু স্যামসন ও কেরালা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের লড়াই চলছেই। সৈয়দ মুস্তাক আলী ও বিজয় হাজারে ট্রফির মাঝামাঝি সময়ে ট্রেনিং ক্যাম্পে যোগ দিতে পারবে না বলে দুঃখ প্রকাশ করে মেইল পাঠিয়েছিল সঞ্জু। এরপরও বিজয় হাজারে ট্রফির জন্য তাকে দলে নেওয়া হয়নি। এবার জাতীয় দল থেকেই বাদ দেওয়া হলো। একজন ব্যাটসম্যান, যার বিজয় হাজারেতে সর্বোচ্চ ২১২*। ওয়ানডেতে গড় ৫৬.৬৬। দক্ষিণ আফ্রিকায় সর্বশেষ ম্যাচেও সেঞ্চুরি করেছে। শুধু ক্রিকেট প্রশাসন ও প্রশাসকদের অহমের জন্য ওর ক্যারিয়ার নষ্ট হতে চলেছে। স্যামসনকে বাদ দেওয়ার পর কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্তও পৌঁছাতে পারেনি কেরালা।’
ভারতের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে সুযোগ না পেলেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আগামীকাল শুরু হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি সিরিজের স্কোয়াডে আছেন স্যামসন। এখন দেখার অপেক্ষা, পাঁচ ম্যাচের এই সিরিজে রান করে তিনি নির্বাচকদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করতে পারেন কি না!