পেসারদের লড়াই বাড়িয়ে দিলেন খালেদ

অভিষেকে ৩ উইকেট পেয়েছেন খালেদছবি: শামসুল হক

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটটা খালেদ আহমেদের জন্য নতুন কিছু নয়। টেস্ট খেলছেন সেই ২০১৮ সাল থেকে। শুরুতে চোটের কারণে অনিয়মিত হলেও গত কয়েক বছরে তিনি টেস্ট দলের নিয়মিত মুখ, এরই মধ্যে খেলেছেন ১২টি টেস্ট। তাই মনে হতেই পারে, ডানহাতি এই পেসারের জন্য অন্য সংস্করণে অভিষেক নতুন আর কী রোমাঞ্চ নিয়ে আসবে!

মিরপুরে গতকাল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে সেই খালেদেরই ওয়ানডে অভিষেক হলো। এত দিন ধরে টেস্ট খেলার পরেও ওয়ানডে অভিষেকের ম্যাচে তিনি কী আবেগাপ্লুত! দর্শকে ভরা মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে খালেদের রোদচশমায় ঢাকা দুই চোখে ছিল আনন্দজল।

টসে জিতে আগে ব্যাটিং নেওয়া নিউজিল্যান্ডের ইনিংস তখন মাত্র শেষ হয়েছে। বিরতির সময় সম্প্রচারকারী টেলিভিশনের সঙ্গে কথা বলার সময়ও খালেদের সেই রোমাঞ্চটা বোঝা গেল, ‘মাঠে আসার পর জানতে পেরেছি যে আজ আমি ম্যাচটা খেলব। দেশের জন্য খেলা স্বাভাবিকভাবেই অনেক গর্বের ব্যাপার। আমার মাঠের মধ্যে অনেক কান্না পাচ্ছিল, আমি দেশের হয়ে খেলব, এটা ভেবে। আলহামদুলিল্লাহ, খুব ভালো লাগছে।’

মোস্তাফিজের কাছ থেকে অভিষেক ক্যাপ পেয়েছেন খালেদ
ছবি: শামসুল হক

মিনিট পাঁচেক আগেই ইশ সোধিকে আউট করে নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের ইতি টেনেছেন খালেদই। এর আগে আরও দুবার নিউজিল্যান্ড ইনিংসের গতিপথ বদলে দিয়েছেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজের প্রথম ওভারেই চ্যাড বসকে শর্ট বলের ফাঁদে ফেলেন। দ্বিতীয় স্পেলের শুরুটাও করেন থিতু হয়ে যাওয়া হেনরি নিকলসকে আউট করে।

৯.২ ওভারে ৬০ রান দিয়ে খালেদ নিয়েছেন ৩ উইকেট। প্রত্যাশার চেয়ে একটু বেশি রান দিলেও অভিষেকে দলের চাওয়া পূরণ করতে পেরেছেন, এটা বোধ হয় বলাই যায়। মাঝের ওভারের আক্রমণাত্মক বোলিং করে যাবেন, এটাই ছিল তাঁর কাছে দলের মূল চাওয়া। অনেকটা ইবাদত হোসেনের দায়িত্বটাই যেন কাল খালেদকে পালন করতে হলো। গত এক বছরে ইবাদত ছিলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ওয়ানডে বোলার।

১২ ম্যাচ খেলে ১১ ইনিংসে বল করে ইবাদতের শিকার ২২ উইকেট। বেশির ভাগ উইকেটই এসেছে মূলত মাঝের ওভারে আক্রমণাত্মক বোলিংয়ে। লেগের দিকে বাউন্ডারি সীমানায় দুজন ফিল্ডার রেখে ব্যাটসম্যানের শরীর তাক করা বোলিংয়ে এসেছে ইবাদতের সাফল্য।

কাল খালেদকেও খেলানো হয় একই ভূমিকায়। ৩১ বছর বয়সী এই পেসার নিজের পারফরম্যান্স কীভাবে মূল্যায়ন করছেন? তাঁর কথা, ‘প্রথমে কিছুটা নার্ভাস ছিলাম। কিন্তু দলের সবাই আমাকে অনেক সাপোর্ট করেছে। উইকেট নিলে তো অনেক ভালো লাগে। তবে আমি চেয়েছিলাম ভালো জায়গায় বল করতে। আলহামদুলিল্লাহ, সামনে যদি আরও খেলি, ভালো জায়গায় আরও ধারাবাহিক বোলিং করব।’

টিম ম্যানেজম্যান্টের পছন্দের তালিকায় পেস বোলারদের মধ্যে আসলে ৬ নম্বরে ছিলেন খালেদ। মূল পাঁচ পেসার তাসকিন আহমেদ, শরীফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ, মোস্তাফিজুর রহমান ও ইবাদত। এরপর বিবেচনায় ছিলেন খালেদ। চলমান নিউজিল্যান্ড সিরিজে তাঁকে খেলিয়ে দেখা হবে, এই পরিকল্পনাটাও আগেরই। তবে ইবাদত চোটে পড়ায় সরাসরি বিকল্প হিসেবে আলোচনায় চলে আসে খালেদের নাম।

তানজিম নাকি খালেদ—শেষ পর্যন্ত হবেন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পঞ্চম পেসার
ছবি: শামসুল হক

এরই মধ্যে ইমার্জিং এশিয়া কাপে ভালো করা তানজিম হাসানও চলে আসেন বিবেচনায়। শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং দক্ষতায় এগিয়ে থাকায় ইবাদতের বদলি হিসেবে এশিয়া কাপে সুযোগ হয় তানজিমের। ভারতের বিপক্ষে ২টি উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতে ১৪ রানও করেন তানজিম।

এরপর মনে হচ্ছিল, বিশ্বকাপের জন্য পঞ্চম পেসার হিসেবে তানজিমই এগিয়ে থাকবেন। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে তানজিম চোটে পড়ায় দুয়ার খুলে যায় খালেদের। ৩ উইকেট নিয়ে সেই সুযোগটা তিনিও কাজে লাগিয়েছেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই সিরিজের শেষ ম্যাচেও খালেদের ওপর আরও বেশি চোখ থাকবে। সেটাতেও ভালো করলে হয়তো বিশ্বকাপ দলে থাকার দাবিটা জোরালো হবে খালেদের।

তানজিম নাকি খালেদ—শেষ পর্যন্ত হবেন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পঞ্চম পেসার, এখন সেটাই দেখার অপেক্ষা।