দুই হাত নেই, আমিরের ব্যাটিং দেখে তবু মুগ্ধ টেন্ডুলকার

হাত ছাড়া ব্যাটিং করার উপায় খুঁজে পেয়েছেন আমির হোসেইনসংগৃহীত

‘অসম্ভবকে সম্ভব করেছে আমির। এটা (ভিডিও) দেখে আমি খুব আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছি। এটা খেলার প্রতি তার ভালোবাসা এবং সে জন্য তার আত্মত্যাগেরই প্রকাশ। আশা করি, একদিন তার সঙ্গে দেখা করে তার নাম লেখা একটি জার্সি নেওয়ার সুযোগ হবে।

খেলাটিকে ভালোবাসা লাখ লাখ মানুষকে প্রেরণা দেওয়ার এই কাজটা দারুণ’—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’–এ শচীন টেন্ডুলকারের পোস্ট। পোস্টটি তিনি দিয়েছেন ভারতীয় বার্তা সংস্থা ‘এএনআই’–এর একটি ভিডিও শেয়ার করে। ভিডিওতে দেখা যায়, টেন্ডুলকারের নামাঙ্কিত ভারতীয় দলের জার্সি পরা একজন কংক্রিটের নেটে ব্যাটিং অনুশীলন করছেন। লোকটির দুই হাতের কোনোটিই নেই!

আরও পড়ুন

ভিডিওটি না দেখে থাকলে প্রশ্ন করতেই পারেন—হাত নেই, তাহলে ব্যাট করছেন কীভাবে? ৩৪ বছর বয়সী আমির হোসেইন লোনের ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসাটা লুকিয়ে এই প্রশ্নের উত্তরেই। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ওয়াঘামা গ্রামে জন্ম আমিরের।

এখন তিনি জম্মু ও কাশ্মীর প্যারা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। বাবার কারখানায় ৮ বছর বয়সে এক দুর্ঘটনায় দুই হাত হারিয়েছিলেন। কিন্তু ইচ্ছে থাকলে কী না হয়! ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা থেকেই নিজের শারীরিক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও খেলার উপায় বের করে নিয়েছেন আমির। ২০১৩ সালে পেশাদার ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করা আমির বল করেন পা দিয়ে, ব্যাটিং করেন কাঁধ ও ঘাড় দিয়ে ব্যাট ধরে!

বাকি গল্প বলার আগে তাঁর ব্যাট করার ধরনটা একটু বুঝিয়ে বলা যাক। কাঁধ ও ঘাড় দিয়ে ব্যাটের হাতল চাপ দিয়ে ধরে স্ট্যান্স নেন আমির। চোস্ত ব্যাটসম্যানের মতোই সামনে পা নিয়ে ব্যাট করেন। তখন আমিরকে দেখতে পরিপূর্ণ ব্যাটসম্যানের চেয়ে কম কিছু মনে হয় না! বিশেষ করে তাঁর সামনের পায়ের ডিফেন্স। ব্যাটের হাতলটা কাঁধ ও ঘাড়ের চাপে ধরা থাকে বলে স্বাভাবিক ব্যাটসম্যানদের মতো সব শট যে খেলতে পারেন না, সেটা না বললেও চলে। ভাগ্যই তাঁকে সেই সুযোগ দেয়নি।

আরও পড়ুন

তবে এই দুর্ভাগ্যের জন্য আমির জীবনের ব্যাপ্তি ছেঁটে ফেলেননি। ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’ জানিয়েছে, আমিরের ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা এবং এই খেলায় তাঁর প্রতিভা প্রথম আবিষ্কার করেন এক শিক্ষক। এরপর সেই শিক্ষক তাঁকে প্যারা ক্রিকেটের (শারীরিক প্রতিবন্ধী) সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। নিজের জীবন নিয়ে এএনআইকে আমির বলেছেন, ‘দুর্ঘটনার পর আমি আশা হারাইনি। কঠোর পরিশ্রম করেছি। আমি নিজেই সব করতে পারি। কারও ওপর নির্ভরশীল নই। দুর্ঘটনার পর কেউ আমাকে সাহায্য করেনি, এমনকি সরকারের কাছ থেকেও সাহায্য পাইনি। তবে পরিবার সব সময়ই আমার সঙ্গে ছিল।’

আমিরকে কাঁধ ও ঘাড়ের সাহায্যে তাঁকে ব্যাটিং করতে দেখে অবাক হন অনেকে। এ নিয়ে আমির বলেছেন, ‘২০১৩ সালে দিল্লিতে আমি জাতীয় পর্যায়ে খেলেছি। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলি। এরপর আমি নেপাল, শারজা ও দুবাইয়ে খেলেছি। পা (বোলিং) এবং কাঁধ ও ঘাড়ের ব্যবহারে (ব্যাটিং) খেলতে দেখে সবাই খুব অবাক হতো। ক্রিকেট খেলার এই শক্তি দেওয়ার জন্য আমি সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই।’

আমির জানিয়েছেন, তিনি যেখানেই খেলতে যান, সবার প্রশংসা পান, ‘আমি সব জায়গাতেই আমার খেলার প্রশংসা শুনেছি। এটা সৃষ্টিকর্তার অবদান। তিনি আমাকে কঠোর পরিশ্রমের ফল দিয়েছেন। পা দিয়ে বল করা খুবই কঠিন, কিন্তু আমি সে দক্ষতা অর্জন করেছি। আমি নিজেই সব কাজ করি এবং সৃষ্টিকর্তা ছাড়া অন্য কারও ওপর নির্ভরশীল নই।’

আমির জানিয়েছেন, ভারতের প্রযোজনা সংস্থা পিকল এন্টারটেইনমেন্ট তাঁর জীবন নিয়ে একটি সিনেমা বানাচ্ছে, ‘পিকল এন্টারটেইনমেন্ট আমার জন্য সিনেমা বানাচ্ছে। দিন–তারিখ শিগগিরই জানানো হবে। একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম, সেখানে ভিকি কুশলও (অভিনেতা) ছিলেন এবং তারা আমার অভিযাত্রা শুনে অবাক হয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, আমার জন্য সিনেমা বানাবেন।’ নিজের এবং দলের সবার পছন্দের ক্রিকেটারের নামও জানিয়েছেন আমির, ‘শচীন টেন্ডুলকার ও বিরাট কোহলি আমাদের পছন্দের ক্রিকেটার। সৃষ্টিকর্তা চাইলে দ্রুতই তাদের সঙ্গে দেখা হবে।’

আরও পড়ুন