হেডিংলিতে এজবাস্টন ফিরিয়ে আবার ‘বাজবলের’ জয়গান

ভারতকে হারানোর পর ইংল্যান্ডের জো রুট ও জেমি স্মিথের উচ্ছ্বাসছবি: রয়টার্স

আম্পায়ার ক্রিস গ্যাফানি সংকেত দিলেন, ম্যাচের আর এক ঘণ্টা বাকি। মানে, হেডিংলি টেস্টের শেষ এক ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৫ ওভার খেলা হবে। গ্যাফানির সেই সংকেত দেখে হাসছিলেন শুবমান গিল। নিশ্চয় বেদনার হাসি।

ভারতের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে এ ম্যাচ দিয়েই অভিষেক হওয়া গিল ততক্ষণে বুঝে গেছেন, এক ঘণ্টা আসলে অনেক দেরি; ইংল্যান্ড জিততে চলেছে কয়েক মিনিটের মধ্যেই। গিল ও তাঁর দলের শারীরিক ভাষাই তখন বলে দিচ্ছিল, ভারত হাল ছেড়ে দিয়েছে। ব্যাপারটা বোঝা গেছে আরও আগেই। তা না হলে বোলিং আক্রমণের প্রধান অস্ত্র যশপ্রীত বুমরাকে কেন সর্বশেষ ১৭ ওভারেও বোলিংয়ে আনা হলো না?

হেডিংলিতে অসাধারণ এক টেস্ট ম্যাচ শেষে দুই দলের খেলোয়াড়দের করমর্দন
ছবি: এএফপি

প্রতিপক্ষ যখন হাল ছেড়েই দিয়েছে, তখন জেমি স্মিথেরও আর তর সইল না। প্রয়োজন ছিল ১৬ রান। জাদেজার ওভারে একটি ডাবল, একটি চার আর দুটি ছক্কায় ইংল্যান্ডের উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান নিলেন ১৮ রান।

গ্যালারিতে তখন উচ্ছ্বাস–হর্ষধ্বনি। হেডিংলিতে তখন যে তিন বছর আগের এজবাস্টন ফিরে এসেছে! ভারতের দেওয়া ৩৭১ রানের লক্ষ্য শেষ দিনে ৫ উইকেট আর ১৪ ওভার বাকি রেখে টপকে গেছে ইংলিশরা, রানরেট সাড়ে চারের ওপর! নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এটি তাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়।

সর্বোচ্চ ৩৭৮ রান তাড়া করে জয়টা ভারতের বিপক্ষেই, ২০২২ সালের জুলাইয়ে ‘বাজবল’ জমানার শুরুর দিকে। তিন বছরের ব্যবধানে নিজেদের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে আরেকটি টেস্ট খেলতে নেমে আবারও সেই ‘বাজবলের’ জয়গান।

ভারতের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকেই হারতে হলো শুবমান গিলকে
ছবি: এএফপি

পরিস্থিতি যেমনই হোক, জয়ের জন্য খেলতে হবে—‘বাজবলের’ মূল প্রতিপাদ্য এটিই। ইংলিশ পেসার জশ টাং সেই ইঙ্গিতই দিয়েছিলেন। কাল ১০ উইকেট হাতে নিয়ে ২১ রান তুলে দুই ইংলিশ ওপেনার বেন ডাকেট ও জ্যাক ক্রলি চতুর্থ দিন শেষ করেন। আজ শেষ দিনে স্বাগতিকদের দরকার ছিল আরও ৩৫০ রান। পঞ্চম দিনে এত রান তাড়া করে জয়ের ঝুঁকি নেওয়ার মতো সাহস এই আধুনিক যুগেও সাধারণত কেউ দেখায় না। কিন্তু দলটা ম্যাককালাম ও স্টোকস যুগের ইংল্যান্ড বলেই বুমরার মতো ‘বোলিং মায়েস্ত্রো’ থাকার পরও ভারতকে এগিয়ে রাখা যাচ্ছিল না।

বুমরা প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে ভারতকে লিড এনে দিলেও দ্বিতীয় ইনিংসে থাকলেন উইকেটশূন্য। ক্রলি ও ডাকেট ১৮৮ রানের যে ভিত গড়ে দিলেন, সেটার ওপর ভর করেই ম্যাচ শেষ করে এলেন অভিজ্ঞ জো রুট আর সম্ভাবনাময় জেমি স্মিথ।

হেডিংলি টেস্টের শেষ ইনিংসে উইকেট পাননি যশপ্রীত বুমরা
ছবি: রয়টার্স

৩৫০ রানের বেশি লক্ষ্য দিয়ে ভারত এ নিয়ে দুবার টেস্ট হারল। দুবারই প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। তবে অভাগাদের একটা রেকর্ড আজ ভারত নিজেদের করে নিয়েছে। টেস্টের ১৪৮ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো দল ম্যাচে পাঁচটি সেঞ্চুরি করার পরও হেরে গেল। ঋষভ পন্ত দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেন, তিন অঙ্কের দেখা পান যশস্বী জয়সোয়াল, গিল ও লোকেশ রাহুলও।

ডাকেটের ১৪৯ রানের ইনিংসটাই ব্যবধান গড়ে দিয়েছে। ভারতের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে তাঁর ইনিংসটাই ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। পন্তের জোড়া সেঞ্চুরি ম্লান করে দেওয়া ডাকেটের হাতেই উঠেছে ম্যাচসেরার পুরস্কার।

ম্যাচসেরা হয়েছেন বেন ডাকেট
ছবি: রয়টার্স

অ্যান্ডারসন–টেন্ডুলকার ট্রফি নামে যাত্রা শুরু করা পাঁচ ম্যাচের এই সিরিজে ইংল্যান্ড এখন ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে। এজবাস্টনে দ্বিতীয় টেস্ট শুরু ২ জুলাই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ভারত: ৪৭১ ও ৩৬৪।

ইংল্যান্ড: ৪৬৫ ও ৮২ ওভারে ৩৭৩/৫ (ডাকেট ১৪৯, ক্রলি ৬৫, রুট ৫৩*, স্মিথ ৪৪*, স্টোকস ৩৩; শার্দূল ২/৫১, প্রসিধ ২/৯২, জাদেজা ১/১০৪)।

ফল: ইংল্যান্ড ৫ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: বেন ডাকেট।

সিরিজ: ৫ ম্যাচের সিরিজে ইংল্যান্ড ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে।