নোয়াখালী এক্সপ্রেস: ২০ ওভারে ১৪৩/৭। সিলেট টাইটানস: ২০ ওভারে ১৪৪/৯। ফল: সিলেট ১ উইকেটে জয়ী।
১৮তম ওভারে মেহেদী হাসান রানার হ্যাটট্রিকে নীরব হয়ে যাওয়া সিলেটের গ্যালারি শেষ ওভারে হয়ে উঠল উৎসবমুখর। শেষ ওভারে ১৩ রানের সমীকরণ, যা শেষ বলে নেমে এসেছিল ১ বলে ২ রানে— সেটা যে মিলে গেছে দলটার!
কৃতিত্বটা ইথান ব্রুকসেরই বেশি। সাব্বির হোসেনকে ছক্কা ও চার মেরে কাজটাকে সহজ করে দিয়েছিলেন তো তিনিই। কিন্তু পঞ্চম বলে তিনি রানআউট হওয়ার পর আবার নাটকীয়তা। ১ বলে ২ রানের সমীকরণ মিলেছে সাব্বিরের দেওয়া ওয়াইড আর শেষ বলে লেগ বাই থেকে। আর শেষ বলে অতিরিক্ত খাত থেকে পাওয়া ২ রানেই নোয়াখালী এক্সপ্রেসের ১৪৩ রান ১ উইকেট হাতে রেখে টপকেছে সিলেট টাইটানস।
এর আগে অবশ্য প্রায় স্তব্ধই হয়ে এসেছিলে সিলেটের গ্যালারি। ১৪৪ রান তাড়া করতে নেমে সিলেট ৩ উইকেটেই তুলে ফেলেছিল ১১৭ রানে। তখনো বাকি ২৭ বল, রানও দরকার ২৭। কিন্তু হুট করেই যেন ধস নামে সিলেটের ব্যাটিংয়ে— আর ৮ রান যোগ করতেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা।
এর মধ্যে নোয়াখালীর বাঁহাতি পেসার মেহেদী হাসান রানা ১৮তম ওভারের শেষ তিন বলে মেহেদী হাসান মিরাজ, নাসুম আহমেদ আর খালেদ আহমেদকে আউট করে হ্যাটট্রিকও পূর্ণ করেন। টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশি বোলারদের নবম এই হ্যাটট্রিকে হুট করেই হারের শঙ্কায় পড়ে যায় সিলেট।
শেষ ওভারে তাদের সমীকরণ দাঁড়ায় ৬ বলে ১৩ রানে। ৭ বলে ৬ রান করা ইথান ব্রুকস আর ২ বলে ১ রান করা মোহাম্মদ আমির তখন উইকেটে। জয়ের পাল্লাটা ভারী ছিল নোয়াখালীর দিকেই। সাব্বির হোসেন প্রথম দুই বল ডট দেওয়ার পর তা বেড়ে যায় আরও। কিন্তু এর মধ্যেই তৃতীয় বলটা নো করেন সাব্বির হোসেন। ফ্রি হিটে ছক্কা মেরে দেন ইথান ব্রুকস, পরেরটিতে চার!
২ উইকেট হাতে নিয়ে ২ বলে তখন ২ রান দরকার সিলেটের। কিন্তু এবার ব্রুকস হয়ে যান রান আউট। রানের জন্য প্রায় অর্ধেক মাঠে পৌঁছে গেলে নন স্ট্রাইক থেকে তাঁকে ফিরিয়ে দেন আমির। ফেরার পথে পা পিছলে পড়ে গিয়ে দেখেন জাকের আলীর সরাসরি থ্রোয়ে স্টাম্প ভেঙে গেছে। ১৩ বলে ১৬ রান করে ফেরেন ইথান।
এবার ১ বলেই দরকার ২ রান। কিন্তু সাব্বির ব্যাটসম্যান সালমান ইরশাদের লেগ সাইডে ওয়াইড দিলে সিলেটের সমীকরণ নেমে আসে ১ বলে ১ রান।
শেষ বল সালমান ব্যাটে নিতে পারেননি, তবে পায়ে লাগতেই দৌড়ে রান নিয়ে নেন। নোয়াখালী এলবিডব্লুর জন্য রিভিউ চাইলেও কাজ হয়নি। সিলেটের গ্যালারি মেতে ওঠে শেষ বলে ১ উইকেটের জয়ে।
এর আগে রান তাড়ার শুরুতে ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল সিলেট। এরপর অধিনায়ক মিরাজের সঙ্গে ৬৫ বলে ৮৩ রানের জুটিতে দলের জয়ের পথটা সুগম করে দেন পারভেজ হোসেন। ৪১ বলে ৬০ রান করেন প্রথম ম্যাচেও ফিফটি করা এই বাঁহাতি।
সিলেটের জন্য কাজটা অবশ্য সহজ করে দিয়েছিলেন বোলাররাই—খালেদ আহমেদ ৪ ওভারে ২৩ রান দিয়ে একাই নিয়েছেন ৪ উইকেট।
টস হেরে ব্যাট করতে নামা নোয়াখালীর প্রথম ৪ ব্যাটসম্যানের তিনজনই ফেরেন শূন্য রানে। যাঁরা রান করেছেন, তাদেরটাও ঠিক টি–টোয়েন্টিসুলভ ছিল না। অধিনায়ক সৈকত আলীই যেমন ২৯ বল খেলে করেছেন মাত্র ২৪ রান।
৫১ বল খেলা মাহিদুলও ৬১ রানের বেশি করতে পারেননি। নোয়াখলীর ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেট ছিল জাকের আলীর, ১৭ বলের ইনিংসে ৪ চারে ২৯ রান আসে তাঁর ব্যাট থেকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ সবের কিছুই লাগেনি। টানা দ্বিতীয় ম্যাচ হেরেছে নোয়াখালী এক্সপ্রেস। সিলেট পেয়েছে দুই ম্যাচে প্রথম জয়ের দেখা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নোয়াখালী এক্সপ্রেস: ২০ ওভারে ১৪৩/৭ (মাহিদুল ৬১*, জাকের ২৯, সৈকত ২৪; খালেদ ৪/২৩, সাইম ২/২৫)।
সিলেট টাইটানস: ২০ ওভারে ১৪৪/৯ (পারভেজ ৬০, মিরাজ ৩৩, ব্রুকস ১৬; মেহেদী ৪/৩৪, হাসান ২/১৯)।
ফল: সিলেট টাইটানস ১ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: খালেদ আহমেদ।