‘আনফিট’ ও ‘বোঝা’ অশ্বিন কেন ভারতের বিশ্বকাপ দলে, প্রশ্ন শিবরামকৃষ্ণানের

অশ্বিনের সমালোচনা করেছেন ভারতের সাবেক স্পিনার শিবরামকৃষ্ণানছবি : টুইটার

রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে সৌভাগ্যবান বলতেই হয়।

২০২১ ও ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে শেষ মুহূর্তে ঢুকে পড়েছিলেন অশ্বিন। ঘরের মাঠের ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও পুনরাবৃত্তি হলো সেই ঘটনার। এশিয়া কাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে চোটে পড়া বাঁহাতি স্পিনার অক্ষর প্যাটেল বিশ্বকাপ দল থেকে ছিটকে গেছেন। তাঁর জায়গায় ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন অফ স্পিনার অশ্বিন।

অথচ গত ছয় বছরে মাত্র চারটি ওয়ানডে খেলেছেন অশ্বিন। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া সিরিজে যে দুটি ম্যাচ খেলেছেন, সেই সিরিজ দিয়ে ওয়ানডে দলে ফিরেছেন ২০ মাস পর। মূলত অভিজ্ঞতায় টইটম্বুর ক্যারিয়ারের জন্যই ওয়াশিংটন সুন্দর বা যুজবেন্দ্র চাহালের পরিবর্তে তাঁকে বিবেচনা করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। ৩৭ বছর বয়সী অফ স্পিনার এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, এটাই হতে চলেছে তাঁর শেষ বিশ্বকাপ।

৮ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু ভারতের বিশ্বকাপ অভিযান। ম্যাচটি আবার অশ্বিনের শহর চেন্নাইয়ের এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। তবে ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ খেলতে নামার আগে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন অশ্বিন। কেন অশ্বিনকে বিশ্বকাপ দলে নেওয়া হলো, সেই প্রশ্ন তুলে স্পিনিং অলরাউন্ডারের সামর্থ্য নিয়েও খোঁটা দিয়েছেন চেন্নাইয়েরই সন্তান ভারতের সাবেক লেগ স্পিনার লক্ষ্মণ শিবরামকৃষ্ণান।

৫৭ বছর বয়সী শিবরামকৃষ্ণান বর্তমানে ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করছেন। বিশ্বকাপে ধারাভাষ্যকারদের তালিকায় অবশ্য তাঁর নাম নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) সমালোচনার শুরুটা তিনি করেছেন বিশ্বকাপে ধারাভাষ্য প্যানেলে সাবেক কোনো স্পিনারকে না রাখা নিয়ে। লিখেছেন, ‘ধারাভাষ্য প্যানেলে একজনও প্রকৃত স্পিনার নেই। এটা দুঃখজনক।’

সেই অশ্বিন, এই অশ্বিন
ছবি : বিসিসিআই

শিবরামকৃষ্ণানের সেই টুইটে পরক্ষণেই একজন ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন। তাঁকে জানানো হয়েছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক লেগ স্পিনার স্যামুয়েল বদ্রি আছেন বিশ্বকাপের ধারাভাষ্যকারদের তালিকায়। প্রতি উত্তরে শিবরামকৃষ্ণান লেখেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ তো বিশ্বকাপেই নেই, অথচ সে প্রতিনিধিত্ব করছে কোন যুক্তিতে?’

এরপরই অশ্বিনের সমালোচনায় মাতেন শিবরামকৃষ্ণান। লেখেন, ‘স্পিনারদের বিপক্ষে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের সংগ্রাম করতে হয়। কারণ, টেস্টে ভারতের উইকেটগুলো অশ্বিনের মনের মতো করে বানানো হয়। এসইএনএ দেশগুলোতে (দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া) ওর রেকর্ড দেখুন।’

শিবরামকৃষ্ণানের এই পোস্টের প্রতিবাদ জানান অশ্বিন–ভক্তরা। পরিসংখ্যান তুলে ধরে দেখান, অশ্বিন শিবরামকৃষ্ণানের চেয়ে ভালো স্পিনার। অশ্বিন ২০১১ সালে ভারতের বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য। এ নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে নামছেন তৃতীয়বার। বিপরীতে শিবরামকৃষ্ণান শুধু ১৯৮৭ বিশ্বকাপে দুটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন। অশ্বিনের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারও বেশ সমৃদ্ধ। শিবরামকৃষ্ণান যেখানে ভারতের হয়ে টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে মাত্র ২৫ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন, সেখানে অশ্বিন তিন সংস্করণ মিলিয়ে খেলেছেন ২৭৪ ম্যাচ। ভারতের হয়ে অশ্বিনের উইকেট ৭১৬টি, শিবরামকৃষ্ণানের মাত্র ৪১টি।

জবাবে শিবরামকৃষ্ণান লেখেন, ‘ভারতের স্পিনবান্ধব পিচে উইকেট পেতে বুদ্ধিমান হতে হয় না, তা যেকোনো নির্বোধই পেতে পারে। সে (অশ্বিন) বিমানবন্দর থেকে সরাসরি মাঠে যায়। গ্রাউন্ড স্টাফকে বলে পিচের কোন জায়গাগুলো ওর মতো করে তৈরি করতে হবে। এমন কাণ্ড আমি নিজ চোখে কয়েকবার দেখেছি।’ অশ্বিনকে ‘আনফিট’ ও ফিল্ডার হিসেবে ‘দলের বোঝা’ উল্লেখ করে তাঁর বোলিং অ্যাকশন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

এমন সমালোচনা দেখে শিবরামকৃষ্ণানকে ফোন করেছিলেন অশ্বিন। তবে তাঁকে সমালোচনার তিরে বিদ্ধ করা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করেননি; উল্টো সাবেক স্পিনারদের কাছ থেকে পরামর্শ চেয়েছেন। শিবরামকৃষ্ণান টুইটারে নিজেই সে কথা লিখেছেন, ‘বোলিং অ্যাকশন নিয়ে কথা বলতে রবি অশ্বিন কিছুক্ষণ আগে (কাল রাতে) আমাকে কল করেছিল। ব্যাপারটা দারুণ ছিল। ট্রলকারীদের বিষে সে আমার মতোই বিস্মিত হয়েছে। আমাকে সে এটাও স্পষ্ট করেছে যে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।’