প্রথম আলোর খবর মানে খবরটা ঠিক আছে
প্রথম আলোর শুরুটা যখন, প্রায় কাছাকাছি সময়ই আমার পেশাদার খেলোয়াড়ি জীবনেরও শুরু। এখন যেমন প্রিন্টের পাশাপাশি দেশে অনেক ইলেকট্রনিক মিডিয়া, অনলাইন বা মাল্টিমিডিয়া, তখন এমন ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই দিন শুরু হতো পত্রিকা হাতে নিয়ে। আর যেহেতু নিজে ক্রিকেটার, সবার আগে খেলার পাতাটাই খোলা হতো। অন্য পত্রিকাগুলোও খেলাধুলা কাভার করত, খেলার খবর থাকত। কিন্তু প্রথম আলো পড়লে মনে হতো, এই পত্রিকাটা অন্যদের তুলনায় খেলাধুলাকে একটু বেশি গুরুত্ব দিত। এ জন্যই প্রথম থেকেই প্রথম আলো পড়া হতো বেশি, বাসায় রাখাও হতো এই পত্রিকাটাই।
খেলার পাতার বাইরে প্রথম আলোর বিভিন্ন ক্রোড়পত্রও খুব পড়া হতো। বসে থাকতাম সপ্তাহজুড়ে, কবে ক্রোড়পত্রগুলো বের হবে, সে জন্য। রস+আলো, ছুটির দিন—এগুলো পড়তে খুবই ভালো লাগত। জানি না কেন বন্ধ হয়েছে সেসব। ওইগুলো অবশ্যই রাখা উচিত ছিল। আমি ক্রোড়পত্রগুলোর অনেক বড় পাঠক ছিলাম।
শুরু থেকেই এই পত্রিকার একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল এবং এখনো আছে। সেটা হচ্ছে খবরের বস্তুনিষ্ঠতা। অন্যান্য সংবাদমাধ্যমে কোনো খবর এলে সেটা সত্যি নাকি মিথ্যা, এ নিয়ে একটা প্রশ্নের জায়গা থাকে। কিন্তু প্রথম আলো কোনো খবর ছাপালে তা নিশ্চিত করে বলা যায়, নাহ্, খবরটা ঠিক আছে। প্রথম আলোর প্রতি এই আস্থার জায়গাটা শুরু থেকেই ছিল এবং এখনো আছে। এটাই প্রথম আলোকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে।
প্রথম আলোর খবর মানে হলো খবরটা ঠিক আছে। সব জেনেশুনে সংবাদ প্রকাশের যে ব্যাপারটা, পাঠক হিসেবে এটা প্রথম আলোতে ধারাবাহিকভাবে পেয়ে এসেছি। এটা প্রথম আলোর একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আরেকটা ব্যাপার বলতেই হয়, প্রথম আলো খুব সাহসী পত্রিকা। যেকোনো বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে লিখতে পারে। মোটামুটি বলা যায়, একটি নিরপক্ষে পত্রিকা। পক্ষপাতিত্ব প্রথম আলোতে একটু কম হয় বলেই আমার বিশ্বাস। সে জন্যই প্রথম আলো পড়ে আনন্দ পাই।
এখন পত্রিকার পাশাপাশি অনলাইনেরও সময় চলে এসেছে। আসলে যুগটাই এখন অনলাইনের। অনলাইনের শক্তি অনেক বেশি, এটাই বাস্তবতা। অনেক সময় দেখি অনলাইনে ভিউ পেতে মূলধারার অনেক সংবাদমাধ্যমও স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়। অনেক রকম হেডলাইন দেখি, যা সঠিক সাংবাদিকতা মনে হয় না। আমি চাইব, অনলাইনের এই যুগেও প্রথম আলো যেন ওই স্রোতে গা না ভাসায়। কাজটা একটু কঠিন। কারণ, সব জায়গায়ই ওই ধারা দেখছি। তবে প্রথম আলোকে সব সময় কঠিন কাজটাই করতে দেখে এসেছি। আশা করি, এ ক্ষেত্রেও এই চ্যালেঞ্জ তারা নেবে এবং জিতবে।
প্রতিষ্ঠানটির বয়স ২৫ বছর হয়ে গেল। প্রথম আলোকে অভিনন্দন। এখন যে অবস্থায় আছে, আমি ভবিষ্যতেও প্রথম আলোকে এই অবস্থায় দেখতে চাইব। নিরপেক্ষ এবং সাহসী সংবাদমাধ্যম হিসেবে প্রথম আলো তাদের বর্তমান অবস্থান ধরে রাখতে পারবে, সে প্রত্যাশা থাকবে। ক্রোড়পত্রগুলো ফিরিয়ে আনলে ভালো হবে। আগেই বলেছি, আমি রস+আলোর বিরাট ভক্ত ছিলাম, আমাকে খুব আনন্দ দিত সেটা। রম্য ব্যাপারটা আমাদের জীবন থেকে কমে যাচ্ছে। সেটা আবার ফিরিয়ে আনতে পারলে খুব ভালো হবে। আর প্রথম আলোর যেটা বৈশিষ্ট্য, মাথা নত না করা—আগামী দিনেও যেন এটা ধরে রাখে, সেই প্রত্যাশা তো থাকবেই।
লেখক: জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক