নাহিদার রেকর্ড, ফাহিমার অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড, ৭৮/৫ থেকে অস্ট্রেলিয়ার ২১৩

৭৬ বলে ৫৮ রানে অপরাজিত ছিলেন অ্যানাবেল সাদারল্যান্ডশামসুল হক

ফাহিমা খাতুনের বলে অ্যালানা কিংয়ের স্লগ সুইপে ওয়াইড লং অনে লাফিয়ে উঠে শুধু আঙুল লাগাতে পারলেন নাহিদা আক্তার। ক্যাচ তো দূরের কথা, ছয়ই আটকাতে পারলেন না। ইনিংসের ওই শেষ বলটিই যেন হয়ে থাকল বাংলাদেশের বোলিং আর ফিল্ডিংয়ের চিত্র। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭৮ রানে ৫ উইকেট হারানোর পরও মিরপুরে প্রথম ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়া তুলেছে ৭ উইকেটে ২১৩ রান। ফাহিমার করা শেষ ওভারেই এসেছে মেয়েদের ওয়ানডেতে রেকর্ড ২৯ রান! ৪ ছক্কা ও ১ চারে শেষ ওভারে ২৮ রানই তুলেছেন ৩১ বলে ৪৬ রানের ক্যামিও খেলা কিং।

কিংয়ের ওই ঝড়ের আগে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস ধরে রাখেন অ্যানাবেল সাদারল্যান্ড। দারুণ ফর্মে থাকা এ ব্যাটার অপরাজিত ছিলেন ৭৬ বলে ৫৮ রান করে। কিংয়ের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ৬৭ রানের জুটি গড়েন, বাংলাদেশের বিপক্ষে অষ্টম উইকেটে যা সর্বোচ্চ। ইনিংসের মাঝপথে অস্ট্রেলিয়াকে বেশ চাপে রাখলেও বাংলাদেশ বিরতিতে গেছে বেশ কঠিন এক লক্ষ্য মাথায় নিয়েই। এর আগে কখনোই এত রান তাড়া করে জেতেনি বাংলাদেশ।

উইকেট কেমন, সেটির আভাস অবশ্য পাওয়া গিয়েছিল সুলতানা খাতুনের প্রথম বলেই। টার্নে পরাস্ত হন ব্যাকফুটে খেলার চেষ্টা করা ফিবি লিচফিল্ড, বাংলাদেশ ব্রেকথ্রু পায় দ্বিতীয় ওভারেই। বেঙ্গালুরুর হয়ে আইপিএল জিতে আসা এলিস পেরি অবশ্য সুবিধা করতে পারেননি, সুলতানাকে লেগসাইডে খেলতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে থামেন ১০ বলে ২ রান করে। এ ম্যাচ দিয়ে অবশ্য পেরির একটা রেকর্ডও হয়ে গেছে, অ্যালেক্স ব্ল্যাকওয়েলকে টপকে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলে ফেললেন এই অলরাউন্ডার।

অন্যপ্রান্তে অ্যালিসা হিলি ভাগ্যের সহায়তা পান ভালোই। প্রথম ওভারে মারুফা আক্তারকে ফিরতি ক্যাচ দেওয়ার পর ৮ রানে দাঁড়িয়ে সুলতানার বলে স্লিপে ক্যাচ তুলেও বেঁচে যান অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক। মারুফারই অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হয়ে থামেন, ২৭ রানেই ৩ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া।

প্রথম পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে বড় ধাক্কা দিয়েছিল বাংলাদেশ
শামসুল হক

তালিয়া ম্যাকগ্রা ও বেথ মুনি সে চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন একটু। নাহিদার আর্ম বলে ম্যাকগ্রা এলবিডব্লু হলে ভাঙে ২১ রানের সে জুটি। ম্যাকগ্রা ফেরার পর অ্যাশলেই গার্ডনারকে নিয়ে তখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩০ রানের জুটি ছিল মুনির। এবার সফল ফাহিমা, তাঁর বলে ক্রিজে আটকে থেকে খেলতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হন ২৫ রান করা মুনি।

৭৮ রানে অস্ট্রেলিয়া হারায় ৫ উইকেট, ২০১৩ সালের পর আগে ব্যাটিং করে এত কম রানে ৫ উইকেট হারায়নি তারা। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উইকেট তুলনামূলক সহজ হয়ে আসে আরেকটু, যদিও অসম বাউন্স ছিলই। অ্যানাবেল সাদারল্যান্ডকে কেন্দ্র করে এরপর এগোয় অস্ট্রেলিয়া।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ সুযোগ হারিয়েছে এরপরও, ১৬ রানে ফাহিমার বলে মিড অনে সহজতম ক্যাচ ফেলেন সোবহানা মোস্তারি। নাহিদার বলে স্টাম্পিং হওয়ার আগে গার্ডনার করেন ৩২ রান। ওই উইকেট দিয়ে সালমা খাতুনকে (৫২) টপকে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হয়ে যান নাহিদা। ১০ ওভারে ২৭ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট, তবে শেষের ঝড়ে কিছুটা ম্লান হয়ে যায় সে পারফরম্যান্স।

অষ্টম উইকেটে ৫৬ বলে ৬৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে অস্ট্রেলিয়াকে ভালো সংগ্রহ এনে দিয়েছেন সাদারল্যান্ড ও কিং
শামসুল হক

নাহিদার ওই রেকর্ডগড়া উইকেটের পর জর্জিয়া ওয়ারেহাম ও সাদারল্যান্ডের ৩৪ রানের জুটি ভাঙেন পার্ট টাইমার স্বর্ণা আক্তার, স্লিপে দারুণ ক্যাচ নেন রাবেয়া। এরপর আর সাফল্যের দেখা পায়নি বাংলাদেশ। শেষ ওভারে গিয়ে ফাহিমার তো অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ডটাও হয়ে গেছে। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার আয়াবঙ্গো খাকার ১ ওভারে ২৮ রান তুলেছিলেন ভারতের হারমানপ্রীত কৌর ও স্মৃতি মান্ধানা।