‘টাইমড আউট’ বিতর্ক : কে পক্ষে, কে বিপক্ষে

বাংলাদেশের বিপক্ষে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের ‘টাইমড আউট’ নিয়ে নিজেদের অভিমত জানিয়েছেন (বাঁ থেকে) হার্শা ভোগলে, শোয়েব আখতার ও ওয়াসিম আকরামছবি : আইসিসি, টুইটার

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে কাল ‘টাইমড আউট’ হয়েছেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। বাংলাদেশের বিপক্ষে হওয়া ম্যাথুসের সেই আউট নিয়ে শুরু হওয়া বিতর্কের ঝড় এখনো থামেনি। এ ঘটনায় কেউ বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের পক্ষ নিচ্ছেন, কেউবা আবার ক্রিকেটীয় চেতনার কথা বলে ম্যাথুসের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। ‘টাইমড আউট’–এর পক্ষে–বিপক্ষে কে, কী বলেছেন; একনজরে দেখে নেওয়া যাক—

এ নিয়ে হয়তো বিতর্ক চলতেই থাকবে। (টাইমড আউটের) সময় পার হয়ে গেছে কি যায়নি, এর সঠিক উত্তরও হয়তো পাওয়া যাবে না। কিন্তু আসল প্রশ্ন হলো সাকিবের এই আবেদন কি তুলে নেওয়া উচিত ছিল নাকি সাকিবের আবেদন করাই ঠিক হয়নি? আমি অধিনায়ক হলে আমার মাথায় এ ধরনের চিন্তা আসতই না।
ওয়াসিম আকরাম, পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবার টাইমড আউট হয়েছেন শ্রীলঙ্কার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। দিল্লিতে গতকাল বাংলাদেশের বিপক্ষে
ছবি : এএফপি
ক্রিকেটীয় চেতনার বিষয়টি ছেড়ে দিন। এটি একটি দুর্বল যুক্তি। যারা অজ্ঞ বা ভুল করে, তারা প্রায়ই এই যুক্তি তুলে ধরে। আইন আছে মানে, আপনি আইনের মধ্যে থেকেই খেলছেন। ম্যাথুস ও শ্রীলঙ্কার সমর্থকেরা হতাশ কিংবা ক্ষুব্ধ হতে পারেন। কিন্তু খেলার নিয়ম অনুযায়ী তিনি আউট ছিলেন।
হার্শা ভোগলে, ভারতীয় ধারাভাষ্যকার
এটা একেবারেই ক্রিকেটীয় চেতনার পরিপন্থী। জানি, (ক্রিকেট–সংশ্লিষ্ট আইনের) বইয়ে এই নিয়ম আছে। কিন্তু এর আগে যেহেতু কেউ এ ধরনের আউটের জন্য আবেদন করেনি, তাই সাকিবও এটা এড়িয়ে যেতে পারত।
শোয়েব আখতার, পাকিস্তানের সাবেক ফাস্ট বোলার
যদি (বাংলাদেশ দলের) কোনো ক্ষতি হতো, ম্যাচের ফলের ওপর প্রভাব পড়ত অথবা জরিমানা করা হতো; তাহলে না হয় মানা যেত। কিন্তু এ ধরনের কোনো কিছুই হয়নি। আপনার উচিত ব্যাটসম্যানকে যথাযথ নিয়মে আউট করা। ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ড কারও দেরি হতেই পারে। এ ঘটনার পর ক্রিকেটীয় চেতনা বলে কিছু থাকল?
মিসবাহ–উল–হক, পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক
টাইমড আউট হওয়ার পর ক্ষুব্ধ ম্যাথুস
ছবি : এএফপি
প্রত্যেক অধিনায়কেরই নিজস্ব মত থাকতে পারে। যদি আমি অধিনায়ক হতাম, কখনোই আবেদন করতাম না। বাংলাদেশের ক্ষতি হলে বড়জোর একটাই হতে পারত। ৪০ ওভারের পর একজন ফিল্ডারকে বৃত্তের ভেতর রাখতে হতো। কিন্তু এ ধরনের পরিস্থিতিতে আম্পায়াররা সময় থমকে দেন (নষ্ট হওয়া সময় ছাড় দেন)।
শোয়েব মালিক, পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক
আরও পড়ুন
শুধু ক্রিকেটীয় প্রতিভার কারণে সাকিব আল হাসানকে খেলাটির অন্যতম সেরা বিবেচনা করা হতো। কিন্তু ২০১৯ বিশ্বকাপের পর সে তো (জুয়াড়ি সম্পর্কে তথ্য গোপন করে) নিষিদ্ধ হয়েছে, আম্পায়ারদের ভয় দেখিয়েছে, নিজেকে খেলার চেয়ে বড় মনে করছে। তাই গতকাল সে যা করেছে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
ভেঙ্কটেশ প্রসাদ, ভারতের সাবেক পেসার
দিল্লিতে কাল ম্যাথুসের বিতর্কিত আউটের পর বাংলাদেশ–শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়দের মধ্যে বেশ কয়েকবার এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে
ছবি : এএফপি
আমি নিশ্চিত, সাকিবও তার ক্যারিয়ারে কয়েকবার ‘টাইমড আউট’ হয়ে যেত, যদি কেউ আবেদন করত। এ ঘটনা আরও অনেক আউট নিয়ে আলোচনার সুযোগ করে দিতে পারে, যেগুলো খেলাটির আইনে আছে। আমার কাছে এটা স্পোর্টসম্যানশিপের জন্য আরেকটি দুঃখজনক দিন
আজহার আলী, পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক
এ ধরনের সিদ্ধান্ত আসলে মাঠেই (তাৎক্ষণিকভাবে) নিতে হয়। আইন অনুযায়ী ওর (সাকিবের) সিদ্ধান্ত সঠিক। সেখানে যদি জয়-পরাজয়ের ব্যাপার থাকে, তাহলে এটা ভালো সিদ্ধান্ত। যেটা সে নিজেও বলেছে। ওর জায়গায় আমি থাকলে হয়তো আমিও টাইমড আউটের আবেদন করতাম।
মঈন খান, পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক
আরও পড়ুন
ক্রিকেটের আইন ও চেতনা ভুলে যান। একজন ন্যায্য মনের ক্রিকেটার কীভাবে এই আউটের জন্য আবেদন করার কথা ভাবতে পারেন, আউটটি তো পরের ব্যাপার।
মার্ক ওয়াহ, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ওপেনার
খুব বাজে ব্যাপার। শুরুতে সাকিবের আবেদন এবং পরে আম্পায়ারদের অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে আউট দেওয়া সম্পূর্ণ অর্থহীন ছিল। এটা বেদনাদায়ক নিয়ম।
হরভজন সিং, ভারতের সাবেক স্পিনার
এটা ক্রিকেটের জন্য ভালো কিছু নয়। এটা ক্রিকেটীয় চেতনার পরিপন্থী
ওয়াকার ইউনিস, পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক
এটা ভালো কিছু হলো না।
ডেল স্টেইন, দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক ফাস্ট বোলার
এখানে সাকিবের আবেদনে সাড়া দিয়ে আম্পায়ার খুবই বাজে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শান্ত (নাজমুল হোসেন) পেছনে দাঁড়িয়ে বারবার আবেদন করার তাগাদা দিচ্ছিল। শান্ত প্রথমে আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলে। এরপর সাকিব আবেদন করে।
মোহাম্মদ কাইফ, ভারতের সাবেক ক্রিকেটার