আরেকটু সময় না পাওয়ার আক্ষেপ শামীমের

বিপিএলে আজ ৫১ বলে খেলা ৭১ রান করেছেন শামীমশামসুল হক

ঢাকা ডমিনেটরসের বিপক্ষে শেষ ওভারে যাওয়া লিগ পর্বের ম্যাচটা রংপুর রাইডার্সই জিতেছিল, তবু সে রাতে মন খারাপ করে মাঠ ছেড়েছিলেন রংপুরের শামীম হোসেন। মন খারাপের কারণ, দল জিতলেও জয়টা যে আসেনি তাঁর হাত ধরে! জয়ের জন্য যখন ৬ বলে ১২ রান দরকার ছিল, তখনই আউট হয়ে গিয়ে ম্যাচ শেষে আক্ষেপ করেছিলেন, ‘একটা ছক্কা মারতে চাইছিলাম...।’

ফিফটির পর শামীম
প্রথম আলো

আজ নিশ্চিতভাবেই সে রকম কোনো আক্ষেপে পুড়ছেন না শামীম। মিরপুরে বিপিএলের এলিমিনেটর ম্যাচে রংপুরের হয়ে ম্যাচ জেতানো ইনিংসই যে খেলেছেন তিনি! ফরচুন বরিশালের ১৭০ রান রংপুর টপকে যায় শামীমের ৫১ বলে খেলা ৭১ রানের ইনিংসের সৌজন্যে। ১৩৯ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসটি শামীমের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ এবং সেটি তিনি খেললেন ৩ নম্বরে ব্যাট করে। এবারের বিপিএলে এই প্রথম তিনে খেললেন এই বাঁহাতি। মূলত ফিনিশারের ভূমিকায় ব্যাটিং করলেও শামীম দারুণভাবে কাজে লাগালেন টপ অর্ডারে ব্যাটিংয়ের সুযোগটাও।

আরও পড়ুন

শামীমের টপ অর্ডারে খেলার সুযোগ আসে মূলত প্রতিপক্ষ দলের বোলিং আক্রমণের সমন্বয়ের কারণে। বরিশালে বাঁহাতি স্পিনার দুজন, সাকিব আল হাসান ও সানজামুল ইসলাম। ক্রিজে তাই একজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান থাকা দরকার ছিল। ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম দ্রুত আউট হওয়ায় তাই শামীমকে পাঠানো হয়। বিপিএলে এবার ৭-৮–এ খেলা শামীমকে টপ অর্ডারে দেখে অনেকেই একটু অবাক হয়েছিলেন।

দারুণ সব শট খেলেছেন শামীম
প্রথম আলো

ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে শামীম অবশ্য বললেন, ‘কোচ আমাকে আগেই বলেছেন, আমি ৩ নম্বরে ব্যাটিং করব। ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশনের কারণে...। যদি বাঁহাতি আউট হয় আমি নামব, ডানহাতি আউট হলে মেহেদী ভাই (শেখ মেহেদী হাসান) নামবে।’ তবে প্রস্তুত ছিলেন যেকোনো জায়গায় খেলার জন্যই, ‘আসলে আমি সব জায়গার জন্যই প্রস্তুত থাকি। আমার নিজের ওপর আস্থা আছে, আমি যেকোনো জায়গায় খেলতে পারব।’

আরও পড়ুন
ও যদি একটু ওপরে ব্যাট করার সুযোগ পায়, নিজেকে আরেকটু গুছিয়ে নিতে পারবে। তাহলে সে ভালো খেলতে পারবে। ওকে নিয়ে আমি খুব আশাবাদী।
নাজমূল আবেদীন


শামীমের আন্তর্জাতিক অভিষেক ২০২১ সালের জিম্বাবুয়ে সফরে। টি-টোয়েন্টিতে এরপর বাংলাদেশের হয়ে ১০টি ম্যাচ খেলেছেন, ব্যাটিং করেছেন ৯ ইনিংসে। এর মধ্যে তিনে খেলেছেন একবারই। বাকি ইনিংসগুলো ছিল ৬, ৭ ও ৮ নম্বরে। ম্যাচ জেতানো ইনিংস ছিল একটি এবং সেটি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচেই। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে রান তাড়ায় ১৫ বলে অপরাজিত ৩১ রান। বাংলাদেশ সে ম্যাচ জিতে নিশ্চিত করে জিম্বাবুয়ের মাটিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়। কিন্তু সে বছরই বিশ্বকাপ ও পাকিস্তান সিরিজের ব্যর্থতার পর শামীম বাদ পড়ে যান জাতীয় দল থেকেই।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ শামীম
প্রথম আলো

শামীমকে আরেকটু সুযোগ দেওয়া যেত কি না, আজ রংপুরের বাঁচা–মরার ম্যাচে দুর্দান্ত ইনিংসের পর উঠছে সে প্রশ্নও। শামীম ফিনিশার হিসেবে ব্যাটিংয়ের অনিশ্চয়তার প্রসঙ্গ টেনে একটু যেন আক্ষেপই করলেন, ‘আমি যে জায়গায় ব্যাটিং করি, সেখানে ব্যাটিং করা এত সহজ নয়। আমি ৭ বা ৮ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামি। যখনই নামি, চেষ্টা করি ম্যাচ শেষ করে আসতে। কাজটা সহজ নয়। আমি মনে করি, আমাকে আরেকটু সময় দিলে আরেকটু ভালো করতে পারতাম।’

আরও পড়ুন

দল থেকে বাদ পড়াটাকে তবু ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখেছেন তিনি, ‘ভালো সময়-খারাপ সময়কে আমি আলাদাভাবে দেখি না। আমি সবই উপভোগ করি। আমি সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করি। চেষ্টা করি, ইতিবাচকভাবে সব শট খেলতে।’

প্রতিপক্ষ ফরচুন বরিশালেন প্রধান কোচ নাজমূল আবেদীনের পছন্দের ক্রিকেটারদেরই একজন শামীম। ২০ ওভারের খেলায় যে গতি দরকার, সেটি শামীমের সহজাত গুণ বলেই মনে হয় তাঁর, ‘আমি সব সময় ওকে বড় মাপের খেলোয়াড় হিসেবেই দেখি। এই কারণে নয় যে খুব শট খেলতে পারে বা আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে পারে। আমি তাকে এভাবে দেখি ওর মানসিকতার জন্য। এই সংস্করণে যে মানসিকতা দরকার, এটা ওর আছে। এখন বিষয় হচ্ছে, এই মানসিকতা সে কীভাবে কাজে লাগাবে।’

জাতীয় দলে আরেকটু সময় পেলে ভালো করতেন, বিশ্বাস শামীমের
প্রথম আলো


শামীমের সেরাটা পেতে তাঁকে আরেকটু ওপরে খেলানোর কথা বলেছেন নাজমূল আবেদীন, ‘খুব কম সময়ই ও ওপরে ব্যাট করার সুযোগ পায়। ও এমন জায়গায় ব্যাট করে, যেখানে এক ধরনের খেলাই খেলতে হয়, মেরে খেলতে হয় ওকে। ও যদি একটু ওপরে ব্যাট করার সুযোগ পায়, নিজেকে আরেকটু গুছিয়ে নিতে পারবে। তাহলে সে ভালো খেলতে পারবে। ওকে নিয়ে আমি খুব আশাবাদী।’

আরও পড়ুন