বিজয় উদ্যাপনে ১১ জনের মৃত্যু: কোহলির বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে পুলিশের এফআইআর
আইপিএল জয়ের পর বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে আয়োজিত বিজয় উদ্যাপন ঘিরে ঘটে গেছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। অতিরিক্ত ভিড়ে পদদলনের ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১১ জনের, আহত হয়েছেন ৬৪ জন। এই ঘটনায় আরসিবি, তাদের ইভেন্ট পার্টনার ডিএনএ এন্টারটেইনমেন্ট ও কর্ণাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (কেএসসিএ) বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে বেঙ্গালুরু পুলিশ।
পুলিশ দাবি করেছে, তারা আগেই এই অনুষ্ঠানের জন্য অনুমতি দেয়নি। কারণ, আগের রাত থেকেই শহরে ভিড় সামলাতে ব্যস্ত ছিলেন নিরাপত্তাকর্মীরা। তারপরও আরসিবি ও তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো পুলিশের নির্দেশনা উপেক্ষা করে উদ্যাপন আয়োজন করে।
পুলিশের এফআইআরে উল্লেখ করা হয়েছে, ৪ জুন সকালে আরসিবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের বিজয় মিছিল ও স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠানের কথা ঘোষণা করে। জানানো হয়, দর্শকদের জন্য স্টেডিয়ামে প্রবেশ ফ্রি পাসে পাওয়া যাবে। এই ঘোষণার পর লাখ লাখ সমর্থক চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে জড়ো হতে শুরু করেন।
বেলা ৩টা ১০ মিনিটে স্টেডিয়ামের গেট খোলার পরই তৈরি হয় বিশৃঙ্খলা। অতিরিক্ত ভিড়ের চাপে শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি ও হুড়োহুড়ি। মুহূর্তেই ঘটনার ভয়াবহ রূপ নেয় পদদলনে। পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীরা আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। তবে অনেকের মৃত্যু ঘটে ঘটনাস্থলেই।
বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠান শুরু হয় এবং এরপর আর বড় কোনো অঘটন ঘটেনি। কিন্তু পুলিশ অভিযোগ করেছে, আয়োজকেরা ভিড় সামলানো বা পাস বিতরণ নিয়েও কোনো পরিকল্পনা করেননি। এমনকি পুলিশের সঙ্গে তারা সহযোগিতাও করেননি।
এ ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা এফআইআরে ভারতীয় দণ্ডবিধির নতুন সংস্করণ, ভারতীয় ন্যায়সংহিতার ছয়টি ধারা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে খুন নয়, কিন্তু মৃত্যুর জন্য দায়ী হওয়ার অভিযোগ, গুরুতর আঘাত, বেআইনি জমায়েত এবং সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার মতো অভিযোগ।
ঘটনার পরদিনই কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে বরখাস্ত করা হয় বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার ও কাব্বন পার্ক থানার ইনচার্জকে।
এই ঘটনার তদন্তে একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে কর্ণাটক সরকার। পাশাপাশি, ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ে একটি স্বাধীন তদন্তও শুরু হয়েছে, যার প্রতিবেদন আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকার এবং আরসিবি—উভয় পক্ষই নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার ব্যয়ের দায়িত্বও তারা নিয়েছে।
ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, সে জন্য জনসমাগম-সম্পর্কিত নতুন নির্দেশিকা তৈরির কথাও বিবেচনা করছে রাজ্য সরকার।