এলিট আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা কতটা নির্ভুল

এলিট প্যানেলে জায়গা করে নেওয়ার পর শরফুদ্দৌলা মাঠের আম্পায়ার হিসেবে সাতটি টেস্ট পরিচালনা করেছেন। এতে ডিআরএসে তাঁর সাফল্যের হার ৭৫.৬১%।

বাংলাদেশি আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকতছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

বার্মিংহামের এজবাস্টনে কাল আরেকটি টেস্ট শেষ হলো। আরেকবার মাঠের আম্পায়ার হিসেবে দেখা গেল বাংলাদেশের শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকতকে এবং অনেকটা প্রত্যাশিতভাবেই তিনি আবার আলোচনায়। কারণ, ম্যাচটা যে ছিল ভারতের!

শরফুদ্দৌলা এর আগে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে ভারতের দুটি ম্যাচ (একটিতে টিভি আম্পায়ার) পরিচালনা করে আলোচিত হয়েছিলেন। এবার আম্পায়ারিং করলেন এজবাস্টনে অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফির দ্বিতীয় টেস্টে।

বাংলাদেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে জায়গা করে নেওয়া শরফুদ্দৌলা মূলত তাঁর দৃঢ় মানসিকতা ও সাহসী সিদ্ধান্তের কারণেই বারবার খবরের শিরোনাম হন।

গত বছরের মার্চে আইসিসি এলিট প্যানেলে জায়গা পান আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা
ছবি: শামসুল হক

তা এজবাস্টন টেস্টে কেমন আম্পায়ারিং করলেন শরফুদ্দৌলা? হার্শা ভোগলের মতো জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার যখন ‘সার্টিফিকেট’ দেন, তখন সেটিকে ভালো বলতেই হবে।

এজবাস্টনে কাল ইংল্যান্ডকে ৩৩৬ রানে হারিয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা ফিরিয়েছে ভারত। শুবমান গিলের দলকে হার্শা যেমন প্রশংসায় ভাসিয়েছেন, তেমনি আম্পায়ার শরফুদ্দৌলারও বন্দনা করেছেন।

এজবাস্টন টেস্টে আম্পায়ারিং নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হার্শা লিখেছেন, ‘এই ম্যাচে অসাধারণ আম্পায়ারিং হয়েছে। ক্রিস গ্যাফানির কাছ থেকে আপনি এই মানের আম্পায়ারিং আশা করতে পারেন। তবে শরফুদ্দৌলা সৈকত সত্যিই দুর্দান্ত ছিলেন।’

পরিসংখ্যান বলছে, এজবাস্টন টেস্টে ৪৮ বছর বয়সী শরফুদ্দৌলার ১০টি সিদ্ধান্ত ডিসিশন রিভিউ সিস্টেমে (ডিআরএস) গেছে। এর ৮টিতেই তিনি সঠিক ছিলেন, ২টি সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়েছে। সাফল্যের হার ৮০%। মানে, লেটার মার্কস বা এ‍+।

শরফুদ্দৌলার কয়েকটি সিদ্ধান্ত ডিআরএস পর্যন্ত যায়নি। কারণ, দুই দলই তাঁর মেনে নিয়ে নিয়েছে। সেসব সিদ্ধান্তের কারণেও তিনি বেশ প্রশংসিত হয়েছেন।

শরফুদ্দৌলা এলিট প্যানেলে জায়গা করে নেন গত বছরের মার্চে। এরপর থেকে মাঠের আম্পায়ার হিসেবে সাতটি টেস্ট পরিচালনা করেছেন। শুরুটা হয়েছিল গত বছরের জুলাইয়ে বেলফাস্টে আয়ারল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে টেস্ট দিয়ে। সেই ম্যাচে ডিআরএস ছিল না।

পরের ছয় টেস্টে তাঁর ৪১টি সিদ্ধান্ত ডিআরএসে গেছে। এর মধ্যে মাত্র ১০টিতে ব্যাটসম্যান অথবা ফিল্ডিং করা দল সফল হতে পেরেছে। ৩১টি সিদ্ধান্ত তাঁর পক্ষে গেছে। অর্থাৎ, সাফল্যের হার ৭৫.৬১%। আম্পায়ার্স কলে মাত্র ৫টি সিদ্ধান্তে আউট অথবা নট আউট হয়েছে।

এজবাস্টন টেস্টে শরফুদ্দৌলার এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েও আউট হয়েছেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বেন স্টোকস
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

সিদ্ধান্ত ডিআরএসে যাওয়ার পরও ১০০% সাফল্য পেয়েছেন—এমন রেকর্ডও আছে শরফুদ্দৌলার। তাও আবার একটি নয়; দুটি টেস্টে।

গত বছরের অক্টোবরে মুলতানে পাকিস্তান-ইংল্যান্ড টেস্টে ডিআরএসে যাওয়া তিনটি সিদ্ধান্তই সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। এরপর নভেম্বরে ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলঙ্কা টেস্টে ডিআরএসে আট সিদ্ধান্তের সবকটি নির্ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

শরফুদ্দৌলা ডিআরএস থেকে সবচেয়ে কম সাফল্য পেয়েছেন পাকিস্তান-ইংল্যান্ডের আরেক টেস্টে। অক্টোবরে রাওয়ালপিন্ডিতে হওয়া সেই টেস্টে তাঁর সাতটি সিদ্ধান্তের মধ্যে শুধু দুটি সঠিক ছিল (সাফল্যের হার ২৮.৫৭%)। অবশ্য রাওয়ালপিন্ডির পুরোদস্তুর স্পিন সহায়ক সেই উইকেটে আরেক আম্পায়ার ক্রিস গ্যাফানিকেও বড় পরীক্ষা দিতে হয়েছিল।

আরও পড়ুন

এলিট আম্পায়ার হওয়ার পর শরফুদ্দৌলা যে সাত টেস্টে মাঠের আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, এর সাতটিই আলাদা ভেন্যুতে। দেশের হিসেবে সংখ্যাটা ছয়।  

ক্রিকেটারদের যেমন ক্রিকেট তীর্থ লর্ডসে খেলার ও সেখানকার অনার্স বোর্ডে নাম তোলার স্বপ্ন থাকে, আম্পায়ারদেরও নিশ্চয় সেখানে আম্পায়ারিং করার ইচ্ছা থাকে!

সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি মাঠের পরিস্থিতিও দারুণভাবে সামাল দেন আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা
ছবি: এক্স

শরফুদ্দৌলারও সেই ইচ্ছা পূরণ হবে পরের ম্যাচেই। বৃহস্পতিবার লর্ডসে শুরু ইংল্যান্ড-ভারত তৃতীয় টেস্ট। এই ম্যাচেও মাঠের আম্পায়ার হিসেবে দেখা যাবে ‘বাংলাদেশের গর্ব’ শরফুদ্দৌলাকে।