শাদাবকে ‘মানকাডিং’ ফারুকির, অসন্তুষ্ট পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা
ম্যাচ শেষ হয়েছে রোমাঞ্চে। আফগানিস্তানের ৩০০ রান তাড়ায় শেষ তিন বলে ৬ রান দরকার ছিল পাকিস্তানের, উইকেটে শেষ দুই ব্যাটসম্যান। হারিস রউফ ৩ রান তুলে নেওয়ার পরের বলে চার মেরে দেন নাসিম শাহ। তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয়টিতে পাকিস্তান জেতে ১ উইকেটে, ১ বল বাকি থাকতে।
তবে ফজলহক ফারুকির করা শেষ ওভারটির শুরুতেই নাটকীয় তবে অনাকাক্ষিত ‘দুর্ঘটনা’য় পড়েছিল পাকিস্তান। ৩৫ বলে ৪৮ রান তোলা শাদাব খানকে নন–স্ট্রাইকে রানআউট করেন ফারুকি। ক্রিকেটের আইনে রানআউট হিসেবে যুক্ত হওয়ার আগে যেটিকে ‘মানকাডিং’ বলা হতো। যে আউটে এখনো ক্রিকেটের চেতনা নিয়ে পক্ষে–বিপক্ষে আলোচনার ঝড় বয়ে যায়।
বোলার হাত থেকে বল ছাড়ার আগে নন–স্ট্রাইকিং ব্যাটসম্যানের পপিং ক্রিজ ছেড়ে যাওয়ার নিয়ম নেই। যে কারণে কোনো ব্যাটসম্যান বল করার আগে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে গেলে বোলারের জন্য স্টাম্প ভেঙে দিয়ে রানআউট করার নিয়ম আছে। আর এটিই কাজে লাগিয়েছেন ফারুকি।
রানতাড়ায় পাকিস্তানকে ৬ উইকেটে ২১১ রান থেকে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে দিয়েছিলেন শাদাব। ৪৯তম ওভারের শেষ দুই বলে আবদুর রহমানকে চার ও ছয় মেরে পাকিস্তানের জন্য সমীকরণ নামিয়ে আনেন শেষ ৬ বলে ১১ রানে। ওই সময় বোলিং করতে এসে প্রথম ডেলিভারির রানআপেই শাদাবকে রানআউট করেন ফারুকি।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ফারুকি একবার হাত ওপরে তুলে ফেলার পপিং ক্রিজ থেকে বেরিয়ে যাওয়া শুরু করেন শাদাব। সতর্ক ফারুকি পপিং ক্রিজের ভেতরে হাত পুরোপুরি ঢোকার আগে স্টাম্প ভেঙে দেন। শাদাবের বেরিয়ে যাওয়া এবং ফারুকির স্টাম্প ভেঙে দেওয়ার মধ্যে পার্থক্য এত কম ছিল যে আম্পায়ার আউট নিশ্চিতের জন্য তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে সিদ্ধান্ত চেয়ে পাঠান। শাদাব অবশ্য অপেক্ষা করেননি, আগেই হাঁটা দেন। তাঁর শারীরিক ভঙ্গিতে ছিল স্পষ্ট হতাশা। অসন্তোষের ছাপ ফুটে ওঠে পাকিস্তানের ড্রেসিংরুমেও।
শাদাবের আউটটি ছিল পাকিস্তানের নবম উইকেট। উইকেটে তখন শেষ দুই ব্যাটসম্যান নাসিম ও রউফ। ড্রেসিংরুমে হারের দুশ্চিন্তা দেখা দিলেও এই দুই টেল এন্ডার মিলেই ৫ বলের মধ্যে ১২ রান তুলে জয়ের সমীকরণ মিলিয়ে ফেলেন। জয়সূচক বাউন্ডারির পর নাসিমের উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো, যেন ক্ষোভের উদ্গিরণ ঘটাচ্ছেন। পরে দেখা যায়, বাবর আজম মাঠে নেমে আসার পর নাসিম তাঁকে কী যেন বলছেন। আফগানিস্তানের খেলোয়াড়দের সঙ্গে সৌজন্যমূলক করমর্দনের সময় মোহাম্মদ নবীর সঙ্গে বাবরকে কিছুক্ষণ কথা বলতে দেখা যায়। এ সময় তাঁকে ভীষণ ক্ষুব্ধ দেখা যায়।
এর আগে পাকিস্তানের জয় নিশ্চিতের পর মাঠে নেমেছিলেন বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়। উল্লাস–উদ্যাপনের পর বাকিরা করমর্দনের জন্য মাঠে থেকে গেলেও শাহিন আফ্রিদি মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান। বাবরকে নামতে দেখেও পাশ কাটিয়ে ওপরে উঠে যেতে উদ্যত হন। তবে অধিনায়ক তাঁকে পেছন থেকে ডেকে আনেন।
‘ক্রিকেটপাকিস্তান’–এর খবরে বলা হয়, শাদাবের রানআউটসহ ম্যাচের ভেতরের একাধিক ঘটনায় আফগানিস্তানের ওপর অসন্তুষ্ট ছিল পাকিস্তান দল। সম্ভবত তারই জেরে ঘটেছে এ সব ঘটনা।
পাকিস্তান দল যে শাদাবের রানআউট সহজভাবে নেয়নি, সেটি স্পষ্ট কয়েকজনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টেও। নাসিম ম্যাচ শেষে টুইট করেন, সেখানে শুরুতেই লেখেন, ‘এই জয়টা শাদাবের জন্য।’
মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ইফতিখার আহমেদ ‘কংগ্রাচুলেশনস টিম পাকিস্তান’ লিখে একটি টুইট করেছেন, যেখানে ছবি হিসেবে জয়ের মুহূর্ত বা দলের উল্লাস নয়, ব্যবহার করেছেন শাদাবের রানআউটের দৃশ্য। এই মুহূর্তে পাকিস্তান দলের বাইরে থাকা শাহনওয়াজ দাহানিও শাদাবের রানআউটের অন্য একটি ছবি পোস্ট করেছেন। ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘সিন্ধ ভাষায় মানকাডিংকে আমরা কী বলি?
বোঝাই যাচ্ছিল, শাদাবের রানআউট ক্রিকেটের আইনে বৈধ বলে পরোক্ষে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা।