‘আমি মনের বিরুদ্ধে কিছু করি না’

নুরুল হাসানকে জানানো হয়েছিল আগেই। জিম্বাবুয়ে সফরে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক তিনি—এই আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর সে কারণেই হয়তো আবেগে ভেসে যাননি। নতুন দায়িত্ব কীভাবে পালন করবেন, সেটা নিয়েই এখন নুরুলের যত ভাবনা। তারুণ্যনির্ভর টি-টোয়েন্টি দলটার কাছে বিসিবির চাওয়া আগ্রাসী ক্রিকেট। নুরুলও কাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলার কথাই বললেন—

জিম্বাবুয়ে সফরে টি–টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নুরুল হাসানছবি: ইনস্টাগ্রাম
অধিনায়ক হয়ে খুব যে রোমাঞ্চিত, নুরুল হাসানের বিষয়টি তেমন নয়
ছবি: ফেসবুক

প্রশ্ন :

নিজের নামের আগে ‘অধিনায়ক’ শব্দটা শুনতে কেমন লাগছে?

নুরুল হাসান: তেমন বিশেষ কিছু না। ওই রকম কোনো অনুভূতি কাজ করছে না। এটা নিয়ে খুব বেশি যে রোমাঞ্চিত, এমন না, স্বাভাবিকই আছি। এখন তেমন রোমাঞ্চ কাজ করে না আমার মধ্যে।

প্রশ্ন :

অবাক হয়েছিলেন আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর?

নুরুল: বিসিবি থেকে আমাকে আগেই জানানো হয়েছিল। তখন একটু অবাক হয়েছিলাম। এরপর মনে হয়েছে, আমাকে একটা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই দায়িত্বে যেন শতভাগ দিতে পারি, এটাই চেষ্টা করতে হবে, এর বেশি কিছু না। অবশ্যই দেশকে নেতৃত্ব দেওয়া অনেক গর্বের ব্যাপার।

বাংলাদেশের উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান
ফাইল ছবি

প্রশ্ন :

নিজের আবেগ লুকিয়ে রাখছেন মনে হচ্ছে…

নুরুল: না, তেমন কিছু না। আগে অনেক বেশি আবেগী ছিলাম। আমি এই জায়গাটা নিয়ে অনেক কাজ করেছি। এমন না যে হঠাৎ করেই এ রকম হয়ে গিয়েছি। দুই-আড়াই বছর ধরেই নিজেকে বদলাচ্ছি। এখন একটা প্রক্রিয়া মেনে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি। ফলাফল নিয়ে একদমই ভাবি না। অধিনায়ক হিসেবেও এভাবে এগোতে চাই।

প্রশ্ন :

শুনেছি, বিষয়গুলো নিয়ে মাইন্ড ট্রেইনারের সঙ্গে কাজ করছিলেন?

নুরুল: হ্যাঁ, এখনো করছি। চলার পথে সবারই একটা প্রত্যাশা থাকে, সেটা ক্রিকেটে হোক কিংবা এর বাইরে। যখন আপনি সে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল পাবেন না, তখন যে কেউই হতাশ হয়, খারাপ লাগে। এ কারণেই সব ধরনের প্রত্যাশা থেকে নিজেকে দূরে রাখছি। কারণ, প্রত্যাশা নিয়ে বেশি ভাবলে একটা ভয়ও চলে আসে, ব্যর্থতার ভয়। আমি তাই এখন এসব নিয়ে একদমই ভাবি না।

গ্লাভস হাতে উইকেটের পেছনে ভালোই করছেন নুরুল
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

ঘরোয়া ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব করেন। সেটা কি জাতীয় দলে কাজে আসবে?

নুরুল: আমি যখন যে দলের অধিনায়কত্ব করেছি, সেটা জাতীয় লিগ, বিসিএল, ঢাকা লিগ কিংবা বিপিএল হোক—আমার মূল দর্শন থাকে দল হিসেবে খেলা। যখন একটা দলে একজন আরেকজনের সাফল্যে খুশি হবে, আরেকজনের ভালোর জন্য মন থেকে প্রত্যাশা করবে, তখন ওই দল স্বাভাবিকভাবেই ভালো করবে। দল নিয়ে যে অনুভূতিটা, সেটা যেন সবার ভেতরে থাকে। আশা করি, জাতীয় দলেও এটা ধরে রাখতে পারব।

প্রশ্ন :

দুই বছর আগেও দলে ছিলেন না, এখন অধিনায়ক। পেছনে ফিরে তাকালে কি অবাক লাগে?

নুরুল: ২০১৮ সালে যখন আমি জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছিলাম, তখন সেই হতাশা কাটিয়ে উঠতে আমার অনেক সময় লেগেছে। কী হবে, কী করব—এসব চিন্তা করেই দুই মাস কেটে গেছে। আমার ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবনে এটার প্রভাব পড়েছিল। ওই সময়টা আমার জন্য অনেক বড় শিক্ষা। এরপর ফেরার লড়াইটা তো সবাই জানেন। আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি, নিজের প্রতি সৎ ছিলাম। আমি এখন যা-ই করি, শতভাগ চেষ্টা দিয়ে করি। যেন নিজেকে দোষারোপ করতে না হয় যে সবটা দিয়ে চেষ্টা করিনি।

অধিনায়ক নুরুল নিজের ওপর নিজেই আস্থা রাখছেন
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

নুরুল হাসান অধিনায়ক হিসেবে কেমন হবেন?

নুরুল: অধিনায়কের একটা গাট ফিলিং থাকে। আমার যখন মনে হয় যে এই মুহূর্তে এটা করলে ভালো হবে, তখন আমি সেটাই করি। সেটা ভুল হতে পারে, ঠিকও হতে পারে। নিজের ওপর আস্থাটা যেন থাকে। মন থেকে আসতে হবে বিষয়টা। আমি মনের বিরুদ্ধে কিছু করি না।

প্রশ্ন :

আপনার পারফরম্যান্স নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। দলকে নেতৃত্ব দিতে পারফর্মিং অধিনায়ক হওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

নুরুল: আমি সাদা বলের ক্রিকেটে যেখানে ব্যাটিং করি, সেখানে ইমপ্যাক্ট ইনিংস খেলতে হয়। আমি হয়তো একদিন ২০ রান করব, ওই দিনের জন্য হয়তো সেই ২০ রানের ইনিংসটি হবে ইমপ্যাক্ট ইনিংস। পরের ম্যাচে আবার যখন রান করব না, তখন মানুষ বলবে আমি রান করছি না। কারণ, আগের ম্যাচের ওই ২০টা রান মানুষের মনে থাকে না। ২০ রান তো আর মাথায় রাখার মতো সংখ্যা না, এটাই হয়। তাই আমি বাইরের বিষয় নিয়ে ভাবি না। নিজে ১০০ ভাগ দিচ্ছি কি না, এটাই সবচেয়ে জরুরি।

আপাতত শুধু জিম্বাবুয়ে সফর নিয়েই চিন্তা করছেন নুরুল হাসান
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

এক সিরিজের জন্য দায়িত্ব পেয়েছেন। দীর্ঘ মেয়াদে অধিনায়কত্ব পেতে নিশ্চয়ই এই সিরিজে ভালো করতে চাইবেন?

নুরুল: আমি এত দূর চিন্তা করছি না। দুই দিন পর বাঁচি কি না, সেটারই ঠিক নেই। আপাতত শুধু জিম্বাবুয়ে সফর নিয়েই চিন্তা। চেষ্টা থাকবে কঠোর পরিশ্রম করে যাওয়ার। আর কোনো কিছুর শেষ না দেখে হাল ছাড়তে চাই না। দলের জন্য শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যাব, নিজের সবটা দিয়ে।

প্রশ্ন :

টি-টোয়েন্টি সংস্করণটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?

নুরুল: আমরা ওয়ানডে থেকে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে পিছিয়ে। ওয়ানডে ক্রিকেটটা আমাদের জন্য একটা স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা। বাকি দুই সংস্করণে আমাদের উন্নতির অনেক জায়গা আছে। তবে আপাতত এই সিরিজটা নিয়েই ভাবছি। কীভাবে এখানে ভালো করতে পারি, সেটাই আমার চিন্তা। চেষ্টা থাকবে দল হিসেবে যেন ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে পারি।