আবাহনীর টানা ১৩তম জয়ের দিনে মুশফিকের আউট–বিতর্ক

নাজমুল হোসেন, রনি তালুকদার ও ফজলে রাব্বির তিন সেঞ্চুরির দিনে ছিল ছক্কা নাকি আউট, এই বিতর্কও। আজ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা নির্ধারণের আনুষ্ঠানিকতাও হতে পারত। ফতুল্লায় গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে আবাহনী ১৭১ রানের বড় জয়ও পেয়েছে। বিকেএসপিতে শাইনপুকুরকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে শেখ জামাল। কিন্তু মিরপুরে প্রাইম ব্যাংককে ৩৩ রানে হারিয়ে আবাহনীর অপেক্ষা বাড়িয়েছে মোহামেডান।

সেঞ্চুরি করেছেন আবাহনীর অধিনায়ক নাজমুল হোসেনশামসুল হক

বড় জয়ে আবাহনীর টানা ১৩

আগে ব্যাট করতে ৩০০-র বেশি রান, শুরুতে বোলিং করলে প্রতিপক্ষকে ২০০ রানের মধ্যে অলআউট। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর সর্বশেষ ছয়টি ম্যাচের গল্প এমনই। আজ ফতুল্লায় গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষেও আবাহনীর সুপার লিগের ম্যাচটা সে ছকেই এগিয়েছে। প্রথমে ব্যাট করে নাজমুল হোসেনের সেঞ্চুরি, এনামুল হক ও তাওহিদ হৃদয়ের ফিফটিতে আবাহনী করে ৫ উইকেটে ৩৪৩ রান।

নাজমুলকে আজ মঞ্চটা গড়ে দিয়েছেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ (৩৩) ও লিটন দাস (৩৩)। দুই ওপেনারের ভালো শুরু কাজে লাগিয়ে ৬১ বলে ফিফটি করেন নাজমুল। এরপর লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তাঁর ১২তম সেঞ্চুরিতে পৌঁছাতে খেলেছেন আর মাত্র ২১ বল। ৮৪ বল খেলে ১০১ রান করে আউট হন নাজমুল, ৮টি চার ও ৬টি ছক্কা ছিল তাঁর ১২০ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসে। এ ছাড়া এনামুল ৫১ বলে ৬৮ রান করে ফিরলেও ও হৃদয় ৪০ বলে অপরাজিত ছিলেন ৫৮ রানে।

৪০ বলে ৫৮ রান করেছেন তাওহিদ হৃদয়
প্রথম আলো

আবাহনীর বাঁহাতি স্পিনার রাকিবুল হাসান বাকি কাজটা করেন। ৪৪ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী বাংলাদেশ দলের এই সদস্য। ৩৫.১ ওভারে ১৭২ রানে গুটিয়ে যায় গাজী। দলটির হয়ে সর্বোচ্চ ৬২ রান সাব্বির হোসেনের।

আবাহনীর ১৭১ রানের জয়ের দিনে দলটিতে ১২ বছর পূর্ণ হওয়ায় মোসাদ্দেক হোসেনকে ব্লেজার ও ক্রেস্ট উপহার দেওয়া হয়।  

শিরোপা দৌড় থেকে ছিটকে পড়ল শাইনপুকুর

১১৯ বলে ৬টি চার ও ৬টি ছক্কায় ১০১ রানে অপরাজিত ছিলেন শেখ জামালের ফজলে রাব্বি
বিসিবি

চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষীণ সম্ভাবনাটুকু বাঁচিয়ে রাখতে আজ জিততেই হতো শাইনপুকুরকে। কিন্তু বিকেএসপিতে আজ শেখ জামাল ধানমন্ডির কাছে হেরে সেই আশাও শেষ হয়ে গেছে দলটির।

শেখ জামালের বিপক্ষে দারুণ শুরুর পরও তা কাজে লাগাতে পারেনি শাইনপুকুর। আগে ব্যাট করা শাইনপুকুরকে দারুণ শুরু এনে দেন দুই ওপেনার জিশান আলম ও তানজিদ হাসান। বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে মাত্র ১২.২ ওভারে ১২৩ রান যোগ করেন দুই ওপেনার। তানজিদ ২৯ বলে ৩৯ রান করেছেন, জিশান ৬১ বলে করেছেন ৯৮ রান। ১৬০ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসে ছিল ৮টি চার ও ৮টি ছক্কা। কিন্তু শাইনপুকুরের দুর্ভাগ্য, এরপর অধিনায়ক আকবর আলী (৮৩ বলে ৬৪ রান) ছাড়া কেউই বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ৪৬.১ ওভার ২৬৪ রানে অলআউট শাইনপুকুর।

২৬৫ রানের লক্ষ্যটা ৪৬.২ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে টপকে যায় শেখ জামাল। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা সাইফ হাসান আজ ৭৫ বলে ৬৭ রানের ইনিংস খেলে দলকে ভালো শুরু এনে দেন। বাকি কাজটা করেন ফজলে রাব্বি ও ইয়াসির আলী। রাব্বি ১১৯ বলে ৬টি চার ও ৬টি ছক্কায় ১০১ রানে অপরাজিত ছিলেন। ইয়াসিরের ব্যাট থেকে এসেছে অপরাজিত ৪০ রান।

আরও পড়ুন

প্রাইম ব্যাংককে হারিয়ে আবাহনীর অপেক্ষা বাড়াল মোহামেডান

১৪১ রান করেছেন রনি তালুকদার
বিসিবি

মিরপুরে প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছেন রনি তালুকদার। ক্যারিয়ার সেরা ১৪১ রানের ইনিংসটি রনির লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে চতুর্থ শতক। ১৩১ বলের ইনিংসে ৮ চারের সঙ্গে ৯টি ছক্কা মেরেছেন মোহামেডান ওপেনার। তিনে নামা মাহিদুল ইসলাম এবারের লিগের সপ্তম ফিফটি করে ৫০ রানে (৭৭ বল) থেমেছেন, একটি সেঞ্চুরিও আছে এই উইকেটকিপারের। শেষের দিকে মেহেদী হাসান মিরাজ অপরাজিত ৫৩ রান করেছেন মাত্র ২৯ বলে। তাঁর ১৮২ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসটি মোহামেডানকে ৬ উইকেটে ৩১৭ রান এনে দেয়।

এত বড় স্কোর করেও নিরাপদ ছিল না মোহামেডান। দলীয় ২০ রানে তামিম ইকবাল ১৪ রান করে আউট হলেও পারভেজ হোসেন (৩৮), শাহাদাত হোসেন (৫১) ও জাকির হাসান (৪১) ছোট ছোট জুটি গড়ে প্রাইম ব্যাংককে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। ম্যাচের মোড় ঘুরে যায় ৩৪তম ওভারে। শাহাদাতের বিদায়ের পর অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে রান বাড়াচ্ছিলেন জাকির। নাঈম হাসানের করা ৩৪তম ওভারের চতুর্থ বলে মুশফিক মিড উইকেটে উড়িয়ে মারেন, বাউন্ডারি সীমানার খুব কাছ ঘেঁষে আবু হায়দার রনি ডাইভ দিয়ে অবিশ্বাস্য ক্যাচ লুফে নেন।

আরও পড়ুন

কিন্তু বিসিবি সম্প্রচারিত ইউটিউব চ্যানেলের রিপ্লেতে দেখা যায়, ডাইভ দিয়ে ওঠার সময় বাউন্ডারি সীমানা স্পর্শ করে রনির পা। এরপর ছক্কা নাকি আউট; এই দ্বিধায় মিনিট দশেক খেলা বন্ধ থাকে। প্রাইম ব্যাংককের ড্রেসিংরুম থেকে অধিনায়ক তামিম, কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনসহ অনেকেই বেরিয়ে আসেন।  বারবার ভিডিও দেখে আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় তামিমকে। শেষ পর্যন্ত মুশফিককে (১০ রান) আউট দেওয়া হয়। প্রাইম ব্যাংকও সিদ্ধান্ত মেনে নেয়। পরের ওভারে নাসুমের বলে থেমেছেন আরেক থিতু ব্যাটসম্যান জাকির।

আউটের পর মুশফিকুর রহিম (ডানে)
প্রাইম ব্যাংক

এরপরও হাল ছাড়েনি প্রাইম ব্যাংক। শেখ মেহেদী হাসান ৪৫ বলে ৬৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন। ৩৫ বলে ৪৯ রান করে তাঁকে সঙ্গ দেন সানজামুল ইসলাম। ডেথ ওভারে এসে দুজনকেই আউট করেন আবু হায়দার। ২ উইকেটের পাশাপাশি ক্যাচ ও রান আউটেও ম্যাচের ছবিটা পাল্টে দিয়েছেন এই বাঁহাতি। তাঁর বোলিং-ফিল্ডিংয়ের সৌজন্যে ৪৮.৫ ওভারে ২৮৪ রানে থামে মোহামেডানের ইনিংস।

আরও পড়ুন