‘অর্শদীপও মানুষ, ভুল করতেই পারে’

এশিয়া কাপে কাল পাকিস্তানের বিপক্ষে সহজ ক্যাচ ফেলে দেন অর্শদীপ সিংছবি: টুইটার

জীবনে হয়তো এর চেয়ে সহজ ক্যাচ আর পাবেন না অর্শদীপ সিং। ওই সময় কোনো রান না করেই ব্যাটিং করছিলেন আসিফ আলী। রবি বিষ্ণয়ের বলে শর্ট থার্ডম্যানে অর্শদীপের হাতে মোয়ার মতো ক্যাচ তুলেও বেঁচে যাওয়ার পর পাকিস্তান ব্যাটসম্যান খেলেন ৮ বলে ১৬ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস!

ক্যারিয়ারের বাকি সময়ে অর্শদীপ এই দুঃস্বপ্ন ভুলতে পারবেন তো!

ভুলতে পারলে ভালো। তবে ভুলতে যে কষ্ট হবে, তা এরই মধ্যে নিশ্চিত করেছেন ভারতের সমর্থকেরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাঁহাতি এই পেসারকে রীতিমতো ধুয়ে দেওয়া হচ্ছে। ট্রলও হচ্ছে এন্তার।

সাবেক ও বর্তমান কিছু ক্রিকেটার পাশেও দাঁড়িয়েছেন অর্শদীপের। পাকিস্তানের সাবেক অলরাউন্ডার মোহাম্মদ হাফিজ যেমন টুইট করেন, ‘ভারতের সব সমর্থককে অনুরোধ করছি, খেলাধুলায় আমরা ভুল করতেই পারি, আমরা তো মানুষ। এসব ভুলের জন্য দয়া করে কাউকে অপমান করবেন না।’

গত জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা এই ক্রিকেটার সব মিলিয়ে বিদঘুটে এক পরিস্থিতি পার করছেন। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার ম্যাচে ফল নির্ধারণ করে দেওয়ার মতো ভুল করলে কী হতে পারে, সেটাই এখন বুঝছেন অর্শদীপ। তবে এমন পরিস্থিতিতে, অর্থাৎ ভুল করার পর ক্রিকেটারের মনের ভেতর কী চলে, তা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন বিরাট কোহলি।

এশিয়া কাপে পাকিস্তান কাল ৫ উইকেটে জেতার পর ভারতের হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন কোহলি। অর্শদীপ সমর্থন জানিয়ে নিজের একটি অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন সংবাদকর্মীদের সঙ্গে।

কোহলি ক্যারিয়ারের প্রথম চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলেন ২০০৯ সালে। গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে শহীদ আফ্রিদির বলে বাজে শট খেলে আউট হয়েছিলেন। ম্যাচটা ভারত হেরেও যায়। সেই বাজে শট খেলার অনুশোচনা কোহলির মনে এতটাই জেঁকে বসেছিল যে ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারে, এই দুশ্চিন্তায় রাত কাবার করেছিলেন। অর্শদীপও হয়তো ম্যাচের পর এমন পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে গেছেন, যাচ্ছেন। কোহলি শুধু মনে করিয়ে দিয়েছেন, চাপের ম্যাচে যে কেউ ভুল করতে পারে।

বেশি দিন আগের কথা নয়, গত বছর ১১ নভেম্বর টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া–পাকিস্তান ম্যাচ মনে করুন। অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে ১৯তম ওভারে ম্যাথু ওয়েডের ক্যাচ ফেলেছিলেন হাসান আলী। ওয়েড পরে টানা তিন ছক্কায় ফাইনালে তুলেছিলেন অস্ট্রেলিয়াকে। পাকিস্তানি পেসার পরে জানিয়েছিলেন, ‘ক্যাচ মিসের পর দুই দিন ঘুমাতে পারিনি। ক্যাচ ছাড়ার মুহূর্তটা বারবার মনে পড়েছে।’

গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে রোহিত শর্মার ক্যাচ ছেড়েছিলেন তামিম ইকবাল। সেঞ্চুরি তুলে নেন রোহিত। তামিম পরে জানিয়েছেন, ওই ক্যাচ ছাড়ার পর দীর্ঘদিন তাঁকে দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রল ও সমালোচনার শিকার হতে হয়। তামিম নিজেও অনুশোচনায় ভুগেছেন। গত ৩১ জুলাই কমনওয়েলথ গেমস নারীদের ক্রিকেটে বার্বাডোজের বিপক্ষে স্লিপে মোয়ার মতো ক্যাচ ছাড়েন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক মেগ ল্যানিং। ওই ক্যাচটা ধরলে হ্যাটট্রিক হয়ে যেত লেগ স্পিনার অ্যালানা কিংয়ের। ল্যানিং ম্যাচ শেষে বলেছিলেন, ‘মনে হয়েছিল মাটি খুঁড়ে যত দ্রুত সম্ভব ভেতরে ঢুকে যাই।’

অর্শদীপেরও সম্ভবত তেমন কিছু মনে হয়েছে। ক্যাচ ছাড়ার পর তাঁর মুখের দিকে তাকানো যায়নি। তাঁর মনের ভেতরে বয়ে যাওয়া ঝড়টা পরিচিত বলেই পাশে দাঁড়ান কোহলি। ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘যে কেউ ভুল করতে পারে। বড় ম্যাচ আর পরিস্থিতিও খুব চাপের ছিল। মনে আছে নিজের প্রথম চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে প্রথম ম্যাচ ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে। শহীদ আফ্রিদির বলে খুব বাজে শট খেলে আউট হই। (শোয়ার পর) ভোর ৫টা পর্যন্ত দেয় সিলিংয়ে (ছাদ) তাকিয়ে ছিলাম। ঘুমাতে পারিনি। মনে হচ্ছিল, (জাতীয় দলে) আর কখনো সুযোগ পাব না। আমার ক্যারিয়ার শেষ। এমন পরিস্থিতিতে এমন কিছু মনে হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা আগামীকালই ঘুরে দাঁড়াব এবং দলের মেজাজ ভালো থাকলে শেখার সুযোগও থাকে।’

আসিফের ক্যাচ ছাড়লেও পরে তাঁর উইকেটটি নেন অর্শদীপ
ছবি: এএফপি

২০০৯ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সে ম্যাচে আফ্রিদিকে এগিয়ে এসে লং অন দিয়ে মারতে গিয়ে উমর গুলের ক্যাচে পরিণত হন কোহলি। তিনবারের চেষ্টায় ক্যাচটি নিতে সমর্থ হন পাকিস্তানের সাবেক এই পেসার। ২৪ বলে ১৬ রান করে আউট হন প্রায় এক বছরের মতো জাতীয় দলে ঢোকা কোহলি। ৫৪ রানে ম্যাচটা জিতেছিল পাকিস্তান।