পিঁপড়া, ইঁদুর আর পোড়া টোস্ট—ক্রিকেট মাঠে খেলা বন্ধের যত বিচিত্র কারণ
গতকাল ঘন কুয়াশার কারণে ভারত–দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের চতুর্থ টি–টোয়েন্টি কোনো বল ছাড়াই পরিত্যক্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন কিছু নজিরবিহীন। তবে বিচিত্র সব কারণে খেলা বন্ধের অনেক ঘটনা আছে। ক্রিকইনফোর সৌজন্যে তেমনই কিছু মজার ও বিচিত্র ঘটনার খবর জানুন।
উড়ন্ত পিঁপড়ার সেই সন্ধ্যা
সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্ট পার্কে তখন সবকিছু স্বাভাবিকই ছিল। ভারত ব্যাট করে ৬ উইকেটে ২১৯ রান তুলে নিয়েছে। দর্শক অপেক্ষায়, দক্ষিণ আফ্রিকা দারুণভাবে রান তাড়া করবে। কিন্তু খেলোয়াড়রা মাঠে পা রাখতেই বোঝা গেল, দিনটা অন্যরকম।
২০২৪ সালের নভেম্বরের এই ম্যাচটিতে হঠাৎ করেই উড়ন্ত পিঁপড়ার ঝাঁক নেমে এলো মাঠজুড়ে। যেন আমন্ত্রণহীন অতিথি। অর্শদীপ সিং পিঁপড়ার ঝাঁকের মধ্যেই প্রথম ওভারটি করলেন। কিন্তু পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল। পিঁপড়া খেলোয়াড়দের চোখে–মুখে ঢুকে পড়তে পারে, এই আশঙ্কা আর উপেক্ষা করতে পারলেন না আম্পায়াররা। বড় স্ক্রিনে ভেসে উঠল ঘোষণা—উড়ন্ত পিঁপড়ার কারণে খেলা স্থগিত। প্রায় আধা ঘণ্টা পর পিঁপড়ার ঝাঁক পাতলা হয়ে এলে মাঠ পরীক্ষা করে অবশেষে খেলা পুনরায় শুরু করা হয়।
পোড়া টোস্ট
এটি ছিল ২০১৭ সালের নভেম্বরের ঘটনা। অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে জয়ের জন্য নিউ সাউথ ওয়েলসের তখন দরকার মাত্র ১৮ রান। এমন সময়ে ব্রিসবেনের অ্যালান বর্ডার ফিল্ডে অগ্নি-সতর্কতার অ্যালার্ম বেজে ওঠায় প্রায় ৩০ মিনিটের খেলা বন্ধ থাকে।
পরে জানা যায়, কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৭–১৮ শেফিল্ড শিল্ড মৌসুমের তৃতীয় ম্যাচটি প্রত্যাশার চেয়ে একটু বেশি সময় নেওয়ার পেছনে দায়ী ছিল তাদেরই একজন খেলোয়াড়। অস্ট্রেলিয়ান অফ স্পিনার নাথান লায়ন একটি টোস্ট পুড়িয়ে ফেলেছিলেন। এতে যে ধোঁয়া ওঠায় দমকল বাহিনীর গাড়ি মাঠে চলে আসে। শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ খেলার অনুমতি দিলে ম্যাচের বাকি অংশ শেষ করা হয়।
মাঠে সাপ
২০০৯ সালে সিডনির কাছের ব্ল্যাকটাউনে অনূর্ধ্ব–১৭ পর্যায়ের একটি ম্যাচ হঠাৎ থেমে যায়। কারণ মাঠের আউটফিল্ডে ঢুকে পড়েছে একটি ভয়ংকর লাল-পেটওয়ালা কালো সাপ। স্থানীয় সংবাদপত্র জানায়, সাপটি খেলোয়াড়দের বিরক্ত করতে করতে একসময় পিচের দিকেও এগিয়ে আসে। প্রায় ২০ মিনিট বন্ধ থাকে খেলা।
কয়েক বছর আগে, অস্ট্রেলিয়াতেই আরেক ম্যাচে এক ব্যাটসম্যান এমনই একটি বিষধর সাপ দেখে ভয় না পেয়ে উল্টো ব্যাট হাতে এগিয়ে যান। ওই মুহূর্তেই বোলার বল ছুঁড়ে মারছিলেন। ব্যাটসম্পযান সাপটিকে আঘাত করেই সঙ্গে সঙ্গে পেছনে তাকান স্টাম্পড হয়েছেন কি না দেখার জন্য। কিন্তু তাকিয়ে দেখেন পেছনে কেউ নেই। উইকেটকিপার দৌড়ে পালিয়ে গেছেন।
ইঁদুরের দৌড়
১৯৫৭ সালের আগস্টে ক্যান্টারবেরিতে কেন্ট ও হ্যাম্পশায়ারের ম্যাচে হঠাৎ মাঠে দৌড়ে আসে একটি ইঁদুর। খেলা থেমে যায়। কিছুক্ষণ পর ইঁদুরটির মালিক মাঠে ঢুকে টুপির ভেতর সেটিকে তুলে নিয়ে চলে যান। পাঁচ বছর পর ১৯৬২ সালে লর্ডসে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচেও একই দৃশ্য। তখন মাঠে ছিল ক্রিকেটের সবচেয়ে বিখ্যাত বিড়াল পিটার। ইঁদুরটি তার রোষের ঝুঁকি নিয়েই মাঠে ঢুকে পড়েছিল। পিটারই একমাত্র প্রাণী, যার মৃত্যুসংবাদ উইজডেন-এ ছাপা হয়েছিল।
ভাজা ক্যালামারির বল
এই মজার ঘটনাটি ঘটে ১৯৯৪-১৯৯৫ সালের দক্ষিণ আফ্রিকার ক্যাসল কাপে। রজার টেলেমাকাসের বলে ছয় মেরেছিলেন ড্যারেল কালিনান। বল গিয়ে পড়ে এক দর্শকের বারবিকিউর ক্যালামারি স্কুইড ভাজার প্যানের মধ্যে। বল থেকে চর্বি ছাড়ানোর জন্য ঠান্ডা করতেই ১০ মিনিট লেগে যায়। তখন উইজডেন লিখেছিল: ‘ফ্রাইড ক্যালামারি স্টপড প্লে’।
বলও নেই, বেইলও নেই
১৯৮১–৮২ সালে দিল্লিতে ভারত–ইংল্যান্ড টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা শুরুই করা গেল না সময়মতো। কারণ আম্পায়াররা বল রাখা আলমারির চাবি হারিয়ে ফেলেছিলেন। ২০০৯ সালে লর্ডসেও একই রকম ঘটনা ঘটে। মিডলসেক্স ও গ্ল্যামর্গানের ম্যাচে স্টাম্পের বেল পাওয়া যাচ্ছিল না।
বিষয়টি জটিল আকার ধারণ করে, যখন জানা যায় মাঠকর্মীরা বিরতিতে গেছেন। আম্পায়ার গ্যারাটকে তাঁদের খুঁজে বের করে হারানো কাঠের টুকরো দুটি উদ্ধার করতে করতে খেলা শুরু করতে সময় লেগেছে।