গলে প্রথম, গলেই ৫৫০ লায়নের
এই গলেই শুরু হয়েছিল তাঁর গল্পটা।
টেস্ট ক্রিকেটে নিজের প্রথম বলেই উইকেট নিয়ে স্বপ্নের মতো এক শুরু হয়েছিল নাথান লায়নের। সেই উইকেটটাও শ্রীলঙ্কার ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান কুমার সাঙ্গাকারার!
লায়নের স্বপ্নের পথচলা এরপর চলতে থাকল, চলতেই থাকল। প্রায় ১৪ বছর পর কাল সেই গলেই দিনেশ চান্ডিমালকে ফিরিয়ে লায়ন পেলেন টেস্টে নিজের ৫৫০তম উইকেট! এরপর কামিন্দু মেন্ডিস হলেন তাঁর ৫৫১তম শিকার। গ্রাউন্ডসম্যান হিসেবে যাঁর ক্রিকেট মাঠে পথচলার শুরু, তিনি এখন টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি, টেস্ট ইতিহাসেই তাঁর চেয়ে বেশি উইকেট পেয়েছেন মাত্র ছয়জন। ক্রিকেটের কিছু গল্প আসলেই রূপকথার মতো!
টেস্টে প্রথম বলে উইকেট পেয়েছেন এখন পর্যন্ত ২৫ জন বোলার। ১৮৮৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার টম হোরানকে দিয়ে যার শুরু, গত বছর ডিসেম্বরে এই তালিকায় সর্বশেষ নাম তুলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার করবিন বশ। লায়ন ছিলেন তালিকার ১৮তম ক্রিকেটার। তবে এই ২৫ জনের মধ্যে মাত্র ৯ জন ক্যারিয়ারে ১০টির বেশি টেস্ট খেলতে পেরেছেন। এই তালিকায় ১০০ টেস্ট খেলা একমাত্র ক্রিকেটার লায়ন!
শেন ওয়ার্ন ব্যাগি গ্রিনটা তুলে রাখার পর একজন ম্যাচ জেতানো স্পিনারের খোঁজে বেশ কয়েক বছর হাপিত্যেশ করেছে অস্ট্রেলিয়া। তারপর একরকম কাকতালীয়ভাবেই সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ কোচ ড্যারেন ব্যারি খুঁজে বের করেন অ্যাডিলেডের গ্রাউন্ডসম্যান লায়নকে। বিগ ব্যাশ থেকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট, তারপর ২০১১ সালের আগস্টে মাইকেল ক্লার্কের হাত থেকে ব্যাগি গ্রিন ক্যাপ, লায়নের এই অবিশ্বাস্য যাত্রাটা মাত্র সাত মাসের। অন্য অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের যে পথ পেরোতে লাগে বছরের পর বছর।
এই আস্থার প্রতিদান দিতে গিয়ে লায়ন নিরাশ করেননি। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি অস্ট্রেলিয়ার এক নম্বর স্পিনার। এশিয়ান উইকেট বিদেশি স্পিনারদের জন্য চিরকালই এক বড় ধাঁধা। সেই এশিয়ায় একমাত্র বিদেশি বোলার হিসেবে ১৫০ উইকেট লায়নের! এ তালিকায় তিনি শেন ওয়ার্নকে (১২৭) পেরিয়ে গেছেন অনেক আগেই।
এমনকি এশিয়ার মাঠে এশিয়ান বোলারদের মধ্যে মাত্র একজনই প্রতিপক্ষের মাঠে বা নিরপেক্ষ ভেন্যুতে লায়নের চেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন—পাকিস্তানের লেগ স্পিনার ইয়াসির শাহ। তবে ১৫৯ উইকেটে থেমে যাওয়া ইয়াসির যে কিছুদিনের মধ্যেই লায়নের পেছনে পড়ে যাবেন, সেটাও বোধ হয় না বললেও চলে।
বয়স ৩৭ চলছে, এরই মধ্যে লায়ন খেলে ফেলেছেন ১৩৬ টেস্ট। তবে পাঁচবার টেস্টে ১০ উইকেট, ২৪ বার ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া এই স্পিনারের শিগগিরই থামার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের মধ্যে টেস্টে সবচেয়ে বেশি উইকেটশিকারিদের তালিকায় শেন ওয়ার্ন (৭০৮) ও তাঁর মধ্যে আছেন শুধু গ্লেন ম্যাকগ্রা (৫৬৩)। তবে লায়ন যেভাবে এগোচ্ছেন, ম্যাকগ্রাকে তিনে পাঠিয়ে ৬০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলা লায়নের জন্য এখন খুব কঠিন কিছু মনে হচ্ছে না।
লায়নের মাইলফলক ছোঁয়ার দিনটা জয়ের সুবাস নিয়েই শেষ করেছে অস্ট্রেলিয়া। তৃতীয় দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে শ্রীলঙ্কার রান ৮ উইকেটে ২১১। অস্ট্রেলিয়ার একমাত্র ইনিংসের চেয়ে মাত্র ৫৪ রানে এগিয়ে দলটি। শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ ৭৬ রান করেছেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। দলকে ১৯৮ রানে রেখে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরেন ম্যাথুস। শ্রীলঙ্কার শেষ ভরসা হয়ে টিকে আছেন কুশল মেন্ডিস। প্রথম ইনিংসে ৮৫ রানে অপরাজিত থাকা ব্যাটসম্যান দিন শেষে অপরাজিত আছেন ৪৮ রানে। ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলা সাবেক অধিনায়ক দিমুত করুনারত্নে শেষ ইনিংসে করেছেন ১৪ রান।
এর আগে ৩ উইকেটে ৩৩০ রান নিয়ে দিন শুরু করা অস্ট্রেলিয়া অলআউট হয় ৪১৪ রানে। অ্যালেক্স ক্যারির সঙ্গে ২৫৯ রানের জুটি গড়ে স্টিভ স্মিথের বিদায়ের পর আর মাত্র ৬৪ রানই যোগ করতে পারে অস্ট্রেলিয়া। স্মিথ ফিরেছেন ১৩১ রান করে, ক্যারি আউট ১৫৬ রানে। দুটি উইকেটই পেয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারে ১১তম বার ৫ উইকেট নেওয়া লঙ্কান বাঁহাতি স্পিনার প্রবাত জয়াসুরিয়া।