‘বুমরা একধরনের ভ্যাকসিন, দলের অসুস্থতা সারিয়ে তোলে’
২২৮ রান তাড়ায় গুজরাট টাইটানস ১৩ ওভারে তুলে ফেলেছিল ২ উইকেটে ১৪৮ রান। ওভারপ্রতি ১১ রানের বেশি গড় ধরে রেখে দলকে জয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন সাই সুদর্শন ও ওয়াশিংটন সুন্দর। দুজনের জুটিতে ততক্ষণে ৮১ রান উঠে গেছে। মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের সমর্থকদের চোখেমুখে দুশ্চিন্তার ছাপ।
কিন্তু হঠাৎ করেই বদলে গেল গ্যালারির আবহ। বল হাতে নিলেন যশপ্রীত বুমরা। দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে ভাঙলেন সুদর্শন–সুন্দরের জুটি, ঘুরিয়ে দিলেন ম্যাচের মোড়। যে মোড়ের চক্কর থেকে আর বের হতে পারেনি গুজরাট টাইটানস। ২০ রানে ম্যাচ জিতে আইপিএলের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে জায়গা করে নিয়েছে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস।
গতকাল চণ্ডিগড়ের এই ম্যাচে বুমরা শুধু ওই এক ওভারেই নয়, মুম্বাইকে ম্যাচে ফিরিয়েছেন এর আগে–পরেও। কখনো উইকেট নিয়ে, কখনো রান আটকে। আর তাই তো ম্যাচ শেষে ভারতের এক সাবেক ক্রিকেটার বুমরাকে নিয়ে বলেছেন, ‘সে যেন এক প্রতিষেধক, একধরনের টিকা—যা যেকোনো বোলিং দলের যেকোনো অসুস্থতা সারিয়ে তুলতে পারে।’
গুজরাট–মুম্বাইয়ের এলিমিনেটর ম্যাচটিতে দুই দলই তুলেছে দুই শর বেশি রান, মোট ৪৩৬। এমন রানবন্যার খেলায় বুমরা চার ওভার বোলিং করে দিয়েছেন মাত্র ২৭ রান, নিয়েছেন ১ উইকেট। এর মধ্যে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে দেন মাত্র ৪ রান, পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে ১১।
এরপর তাঁকে আবার ফেরানো হয় গুজরাটের রান যখন ১৩ ওভারে প্রায় দেড় শর কাছাকাছি। ১৪তম ওভারে ফিরেই বুমরা দুর্দান্ত ইয়র্কারে বোল্ড করেন ওয়াশিংটন সুন্দরকে, ভাঙেন সুদর্শনের সঙ্গে তাঁর ৮৪ রানের জুটি। ওই ওভারে বুমরার কাছ থেকে মাত্র ৪ রান বের করতে পেরেছে গুজরাট। শেষ দুই ওভারে গুজরাটের দরকার ছিল ৩৩ রান। ওই সমীকরণে দাঁড়িয়ে বুমরা দেন মাত্র ৯।
পুরো ম্যাচে ওভারপ্রতি ১১.২০ গড়ে রান উঠলেও বুমরা দিয়েছেন মাত্র ৬.৭৫ রান করে। এমন বোলিংয়ের পর বুমরাকে নিয়ে প্রশংসার বন্যা বয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক। আকাশ চোপড়া যেমন বলেন, ‘সে একটা ব্রহ্মাস্র, একটা জিনিয়াস। তাঁর মতো বোলার আর একজনও নেই। সৃষ্টিকর্তা কাউকেই বানাননি।’
ম্যাচের শেষে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া বলেন, ‘যখনই ম্যাচ আমাদের নাগাল থেকে বেরিয়ে যেতে ধরে, আমি বুমরাকে বোলিংয়ে আনি। বুমরার ওভার মুম্বাইয়ের বাড়িগুলোর মতোই দামি।’
প্রশংসার এই মিছিলে যোগ দিয়ে সাবেক ক্রিকেটার বরুণ অ্যারন ক্রিকইনফোর টাইমআউটে বলেন, ‘আপনার উইকেট দরকার। সে এসে উইকেট এনে দেবে। আপনার রান আটকানো দরকার, সে আপনার জন্য রান আটকে দেবে। কী দুর্দান্ত এক বোলার।’ ভারতের হয়ে ৯টি করে টেস্ট ও ওয়ানডে খেলা অ্যারন বুমরাকে প্রতিষেধকের সঙ্গে তুলনা টেনে যোগ করেন, ‘সে একধরনের ভ্যাকসিন, যা যেকোনো বোলিং দলের যেকোনো অসুস্থতা সারিয়ে তুলতে পারে।’
সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার ও কোচ টম মুডি টি–টোয়েন্টি ম্যাচে বুমরার কার্যকারিতা তুলে ধরে বলেন, ‘তার ওভার থেকে বেশি রান তোলা অসম্ভব না হলেও খুবই কঠিন। প্রতিপক্ষকে ২০ ওভারের ম্যাচ মূলত ১৬ ওভার ধরে নিয়ে খেলতে হয়।’
গুজরাটকে হারিয়ে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ওঠা বুমরার দল আগামীকাল ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে পাঞ্জাব কিংসের মুখোমুখি হয়। ৩ জুনের ফাইনালে আগেই জায়গা করে নিয়েছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।