বাবা ছয়বারের এমপি, মা তিনবারের: ছেলে এবার মোস্তাফিজের সতীর্থ

সার্থক রঞ্জনইনস্টাগ্রাম

বাবা রাজেশ রঞ্জন ছয়বারের এমপি। মা রঞ্জিত রঞ্জন তিনবারের। মা-বাবার প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিচয়ে ছায়ায় ঢাকা পড়ে গিয়েছিল তাঁর নিজের পরিচয়। সেই ছায়া অবশেষে ভেদ করলেন দিল্লির ব্যাটসম্যান সার্থক রঞ্জন। ২৯ বছর বয়সে প্রথমবার জায়গা পেয়েছেন আইপিএলে, ৩০ লাখ রুপিতে তাঁকে কাল নিলাম থেকে দলে নিয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স।

ভারতের মতো দেশে ক্রিকেটারদের শীর্ষ পর্যায়ে উঠে আসা সহজ নয়। প্রতিভার তো অভাব নেই! তাদের ভিড়ে নিজের নামটা আলাদা করে চেনানোর জন্য বিশেষ কিছু করতেই হয়। সার্থক এমন কিছু করার চেষ্টা করে গেছেন।

তবে এখন পর্যন্ত দিল্লির হয়ে খেলতে পেরেছেন মাত্র দুটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ, চারটি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ এবং পাঁচটি টি-টোয়েন্টি। তবে বয়সভিত্তিক পর্যায়ে রাজ্যের হয়ে তিনি ছিলেন নিয়মিত রান সংগ্রাহক। তবে চারদিকে হইচই ফেলে দেওয়ার মতো কিছু ছিল না। উল্টো মা–বাবার পরিচিতিই তাঁকে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে কি না—এমন আলোচনাও হতো। এবার আইপিএলে দল পাওয়ার হয়তো আর সেই কথা শুনতে হবে না।

যে কারণে ছেলে দল পেতেই এক্সে উচ্ছ্বাস প্রকাশ পোস্ট করেছেন বাবা রাজেশ রঞ্জন। পাপ্পু যাদব নামে পরিচিত বিহারের প্রভাবশালী এই কংগ্রেস নেতা লিখেন, ‘নিজের পরিচয় নিজে গড়ো। এখন সার্থকের নামেই আমাদের পরিচয় হবে।’

ইনস্টাগ্রামে সার্থকের অনুসারী ৫০ হাজারের বেশি। তাঁর এই অ্যাকাউন্টে চোখ রাখলেই বোঝা যায় নিজের পারিবারিক পরিচয় তিনি আড়াল করেন না। বিলাসী গাড়ি ও জীবনযাপনের ছবি পোস্ট করা আছে সেখানে। আর সার্থকের এই জীবনধারা আর প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য হওয়ার বিষয়টি অনেক সময় তাঁর ক্রিকেটার পরিচয়ের চেয়ে বেশি আলোচিত হয়ে ওঠে।

৩০ লাখ রুপিতে সার্থককে কাল নিলাম থেকে দলে নিয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স।
ইনস্টাগ্রাম

টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সার্থক বলেছেন, ‘আমি যদি এসব নিয়ে অভিযোগ করতে শুরু করি যে আমাকে কত কথা শুনতে হয়েছে তাহলে সেটা স্বার্থপরতা হবে। কারণ, আমি সব সময় এভাবেই দেখি, এমন একটা পরিবার পেয়ে আমি ধন্য। এমন পরিবার পেয়ে আমি কৃতজ্ঞ, আর খুব বেশি পরিশ্রম না করেও যেসব সুযোগ আর অর্জন আমার হয়েছে, সেগুলোর জন্যও। আমার মাথার ওপর ছাদ আছে, খাবার আছে, এসব আমি অস্বীকার করতে পারি না।’

একসময় ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন সার্থক। জীবনের এক অন্ধকার সময় পার করেছেন, নিতে হয়েছে সাহায্য। বিষয়টি তুলতেই তিনি বলেন, ‘এখন খুশির সময়। ওটা খারাপ সময় ছিল, ওখানেই থাকুক।’

কয়েক সেকেন্ড পর গভীর শ্বাস নিয়ে তিনি খোলাখুলি বলেন, কীভাবে মা–বাবার সামাজিক অবস্থান তাঁর ক্রিকেটজীবনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, আর কীভাবে ব্যক্তিগত লড়াইয়ের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে তাঁকে।

সার্থক বলেন, ‘তাঁদের উপস্থিতি আমার ক্রিকেটে বড় প্রভাব ফেলেছিল। আমি বলব, সেটা ভালো ছিল না। অনেক সময় মানুষ আমাকে শুধু মা–বাবার কারণেই দেখত। তারা ভাবত, আমি যে পর্যায়ে খেলছি, সেখানে থাকার মতো যথেষ্ট ভালো আমি নই। এর প্রভাব পড়েছিল আমার ওপর। কয়েক বছর আগে মানসিক সমস্যাতেও ভুগেছি। তবে আমি কৃতজ্ঞ, এমন একটা জীবন পেয়েছি বলে। এগুলো ছিল শিক্ষা, ঈশ্বর এসবের মাধ্যমে আমাকে শেখাতে চেয়েছেন। তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।’

আইপিএলে প্রথমবার দল পাওয়া নিয়ে দিল্লির এই ব্যাটসম্যান বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি খুবই খুশি আর ভীষণ কৃতজ্ঞ। আমার পাওনা কী, সেসব নিয়ে ভাবছি না। সবকিছু নিজের সময়েই আসে। ঈশ্বর আমাকে এই সুযোগ দিয়েছেন, এটাই আমার জন্য সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।’

আরও পড়ুন

দিল্লি প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) সার্থক খেলেন নর্থ দিল্লি স্ট্রাইকার্সের হয়ে। এই লিগই তাঁর ক্যারিয়ারে নতুন জীবন দিয়েছে। ডিপিএলের প্রথম মৌসুমে ১০ ইনিংসে তাঁর রান ছিল ২৫২। ঝলক ছিল, কিন্তু ধারাবাহিকতা ছিল না। দ্বিতীয় মৌসুমে চিত্রটা বদলে দেন তিনি। ৯ ম্যাচে করেন ৪৪৯ রান, করেন একটি সেঞ্চুরি ও চারটি হাফ সেঞ্চুরি। এই পারফরম্যান্সই কলকাতার স্কাউটদের নজর কাড়ে।

সার্থক বলেন, ‘প্রথম মৌসুমের পর বুঝতে পারি, ব্যাটিংয়ে উন্নতি দরকার। ডিপিএলের প্রথম বছর শেষে আমি আয়ুশ বাদনি আর প্রিয়াংশ আর্যর সঙ্গে কথা বলি। ওদের কাছে জানতে চাই আইপিএলে কী হচ্ছে। আমার খেলায় কিছু পরিবর্তন দরকার ছিল, বিশেষ করে ব্যাটিংয়ের কিছু শট আর ফিটনেসে। সারা বছর ধরে এসব নিয়ে কাজ করেছি। ঈশ্বর দয়ালু ছিলেন, এই সুযোগটা পেয়েছি। এই মুহূর্তে এই সাক্ষাৎকার দিতে পারছি, এ জন্যও আমি ভীষণ কৃতজ্ঞ।’

২৯ বছর বয়সী সার্থক অনুপ্রেরণা পান বিরাট কোহলি ও হার্দিক পান্ডিয়ার কাছ থেকে। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই আমাদের সিনিয়রদের কাছ থেকে শিখি। বিরাট কোহলির আমার বড় অনুপ্রেরণা, আর আমি হার্দিক পান্ডিয়ারও বড় ভক্ত। দুজনের কাছ থেকেই স্ট্রাইক রোটেট করা, আবার বড় ছক্কা আর বাউন্ডারি মারা শিখেছি। কীভাবে বোলারকে চাপে ফেলতে হয়, সেটার জন্য নিজের খেলাকে মাথায় রেখে পরিকল্পনা করতে হয়। প্রত্যেক ব্যাটসম্যানই এটা করে। এই ধরনের পরিকল্পনাই আমাকে সাহায্য করেছে।’

আরও পড়ুন