অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ বনাম দি আন্ডারটেকার—হতে হতেও হয়নি

রেসলিংয়ের রিংয়ে দি আন্ডারটেকারের বিপক্ষে লড়াইয়ের সম্ভাবনা ছিল অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফেরছবি: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে বানানো

বক্সিং, রেসিং, ফ্যাশন ডিজাইনিং, অভিনয়, মডেলিং, প্রোগ্রাম হোস্টিং—ক্রিকেট ছাড়ার পর কত কিছুতেই জড়িয়েছেন অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ। তবে ক্রিকেটের পর সাবেক বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে পেশাদার বক্সার হিসেবেই মানুষ বেশি চিনতেন।

যদিও ক্রিকেট থেকে অবসরের কিছুদিন পর কুস্তিগির হওয়ার ইচ্ছা জেগেছিল ফ্লিনটফের। ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেইনমেন্টের (ডব্লুডব্লুই) সঙ্গে ‘লোভনীয়’ চুক্তিটা প্রায় করেই ফেলেছিলেন। চুক্তি হলে রেসলিং কিংবদন্তি দি আন্ডারটেকারের বিপক্ষে রিংয়ে লড়তে দেখা যেত তাঁকে।

‘স্টিক টু ক্রিকেট’ পডকাস্টে অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ
ছবি: ইউটিউব ভিডিও থেকে

কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফ্লিনটফ চুক্তি না করায় আন্ডারটেকারের সঙ্গে লড়াই হতে হতেও হয়নি। ইউটিউব চ্যানেল দ্য ওভারল্যাপ ক্রিকেটের ‘স্টিক টু ক্রিকেট' পডকাস্টে পরশু এমনটাই জানিয়েছেন ইংল্যান্ডের সাবেক এই অধিনায়ক।  

বারবার চোটে পড়ার কারণে ২০১০ সালে ৩২ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দেন ফ্লিনটফ। পরে ২০১৪-১৫ মৌসুমে ব্রিসবেন হিটের হয়ে বিগ ব্যাশ লিগে খেলার জন্য সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য অবসর ভেঙে ফেরেন।

আরও পড়ুন

ক্রিকেট ছাড়ার কিছুদিন পরেই ফ্লিনটফকে লোভনীয় চুক্তির প্রস্তাব দেন ডব্লুডব্লুইর সহ–প্রতিষ্ঠাতা ভিন্স ম্যাকমাহন। সেই চুক্তিতে রয়্যাল রাম্বল, রেসলম্যানিয়ায় অংশগ্রহণসহ আন্ডারটেকারের বিপক্ষে লড়াইয়ের বিষয়ও উল্লেখ ছিল। ট্রায়াল দিতে ফ্লিনটফ দুই সপ্তাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোতে ডব্লুডব্লুই পারফরম্যান্স সেন্টারেও গিয়েছিলেন। কিন্তু চুক্তিটা করলে তাঁকে স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যেতে হতো। তাই ম্যাকমাহনের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।

ফ্লিনটফ–আন্ডারটেকার লড়াইটা শেষ পর্যন্ত হয়নি
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

স্টিক টু ক্রিকেট’ পডকাস্টে ফ্লিনটফ বলেছেন, ‘আমি তখন লুকিয়ে থাকতাম আর ভাবতাম, আমি কী করব? সেই সময় কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল থেকেও প্রস্তাব আসতে শুরু করে, যা কখনোই আমার পরিকল্পনায় ছিল না। কারণ, আমি ডব্লুডব্লুইর সঙ্গে চুক্তি প্রায় করেই ফেলেছিলাম। আমি সেই সময় বক্সিংও করতে চাইনি। আমি হয়তো “বিগ ফ্রেড” হয়ে যেতাম।’

আন্ডারটেকারের বিপক্ষে সম্ভাব্য লড়াই নিয়ে ফ্লিনটফ বলেন, ‘আমি তখন দুবাইয়ে ছিলাম, শরীর আনফিট, ওজন বেড়ে গিয়েছিল—খুব একটা ভালো অবস্থায় ছিলাম না। নিজেকে আবারও ফিট করার জন্য অনুপ্রেরণা দরকার ছিল। ছোটবেলায় ডব্লুডব্লুই পছন্দ করতাম। তাই ভাবলাম, ম্যানচেস্টারে আন্ডারটেকারের সঙ্গে লড়ব।’

আরও পড়ুন

৪৭ বছর বয়সী ফ্লিনটফ এরপর বলে যান, ‘আমি একটা প্রস্তাব লিখে স্কাইয়ে (স্কাই স্পোর্টস) জমা দিই। একসময় তা ডব্লুডব্লুইতে পৌঁছায়। ভিন্স ম্যাকমাহনের সঙ্গেও যোগাযোগ হয়। আমার পুরোনো ফিজিও ডেভ রবার্টস তখনো যোগাযোগ ছিল। আমি তাঁকে দুবাইয়ে ছয় সপ্তাহের জন্য একজন ট্রেনার পাঠাতে বলি। আমি কঠিন পরিশ্রম শুরু করি এবং শরীর তৈরি করি। পরে ডব্লুডব্লুই কর্তৃপক্ষ আমাকে ও আমার স্ত্রীকে টাম্পায় (ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের একটি শহর) উড়িয়ে নিয়ে যায়।’

ডব্লুডব্লুই পারফরম্যান্স সেন্টারে ট্রায়াল দিতে গিয়েছিলেন অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ
ছবি: ডব্লুডব্লুই ওয়েবসাইট

ডব্লুডব্লুই পারফরম্যান্স সেন্টারে যাওয়ার পরের অভিজ্ঞতা ফ্লিনটফ বর্ণনা করেছেন এভাবে, ‘টাম্পায় পৌঁছানোর পরদিনই গাড়ি নিয়ে ডব্লুডব্লুই একাডেমিতে যাই। বিশাল বিশাল ইউনিট...বাইরে ৬ ফুট ৮ ইঞ্চির দানবরা হাঁটছিল। তা দেখে আমার স্ত্রী বলল, “তুমি কি ঠিক আছো?” আমি বলি, “হ্যাঁ, ঠিক আছি।” কিন্তু ভেতরে গিয়ে বুঝলাম, কেউ আমাকে পছন্দ করছে না। সে দিন সেখানে ৬০ জন প্রশিক্ষণার্থী ছিল। সবাই ডব্লুডব্লুইর সঙ্গে চুক্তির জন্য লড়ছিল।’

পডকাস্টে ফ্লিনটফ বলে যান, ‘প্রথম দিন তিন ঘণ্টা রিংয়ে শুধু দৌড়াদৌড়ি আর ধাক্কাধাক্কি চলল। দ্বিতীয় দিনেই পিঠে ফাটা দাগ পড়ে গেল। আমার স্ত্রী আবার বলল, “তুমি ঠিক আছো?” আমি তখন আসলে কষ্ট পাচ্ছিলাম। এরপর ফিজিওর কাছে গেলাম। সে যখন পুশ করল, তখনই বুঝলাম এটা ব্যাক স্পাজম (একধরনের পেশির টান) না, পাঁজরের কিছু একটা হয়েছে। এরপর এক্স-রে করাতে গেলাম। ফিল্ম হাতে নেওয়া টেকনিশিয়ান বললেন, “আপনি কী করেন?” আমি বললাম, “রেসলার।” তিনি বললেন, ‘‘কত দিন হলো?’’ বললাম, “দুই দিন।”

ছেলে রকি ফ্লিনটফের সঙ্গে অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ
ছবি: ইসিবি

‘তৃতীয় দিন ছিল অভিনয়ের ক্লাস। ভাবিইনি আমাকে ডাকবে। কিন্তু হঠাৎ ডাক পড়ল: “ফ্রেড, এবার তোমার পালা।” মাইক্রোফোন হাতে সবাইকে দেখিয়ে আমি বলে চললাম। আমাকে দুই মিনিটের মধ্যে থামতে বলছিল, কিন্তু আমি থামছিলাম না।’

আরও পড়ুন

শেষ পর্যন্ত কেন চুক্তি করলেন না, সেই কারণ জানাতে গিয়ে ফ্লিনটফ বলেন, ‘দুই সপ্তাহ পর ডব্লুডব্লুই থেকে ই–মেইল আসে। তারা আমার সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি করতে চায়। টাকার অঙ্কটা ছিল অস্বাভাবিক রকম বেশি। ই–মেইলে এটাও উল্লেখ ছিল, (ডব্লুডব্লুই পারফরম্যান্স সেন্টার) নিয়ে তথ্যচিত্র করা যাবে না। এতে অনেক গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে। ১৮ মাসের মধ্যে তারা আমাকে রয়্যাল রাম্বল আর রেসলম্যানিয়ায় নিতে চেয়েছিল’।

ক্রিকেট ছাড়ার পর পেশাদার বক্সিংয়ে নাম লেখান অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

তিন সংস্করণ মিলিয়ে ২২৭ ম্যাচে ৭৩১৫ রান করা ও ৪০০ উইকেট নেওয়া ফ্লিনটফ আরও বলেন, ‘কিন্তু আমি দুবাইয়ে পরিবারের কাছে ফেরার সিদ্ধান্ত নিই। আমার সন্তানেরাও ক্রিকেট খেলতে চেয়েছিল, আমেরিকায় যেতে চায়নি। তাই পরবর্তী সময়ে আমি বক্সিং বেছে নিই এবং ২০১২ সালে ম্যানচেস্টারে রিচার্ড ডসনের বিপক্ষে আমার একমাত্র পেশাদার লড়াইয়ে অংশ নিই।’