মিক্সড জোনে মিরাজের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

মেহেদী হাসান মিরাজপ্রথম আলো

রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামের প্রেসবক্স দেখে অবাক মেহেদী হাসান মিরাজ। এত বড় আর এত সুন্দর প্রেসবক্স, মাঠটাও এত ভালো দেখা যায় এখান থেকে! এসব বলতে বলতে মিরাজের মুগ্ধতা গড়াল রসিকতায়, ‘এ জন্যই তো আপনারা লিখতে পারেন, ও ভালো ব্যাটিং করে নাই, ও ভালো বোলিং করে নাই, ওর এই সমস্যা…।’

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিতে মিরাজকে মিক্সড জোনে নিয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশ টিম ম্যানেজার রাবীদ ইমাম। রাওয়ালপিন্ডির সুসজ্জিত প্রেসবক্স নিয়ে তাঁর কথা, ‘এই প্রেসবক্সে বসে যদি আপনারা গত বছরের টেস্ট সিরিজটা কাভার করতেন, তাহলে বেশি ভালো লাগত।’

রাওয়ালপিন্ডির মাঠে গত বছরের আগস্টে টেস্ট সিরিজে পাকিস্তানকে ২–০–তে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই স্মৃতি তাজা থাকতে থাকতেই কাল একই মাঠে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি থেকে বাংলাদেশের বিদায় ঘটে গেছে। মিক্সড জোনে মিরাজের কথায় তাই মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একবার ফিরে যান গত বছরের টেস্ট সিরিজে, আরেকবার ফিরে আসেন নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ৫ উইকেটে হারা ম্যাচে।

সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার আগে মিরাজ হেঁটে গেলেন প্রেসবক্সের বাইরের দেয়ালে ঝোলানো রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামের অনার্স বোর্ডের দিকে। অনেকগুলো বোর্ডের মধ্যে তিনি এগিয়ে গেলেন বিশেষ একটির দিকে। গত আগস্টের সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৬১ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন মিরাজ। সেই সূত্রে রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামের অনার্স বোর্ডে নাম আছে তাঁরও। কাছে গিয়ে এই মাঠে ৫ উইকেট পাওয়া বোলারদের তালিকায় নিজের নামটি দেখে একটু যেন স্মৃতিকাতর হলেন তিনি, ‘ও…এখানে…সেই টেস্টটা…।’

রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামের অনার্স বোর্ডে আছে বাংলাদেশের মেহেদী হাসান মিরাজের নামও
প্রথম আলো

শুধু দ্বিতীয় টেস্টে বা বল হাতেই নয়, ব্যাটে–বলে পুরো সিরিজই দারুণ কেটেছিল ম্যান অব দ্য সিরিজ মিরাজের। দ্বিতীয় টেস্টে ৫ উইকেটের সঙ্গে ব্যাট হাতে খেলেছিলেন ৭৮ রানের একটি ইনিংস। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৭৭ রান, সঙ্গে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৫ উইকেট। পিন্ডির অনার্স বোর্ডে নাম আছে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে সেঞ্চুরি করা বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যান লিটন দাসেরও।

সেই সিরিজের স্মৃতি টেনেই মিরাজ ফিরলেন বর্তমানের হতাশায়, ‘এই মাঠে আমাদের ভালো একটা স্মৃতি ছিল। আজকের (গতকাল) ম্যাচটাও বাঁচামরার লড়াই ছিল। জিততে পারলে ভালো সুযোগ ছিল সামনে যাওয়ার। যেহেতু জিততে পারিনি, খারাপ লাগছে। কিছু জায়গায় ভালো করতে পারলে আরও ভালো হতো।’

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের ব্যর্থতার জায়গাগুলো নতুন করে এল আলোচনায়। বিশেষ করে ৫০ ওভারের মধ্যে ১৮১ বলই (৩০.১ ওভার) ডট দিয়ে ফেলাটা বেশি ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে। পিন্ডির ৩০০ রানের উইকেটেও তাই বাংলাদেশ আটকে যায় ২৩৬ রানে।

রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামের অনার্স বোর্ডে মিরাজকে লিটন দাসের নাম দেখাচ্ছেন বাংলাদেশের এক সাংবাদিক
প্রথম আলো

খেলোয়াড়ি দৃষ্টিকোণ থেকে মিরাজ বিস্তারিত ব্যাখ্যাই দিলেন, ‘প্রথম ১০–১১ ওভার ভালোই হচ্ছিল। আমি আউট হওয়ার পর চাপ বেশি হয়ে গেল। উইকেট যেহেতু ভালো ছিল, হৃদয় চিন্তা করেছে সেট হয়ে ইনিংস গড়বে। কিন্তু ওই সময় ডট বলে বেশি হয়ে যায়, রান বের করারও চাপও বেড়ে যায়। এ জন্য দ্রুত তিন উইকেট পড়ে যায়। আমরা আরও চাপে পড়ে যাই।’ মিরাজের আফসোস, ‘৩০০–৩১০ রান করলে ম্যাচটা জিততে পারতাম। উইকেটে শেষ দিকে বল লো হচ্ছিল, টার্ন করছিল। আমরা শুরুতে উইকেট ফেলে দিয়েছিলাম। আরও রান করলে ভালো হতো।’ ২৩৬ রান করার পর ৩০০–৩১০ রান করতে না পারা নিয়ে আফসোস অবশ্য একটু কানে লাগে।

আরও পড়ুন

নিউজিল্যান্ডের মাইকেল ব্রেসওয়েলই এদিন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের বেশি ভুগিয়েছেন। ২৬ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন এই অফ স্পিনার। যদিও ব্রেসওয়েলের উইকেটগুলো আসলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদেরই দেওয়া ‘উপহার’। তাঁকে মেরে খেলতে গিয়ে খেসারত দিতে হয়েছে ভুল শটের। ব্রেসওয়েল অফ স্পিনার বলে ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের তাঁকে খেলতে সুবিধা হওয়ার কথা।

গত আগস্টের সিরিজে সেঞ্চুরি করে রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামের অনার্স বোর্ডে নাম তুলেছেন লিটন দাসও
প্রথম আলো

মিরাজ জানান, সে জন্যই তাঁরা ঠিক করেছিলেন ব্রেসওয়েলের ওপর চড়াও হবেন। কিন্তু হিতে বিপরীত হলো। মারতে গিয়ে একে একে আউট হতে থাকলেন মুশফিক, মাহমুদউল্লাহরা। ডট বলের চাপও বাড়াতে থাকে সেটা। মিরাজ বলছিলেন, ‘আমি বা হৃদয় আউট না হলে অন্য রকম হতো। ডানহাতি হওয়ায় আমার জন্য সহজ হচ্ছিল। আমি তো ওকে (ব্রেসওয়েল) মেরেছিও। আউট না হলে পরের ব্যাটসম্যানদের জন্য আরও সহজ হতো।’ মিরাজদের আফসোস, রাওয়ালপিন্ডির সুখস্মৃতিতে এখন থেকে এক ফোঁটা বিষাদও রেখে দেবে।

আরও পড়ুন