নীরবতা ভেঙে পাকিস্তানের চাকরি ছাড়ার কারণ জানালেন কারস্টেন
বর্তমান কোচ মাইক হেসনের অভিজ্ঞতা এখন পর্যন্ত কেমন, এখন সেটাই জানার বাকি। পাকিস্তানের প্রধান কোচ হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে যেকোনো বিদেশি কোচের অভিজ্ঞতা ভালো ছিল না!
গত ডিসেম্বরে পাকিস্তানের কোচের পদ ছাড়ার পর দেশটির ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) বিরুদ্ধে একগাদা অভিযোগ আনেন জেসন গিলেস্পি। তাঁর প্রায় দুই মাস আগে পদত্যাগ করেন সাদা বলের কোচ গ্যারি কারস্টেন।
২০১১ সালে ভারতকে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতানো কোচ কারস্টেন পাকিস্তান ক্রিকেটকেও বদলে দিতে চেয়েছিলেন। সেই লক্ষ্যে গত বছরের এপ্রিলে বাবর–রিজওয়ান–আফ্রিদিদের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি ছিল পিসিবির। কিন্তু ৬ মাস যেতেই পদত্যাগ করেন।
কারস্টেন হঠাৎ কেন দায়িত্ব ছেড়েছিলেন, তা নিয়ে নানাজনে নানা রকম কথা বলেছেন। যদিও কারস্টেন দীর্ঘ দিন চুপ ছিলেন। তবে সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে নীরবতা ভেঙেছেন ৫৭ বছর বয়সী এই দক্ষিণ আফ্রিকান। সম্প্রতি উইজডেন ক্রিকেট প্যাট্রিয়ন পডকাস্টে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, পাকিস্তান ক্রিকেটের টালমাটাল অবস্থা দেখে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
নতুন নির্বাচক কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর দল নির্বাচনপ্রক্রিয়া থেকে গিলেস্পি–কারস্টেন দুজনকেই সরিয়ে দেয় পিসিবি। তখন বিষয়টি নিয়ে লাল দলের কোচ গিলেস্পি বিস্ময় ও হতাশা প্রকাশ করেন প্রকাশ্যেই। কার্স্টেন তখনো প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি। অবশেষে কারস্টেনও জানালেন, তিনিও ভীষণ অসন্তুষ্ট ছিলেন।
কারস্টেন বলেছেন, ‘কয়েকটা মাস খুব অস্থির ছিল। আমি দ্রুতই বুঝতে পেরেছিলাম পাকিস্তানের কোচ হিসেবে আমার খুব বেশি প্রভাব থাকবে না। যখন আমাকে দল নির্বাচনপ্রক্রিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো এবং (নিজের পছন্দ অনুযায়ী) দল গঠন করতে পারলাম না, তখন কোচ হিসেবে দলের ওপর ইতিবাচক প্রভাব রাখা আমার জন্য খুব কঠিন হয়ে পড়েছিল।’
কারস্টেনের পদত্যাগের মাস দেড়েক পর দায়িত্ব ছাড়েন গিলেস্পিও। তাঁদের বিদায়ের পর দেশটির সাবেক পেসার আকিব জাভেদকে অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয় পিসিবি। পরে গিলেস্পি অভিযোগ করে বলেন, তাঁকে ও কারস্টেনকে সরিয়ে কোচের দায়িত্ব নিতে আড়ালে অনেক কিছু করেছেন আকিব। তাঁকে সরাসরি ভাঁড় বলেও অভিহিত করেন গিলেস্পি।
আকিবের কোচিংয়ে সর্বশেষ পাঁচ সিরিজের একটিও জিততে পারেনি পাকিস্তান। আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তো ভরাডুবি হয়েছে।
সম্প্রতি আকিবকে সরিয়ে মাইক হেসনকে সাদা বলের প্রধান কোচের দায়িত্ব দিয়েছে পিসিবি। হেসন প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই সফল হয়েছেন। সম্প্রতি নিজেদের মাঠে টি–টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশকে ৩–০ ব্যবধানে ধবলধোলাই করেছে পাকিস্তান।
সব মিলিয়ে পাকিস্তান ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থা আগের তুলনায় ভালো। টালমাটাল পরিস্থিতি অনেকটাই কেটে গেছে। তাই প্রস্তাব পেলে কারস্টেন আবারও পাকিস্তান দলকে কোচিং করাতে চান। তবে সে ক্ষেত্রে কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছেন তিনি, ‘আগামীকাল যদি আমাকে আবার পাকিস্তানে আমন্ত্রণ জানানো হয়, আমি যাব। তবে আমি খেলোয়াড়দের পক্ষে কাজ করতে চাই এবং সঠিক পরিস্থিতিতে যেতে চাই।’
কারস্টেন আরও বলেন, ‘ক্রিকেট দলগুলোকে অবশ্যই ক্রিকেটের লোকদের দিয়ে চালাতে হবে। যখন সেটা হয় না এবং যখন বাইরে থেকে প্রচুর কথা হয়, তখন দলের নেতৃত্বে থাকাদের পক্ষে যাত্রাটা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। অন্য এজেন্ডা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমি এখন অনেক বয়স্ক মানুষ। আমি শুধু একটি ক্রিকেট দলকে কোচিং করাতে চাই, খেলোয়াড়দের সঙ্গে কাজ করতে চাই। আমি পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের পছন্দ করি, তারা ছেলে হিসেবে দারুণ। কিন্তু তাদের সঙ্গে বেশি দিন কাজ করতে পারিনি।’