আলোর মুখ দেখল আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা, বিসিবির হাতে ‘দিকনির্দেশনা’র দায়িত্ব

বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানছবি: প্রথম আলো

বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) গঠনতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ দুটি পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হয়েছে আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থার কাঠামো। ক্লাবপর্যায়ে কাউন্সিলরশিপ দেওয়ার পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে প্রতিটি ক্রিকেট ক্লাবকে আনা হয়েছে একই সমতায়।

আজ রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠেয় বার্ষিক সাধারণ সভায় দুটি বিষয়েই অনুমোদন পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান।

২০১৩ সালে বিসিবি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিকেন্দ্রীকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিলেন নাজমুল হাসান। অবশেষে সেটি আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। এজিএমে অনুমোদন পাওয়ায় বহুল আলোচিত আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা গঠনে বিসিবির আর কোনো বাধা রইল না।

সোনারগাঁও হোটেলে বিসিবির বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়
ছবি: প্রথম আলো

এজিএম শেষে বিসিবি প্রধান সাংবাদিকদের এ ব্যাপারে বলেছেন, ‘এত দিন আমরা ঢাকা থেকে সব নিয়ন্ত্রণ করে এসেছি। এখন ঢাকা থেকে বিভাগে যাচ্ছি। জেলায় তো আমাদের আরও কম নিয়ন্ত্রণ ছিল। এখন এর কার্যক্রম শুরু হয়ে গেল, এসব ক্ষেত্রে আমরা আরও ভালো করতে পারব। আশা করছি আমাদের পরবর্তী বোর্ড সভার আগেই কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে।’

রাজশাহী, সিলেট, ময়মনসিংহ, বরিশাল, ঢাকা, রংপুর, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের কাউন্সিলর-পরিচালকদের দিয়ে তৈরি হবে ৭টি আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা। ময়মনসিংহ থাকবে ঢাকার অধীনে। বড় বিভাগের জন্য ১৭ জন সদস্য ও ছোট বিভাগের জন্য ১১ জন সদস্য থাকবে বলে জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি।

তবে প্রতিটি বিভাগ স্বতন্ত্র ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে কি না, সেটি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ, আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থার সদস্য নির্বাচন ও বাছাইয়ের কাজটা করবে বিসিবিই। নাজমুল হাসান অবশ্য বলছেন, এজিএমে কাউন্সিলররাই বিসিবিকে প্রাথমিকভাবে কাঠামো গঠনের কাজটা করতে বলেছেন। তাঁর কথা, ‘আপাতত প্রাথমিক দিকনির্দেশনাটা বিসিবিই তৈরি করবে। এই দায়িত্বটা বিসিবিকে দেওয়া হয়েছে।’

সভায় বিসিবির কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন
ছবি: প্রথম আলো

এ ছাড়া এখন থেকে ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের প্রতিটি দলকে একটি করে কাউন্সিলরশিপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০১৩ সালের সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সুপার লিগের ছয়টি দল থেকে দুজন করে প্রতিনিধি ও বাকি ছয় দল থেকে একজন করে বিসিবির কাউন্সিলর হতে পারতেন। প্রথম বিভাগে অংশগ্রহণকারী ২০টি ক্লাবের প্রতিটির জন্য একজন করে কাউন্সিলরশিপের বিধান বহাল রাখা হয়।

দ্বিতীয় বিভাগের ২৪ ক্লাবের মধ্যে সুপার লিগে উন্নীত ১২টি ক্লাব পেত একজন করে কাউন্সিলরশিপ। তৃতীয় বিভাগের ২০ ক্লাবের মধ্যে সুপার লিগে উন্নীত আটটি ক্লাব পেত কাউন্সিলরশিপ। এখন সব ক্লাব থেকেই একজন করে কাউন্সিলর রাখা হবে।

প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ ক্লাবগুলো কাউন্সিলরশিপ কমে যাওয়ায় বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নেয়নি। এ কথা জানিয়ে নাজমুল হাসান এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম আবাহনী, মোহামেডান বাদে শক্তিশালী দল হোক। এখন প্রত্যেকটা ক্লাবই শক্তিশালী। প্রতিবার তো আবাহনী-মোহামেডান ফাইনাল খেলে না। এখন নতুন নতুন দল আসছে। প্রাইম ব্যাংক, শেখ জামাল, রূপগঞ্জ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এটাই তো আমাদের লক্ষ্য ছিল। এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট এমন একটা জায়গায় এসেছে ক্লাবগুলোর প্রত্যেকটিকে একটি করে কাউন্সিলরশিপ দিলে কারও কোনো ক্ষোভ থাকার কথা না। বরং সবার খুশি হওয়ার কথা। ওখানে যারা ছিল, প্রত্যেকেই এটাকে স্বাগত জানিয়েছে এবং খুশি হয়েছে। তবে যাদের কাউন্সিলরশিপ কমেছে, তারা তো সন্তুষ্ট হওয়ার কথা না।’

এজিএমে নিয়মিত কার্যক্রম তো ছিলই। এ ছাড়া বাংলাদেশ টাইগার্স ও ওয়েলফেয়ার নামে দুটি নতুন বিভাগ যোগ করেছে বিসিবি। এর মধ্যেই টাইগার্সের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। ওয়েলফেয়ারের কাজও চলছে অনেক দিন ধরে। সেগুলো আরও গতিশীল করতে দুটি বিভাগকে কাঠামোগত রূপ দেওয়া হয়েছে এবারের এজিএমে।