ভারতের বিপক্ষে ফিনিশার কে—জাকের না নুরুল

দুজনের মধ্যে দল কার ওপর বেশি ভরসা করে, সেটা এশিয়া কাপে তাদের ম্যাচ খেলার পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। নুরুল হাসান খেলেছেন একটি ম্যাচ। জাকের আলী খেলেছেন চারটি। অর্থাৎ ছয়ে ফিনিশারের ভূমিকায় জাকেরের ওপরই বেশি নির্ভর করে দল।

তবে নুরুল যে ভরসাহীন নন, সেটার প্রমাণ আছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে শেষ দিকে ৬ বলে ১২ রানে অপরাজিত থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। কিন্তু দল বিপর্যয়ে পড়লে লড়াই টেনে নেওয়া কিংবা প্রয়োজনের সময় ছক্কা হাঁকানোর সামর্থ্যে জাকের এগিয়ে। মাত্র দুই বছরের ক্যারিয়ারেই বহুবার তা দেখিয়েছেন তিনি। ছক্কার সংখ্যাই প্রমাণ—নয় বছরে ৪৮ ম্যাচ খেলে নুরুলের ছক্কা ১৮টি, আর জাকেরের ৪০ ম্যাচে ৩৮টি।

কিন্তু আজ ভারতের বিপক্ষে সুপার ফোরের ম্যাচে বাংলাদেশের সমস্যা অন্য জায়গায়।

ফাইনালের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে এই ম্যাচ জেতা চাই। তার জন্য দরকার ফর্মে থাকা একজন ফিনিশার। নুরুল এক ম্যাচে ছোট্ট ‘ক্যামিও’ খেললেও ভারতের মতো শক্ত প্রতিপক্ষের বিপক্ষে তা যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি তিনি ৮-১০ ওভার ধরে দলকে টানতে পারবেন কি না, সেই প্রশ্নও আছে।

জাকেরের অবস্থা আরও জটিল। এশিয়া কাপে চার ম্যাচ খেলে এখনো একটি ছক্কাও মারতে পারেননি! ৪ ইনিংসে করেছেন ৬২ রান, স্ট্রাইক রেট ১১৯.২৩। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৪১ রানের ইনিংসই তাঁর সেরা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তো ইনিংসের শেষ ১১ বলেই খেলেছেন চারটি ডট। অপরাজিত থেকেছেন ১৩ বলে ১২ রানে। সেই ব্যাটিং নিয়েই হয়েছে প্রবল সমালোচনা। ভারতের বিপক্ষে চাপের ম্যাচে যদি আবার খোলস ছেড়ে বেরোতে না পারেন, তবে বিপদ আরও বড়!

জাকের আজ খেললে দ্রুত রান তোলার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে
এএফপি

টিম ম্যানেজমেন্ট নিশ্চয়ই তাঁদের ভারতের বিপক্ষে আগের পারফরম্যান্সও দেখবে। জাকের চার ম্যাচে করেছেন মাত্র ৩৪ রান, গড় ১১.৩৩, স্ট্রাইক রেট ৮২.৯২। নুরুল খেলেছেন একটি ম্যাচ, করেছেন ২৫ রান, স্ট্রাইক রেট ১৭৮.৫৭। চাইলে আমিরাতে তাঁদের পরিসংখ্যানও দেখা যায়। সেখানে নুরুল ৪ ইনিংসে করেছেন ৮২ রান, গড় ৮২, স্ট্রাইক রেট ১৩৮.৯৮। জাকেরের সংগ্রহ ৩ ইনিংসে ৭২ রান, গড় ২৪, স্ট্রাইক রেট ১৩৩.৩৩।

আরও পড়ুন

ভারতের বোলারদের বিপক্ষেও তুলনা করে দেখা যায়। অর্শদীপ সিং ও বরুণ চক্রবর্তীর বলে এর আগে আউট হয়েছেন জাকের। এ দুজনেরই আজ ভারতের একাদশে থাকার সম্ভাবনা প্রবল। নুরুল ভারতের বিপক্ষে যে এক ম্যাচ খেলেছেন, তাতে তাঁকে আউট করতে পারেনি কেউ।

নুরুল খেললে তাঁকেও দ্রুত রান তোলার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে
প্রথম আলো

ব্যাটিংয়ের ধাঁচেও দুজন আলাদা। নুরুল দ্রুত রান তুলতে চান। তবে ক্রিজে তাঁকে একটু অস্থির মনে হয়। প্রচুর নড়াচড়া করেন, সম্ভবত বোলারের লাইন-লেংথ নষ্ট করার জন্য। নিখাদ পাওয়ার হিটিংয়ের চেয়ে স্টাম্পের পেছন দিয়ে ‘চিকি শট’ খেলায় তাঁর আগ্রহ বেশি। জাকের তুলনায় বেশি ব্যাটসম্যানসুলভ। ইনিংস টানতে যেমন পারেন, মারতেও পারেন। তবে নুরুলের মতো তিনিও ক্রিজে নড়াচড়া করেন। বল মারার জন্য তাঁর আলাদা এক স্ট্যান্স আছে—চেস্ট ওপেন স্ট্যান্স। কিন্তু এর ঝুঁকিও আছে। অফ স্টাম্পের বাইরে ইয়র্কার লেংথের বলে সুবিধা করে ওঠা কঠিন। ভারতের বোলাররা ভিডিও অ্যানালিস্টের সহায়তায় সেটা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন।

তবে ভারতেরই সাবেক ক্রিকেটার রোহান গাভাস্কার বাজি ধরেছেন জাকেরের পক্ষেই। ‘ক্রিকবাজ’-এ তিনি বলেছেন, ‘জাকের আলীর দিকে আমি নজর রাখব। দল যখন বিপদে পড়ে, সে এসে পরিস্থিতি সামলায়। রান করে, স্কোরটাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক বানায়।’

ফিনিশারের ভূমিকায় বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট এখন কাকে খেলায়, সেটাই দেখার বিষয়।

আরও পড়ুন