পাকিস্তানের সঙ্গে কোথায় খেলবে, কোথায় খেলবে না—জানাল ভারত সরকার
ভারত আছে, পাকিস্তানও আছে—এমন যেকোনো ক্রীড়া আসর সামনে এলেই দুই দেশ একে অপরের বিপক্ষে খেলবে কি না, শুরু হয় সেই আলোচনা। প্রায় সব খেলার ক্ষেত্রেই এমনটা দেখা গেলেও দুই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেটে এটা বেশি হয়।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) ও এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের সঙ্গে না খেলা নিয়ে ভারতে নিয়মিতই ওঠে বিতর্কটা। এ বিষয়ে ভারত সরকার এত দিন স্পষ্ট কোনো অবস্থান জানায়নি।
অবশেষে আজ পাকিস্তানের সঙ্গে ভারত কখন, কোথায় খেলবে অথবা খেলবে না, এ–সংক্রান্ত নীতিগত অবস্থান তুলে ধরেছে ভারত। দেশটির যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘ভারতের আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আসরসংক্রান্ত নীতি’তে পাকিস্তানের সঙ্গে খেলা নিয়ে অবস্থান তুলে ধরা হয়।
বিবৃতির শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পৃক্ত খেলাধুলার ইভেন্টের প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি দেশটির সঙ্গে ভারতের সামগ্রিক নীতিরই প্রতিফলন। যেখানে একে অপরের দেশে দ্বিপক্ষীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার বিষয় রয়েছে, সেখানে ভারতীয় দলগুলো পাকিস্তানে প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে না। একইভাবে পাকিস্তানি দলগুলোকেও ভারতে খেলার অনুমতি দেওয়া হবে না।’
দ্বিপক্ষীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সাধারণত ক্রিকেটেই বেশি হয়ে থাকে। ভারত ও পাকিস্তান নিজেদের মধ্যে ২০১৩ সালের পর আর দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলেনি। গত এক যুগে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে শুধু বৈশ্বিক ও মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে। দুই দেশের সীমান্তে অস্থিরতার জেরে এ ধরনের টুর্নামেন্ট ঘিরেও পাকিস্তানের সঙ্গে না খেলার দাবি ভারতে প্রায়ই ওঠে।
তবে এ ক্ষেত্রে ভারত সরকারের অবস্থান হচ্ছে, বহুজাতিক ক্রীড়া আসরে পাকিস্তানের সঙ্গেও অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখা, ‘আন্তর্জাতিক ও বহুজাতিক আসরের ক্ষেত্রে, তা ভারতে হোক বা বিদেশে, আমরা আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থাগুলোর প্রচলিত প্রথা এবং আমাদের নিজেদের ক্রীড়াবিদদের স্বার্থেই পরিচালিত হই। একই সঙ্গে এটি প্রাসঙ্গিক যে ভারত আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আসর আয়োজনের একটি বিশ্বাসযোগ্য ভেন্যু হিসেবে পরিচিত। সে অনুসারে পাকিস্তানি দল বা খেলোয়াড়ের অংশ নেওয়া আন্তর্জাতিক আসরে ভারতীয় দল ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে খেলোয়াড়রাও অংশ নেবেন। একইভাবে, ভারতে আয়োজিত বহুজাতিক ক্রীড়া আসরে পাকিস্তানি খেলোয়াড় ও দলগুলো অংশ নিতে পারবে।’
ভারত সরকার তাদের এই অবস্থান তুলে ধরেছে এশিয়া কাপ ক্রিকেট নিয়ে চলমান আলোচনার মধ্যে। এ বছরের এপ্রিলে পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর পাকিস্তানের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক বিচ্ছিন্নের দাবি ওঠে ভারতে, যার জেরে এবার এশিয়া কাপ আয়োজন নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।
শেষ পর্যন্ত যদিও অনিশ্চয়তা কেটেছে, ঘোষিত সূচিতে একই গ্রুপে ভারত ও পাকিস্তানের ম্যাচও রাখা হয়েছে। তবে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বরের ভারত–পাকিস্তান ম্যাচটি না খেলার দাবি তুলেছেন ভারতের লোকসভার সংসদ সদস্য মালেন্দর রাজন, সাবেক ক্রিকেটার কেদার যাদবসহ অনেকেই।
গত মাসে ভারতের সাবেক ক্রিকেটারদের একটি দল ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নস অব লেজেন্ডস টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের সঙ্গে দুবার ম্যাচ প্রত্যাখ্যান করার পর দাবিটি আরও জোরালো হয়েছে।
তবে ভারত সরকারের নীতিমালায় স্পষ্ট, দুবাইয়ে হতে যাওয়া এশিয়া কাপের ম্যাচটি ভারত প্রত্যাখ্যান করবে না, বহুজাতিক আসরে পাকিস্তানের সঙ্গে সব ম্যাচ তারা চালিয়ে যাবে। এমনকি নিজেদের দেশে আয়োজিত বহুজাতিক আসরেও পাকিস্তানকে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
২০৩৬ সালের অলিম্পিক গেমস আয়োজনে ভারতের যে আগ্রহ, সেটি মাথায় রেখেই এই নীতিগত অবস্থান নেওয়া হয়েছে বলে পরোক্ষ ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, ‘ভারতকে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আসর আয়োজনের জন্য পছন্দের গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে ক্রীড়াবিদ, দলীয় কর্মকর্তা, টেকনিক্যাল কর্মী এবং আন্তর্জাতিক ক্রীড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার লোকজনের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা হবে। আন্তর্জাতিক ক্রীড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার পদাধিকারীদের ক্ষেত্রে, তাঁদের সরকারি মেয়াদকালের জন্য (সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত) অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একাধিকবার প্রবেশযোগ্য ভিসা প্রদান করা হবে। এর ফলে তাঁদের দেশে প্রবেশ ও দেশের ভেতরে চলাচল আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী নির্বিঘ্ন হবে।’