তানভীরের বিশ্বাস ছিল তাঁরা পারবেন

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক তানভীর ইসলামএএফপি

সুযোগ সব সময় আসে না। যখন আসে তখনই তা কাজে লাগাতে হয়। সেটা কীভাবে, তানভীর ইসলাম তার বড় উদাহরণ। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই ম্যাচ জেতানো বোলিং, ৩৯ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ।

কাল কলম্বোর রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কাকে ১৬ রানে হারানোর নায়ক বাংলাদেশ দলের ২৮ বছর বয়সী বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম। শুধু বেশি বয়সে অভিষেকের জন্যই নয়, বাংলাদেশের ক্রিকেটে আরও একটা দিক দিয়ে অনেকের তুলনায় ব্যতিক্রম তিনি। তানভীর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলছেন কখনো বয়সভিত্তিক পর্যায়ে না খেলেই।

ম্যাচ শেষে এ নিয়ে তানভীর বলেছেন, ‘আমি মনে করি না বয়সের সঙ্গে খেলার কোনো সম্পর্ক আছে। যদি ভালো পারফর্ম করি, তাহলে ভালো কিছু হবে, এটাই আমার ভাবনা ছিল। আমি কখনো বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলিনি। আমার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ দিয়ে। আমি ভেবেছি, এটাই হয়তো আমার লক্ষ্যে পৌঁছানোর উপায়। আলহামদুলিল্লাহ, এখন আমার আন্তর্জাতিক ম্যাচেও ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার আছে।’

বোলাররাই মার খায়। তুমি পারবে। রক্ষণাত্মক বোলিং করার দরকার নেই। উইকেট নেওয়ার বল করো।
মেহেদী হাসান মিরাজ, বাংলাদেশ অধিনায়ক
ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই ৫ উইকেট পেলেন তানভীর
এএফপি

নিজের প্রথম ২ ওভারে ২২ রান দিলেও পরে বোলিংয়ে নিয়ন্ত্রণ ফিরে পান কলম্বোর রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামেই ২ জুলাই ওয়ানডে অভিষেক হওয়া তানভীর। প্রথম ম্যাচে ৪৪ রানে ১ উইকেট পাওয়া তানভীর গতকালে বোলিং নিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের বিশ্বাস ছিল ওই রান নিয়েই আমরা জিততে পারব। যখন আমি ২ ওভারে ২২ রান দিয়ে ফেললাম, তখন অধিনায়ক আমার কাছে এসে বললেন, ‘‘বোলাররাই মার খায়। তুমি পারবে। রক্ষণাত্মক বোলিং করার দরকার নেই। উইকেট নেওয়ার বল করো।’’’

গত সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তান সফরে নিজেই নিজের বোলিং অ্যাকশন বদলে ছিলেন তানভীর। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্টের অনেকেই সেটা পছন্দ করেননি। পরে আবার পুরোনো অ্যাকশনে বোলিং করা শুরু করেন। সে সময়ের কথা জানাতে গিয়ে তানভীর বলেছেন, ‘পাকিস্তান সিরিজ চলাকালীন আমি আমার বোলিং অ্যাকশন বদলাই। অনেকে সেটা নেতিবাচকভাবে নেয়, কারণ আমি ২০১৩ সাল থেকে ওই অ্যাকশনেই বল করছিলাম। আমি দ্বিধায় পড়ে যাই, কী করব বুঝতে পারছিলাম না।’ তাঁর সেই দ্বিধা দূর করেছিলেন তাওহিদ হৃদয়, ‘হৃদয় আমাকে বলেছিল, “আগের অ্যাকশনে ফিরে যাও। ওই অ্যাকশনেই তুমি তানভীর হয়েছ, ওটাই তোমার সফলতার পথ।” তারপর আমি আবার আগের অ্যাকশনে ফিরে যাই।’

সংবাদ সম্মেলনে তানভীরের পাশেই বসা ছিলেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। কাল দ্বিতীয় ওয়ানডে জিতে দল সিরিজে ফিরলেও তিনি যেন পুরোপুরি তৃপ্ত নন, ‘আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি। তবে কিছু জায়গায় আরও ভালো করতে পারতাম। আমরা পুরো ৫০ ওভার ব্যাট করতে পারিনি। আমরা যে জুটি গড়েছিলাম, সেটাকে কাজে লাগাতে পারিনি। মাঝখানে উইকেট হারিয়ে ফেলেছি। যদি সেগুলো না হারাতাম, তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারত।’

৫/৩৯
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সেরা বোলিং এখন তানভীর ইসলামের। আগের রেকর্ড আবদুর রাজ্জাকের, ২০১৩ সালে পাল্লেকেলেতে (৫/৬২)।
আরও পড়ুন

তানভীর তো পাশেই ছিলেন, বোলারদের মধ্যে এ ছাড়া শামীম হোসেনের কথা আলাদা করে বলেছেন অধিনায়ক, ‘শামীম খুব ভালো বল করেছে। ওদের অধিনায়কের গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটা নিয়েছে। আমি তাকে বলেছিলাম, এই উইকেটে স্পিনারদের মারা সহজ নয়। যদি ঠিক জায়গায় বল করো, তাহলে মারতে পারবে না। এই ধরনের উইকেটে খেলা ধরে রাখতে হলে উইকেট দরকার। না হলে জেতা সম্ভব নয়। আমাদের ভালো জায়গায় বল করতে হতো, আর সে সেটা দারুণভাবে করেছে।’

সিরিজে সমতা এনেছে বাংলাদেশ
এএফপি

প্রথম ওয়ানডেতে ৫ রানে ৭ উইকেট হারানোর বিপর্যয় আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। কাল জয়ের পর সেই প্রসঙ্গও টেনেছেন ওয়ানডে অধিনায়ক, ‘আমরা যেভাবে হেরেছিলাম, সেটা মেনে নেওয়া কঠিন ছিল। তবে আমাদের বিশ্বাস ছিল। আমরা জানতাম যে আমরা এখানে ঘুরে দাঁড়াতে পারি।’

ইনিংসের শেষ দিকে তানজিম হাসানের ঝোড়ো ইনিংসের প্রশংসা করে মিরাজ বলেছেন, ‘আজকেও (গতকাল) ব্যাটিংয়ে ভেঙে পড়েছিলাম, কিন্তু আমরা ফিরে এসেছি। যেভাবে তানজিম শেষ দিকে ব্যাট করেছে, সেটা অসাধারণ। ওর রানগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যেভাবে সে হাসারাঙ্গাকে আক্রমণ করেছে, সেটা আমাদের জয়ের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়, কারণ ২২০ আর ২৫০—এই দুটো এক নয়। দলের সবাই বিশ্বাস করেছিল যে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব।’

আরও পড়ুন

বাংলাদেশের জয়ে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যান জানিত লিয়ানাগে। তাঁর ৮৫ বলে ৭৮ রানের ইনিংসটা বাংলাদেশের জয় প্রায় ছিনিয়েই নিয়ে যাচ্ছিল। ৪৮তম ওভারে মোস্তাফিজুর রহমানের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লিয়ানাগে, জয় থেকে শ্রীলঙ্কা তখন মাত্র ২১ রান দূরে।

জানিত লিয়ানাগের তোলা ফিরতি ক্যাচ নিচ্ছেন মোস্তাফিজুর রহমান
এএফপি

ম্যাচ শেষে মোস্তাফিজের প্রশংসা করে লিয়ানাগে বলেন, ‘আমরা জানি, মোস্তাফিজ কতটা ভালো বোলার। আইপিএলে খেলে, অভিজ্ঞ বোলার। তাকে খেলা সব সময়ই কঠিন। আমি তার বলে ঝুঁকি নিতে চাইনি। মোস্তাফিজকে কৃতিত্ব দিতেই হবে।’

শুধু মোস্তাফিজ কেন, ব্যাট করতে গিয়ে লিয়ানাগের কাছে বাংলাদেশের সব বোলারকে খেলাই কঠিন মনে হয়েছে। তবে তাঁর আশা, ক্যান্ডির শেষ ম্যাচ জিতে সিরিজ জিতবে শ্রীলঙ্কাই।