যেসব কাণ্ডে এবারের বিপিএলকে আপনার মনে রাখতেই হবে
৪০ দিনব্যাপী টি–টোয়েন্টির উৎসব শেষ হয়েছে গত পরশু। টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জিতেছে ফরচুন বরিশাল। ঘটন–অঘটন তো অনেকই হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত পাঁচ বেছে নিয়েছে প্রথম আলোর ক্রীড়া বিভাগ।
দুর্বার রাজশাহী
কখনো ক্রিকেটারদের অনুশীলন বর্জন, কখনো বিদেশিই ছাড়া খেলতে নামা—ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক না দেওয়া নিয়ে এবার নজিরবিহীন সব ঘটনা ঘটিয়েছে দুর্বার রাজশাহী। এবারের বিপিএলের নতুন দুই ফ্র্যাঞ্চাইজির একটি ছিল তারা। তবে নেতিবাচক খবরের শিরোনামের শীর্ষস্থানটা একাই দখলে রেখেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে গেলেও চুক্তি অনুযায়ী ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক দিতে পারেনি।
বেঁধে দেওয়া শেষ সময় ১০ ফেব্রুয়ারিতেও পারছে না বলেই জানা গেছে। ‘সরকারি ছুটি’র কারণ দেখিয়ে আরও ১০ দিন বাড়তি সময় চেয়ে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে দুর্বার রাজশাহীর মালিকপক্ষ। বিপিএলের মাঝপথে অধিনায়কও বদলে ফেলেছে তারা, এনামুল হকের জায়গায় দায়িত্ব দিয়েছে তাসকিন আহমেদকে। এত কিছুর পরও টুর্নামেন্ট শেষ করেছে পঞ্চম হয়ে, লিগ পর্বের শেষদিন অবধি টিকে ছিল প্লে অফে খেলার সম্ভাবনাও।
স্পট ফিক্সিং
ফিক্সিংয়ের কথা এখন প্রায় সব ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ এলেই শোনা যায়। এমন নয় যে বিপিএলে এর আগে এমন ঘটনা ঘটেনি, ফিক্সিংয়ের জন্য ক্রিকেটারদের নিষিদ্ধ হওয়ার ঘটনাও আছে এই টুর্নামেন্টে। তবে এবার বলতে গেলে পুরো বিপিএল জুড়েই আলোচনায় ছিল ফিক্সিং।
কিছু ওভারে বোলারদের ব্যাখ্যাতীত বোলিং, ওয়াইডের ধরন—অনেক ম্যাচেই এমন কিছু কাণ্ড সন্দেহের উদ্রেক ঘটিয়েছে। এমনকি কয়েকজন ক্রিকেটারের নাম সামনে চলে আসার পর কাউকে কাউকে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেও বিবৃতি দিতে হয়েছে। সবকিছুর স্বচ্ছতার স্বার্থে একজন বিচারপতি, একজন আইনজীবী ও সাবেক ক্রিকেটারকে নিয়ে ফিক্সিং ইস্যুতে স্বাধীন তদন্ত কমিটিও করেছে বিসিবি। এক মাসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দেওয়ার কথা।
চেনা মুখের জয়-জয়কার
বিপিএলের আগে জাতীয় ক্রিকেট লিগ টি-টোয়েন্টিতে আলো কেড়েছিলেন তরুণ তুর্কিরা। জিশান আলম, আরিফুল ইসলাম, আজিজুল হাকিম, আহমেদ শরীফ, রাকিবুল হাসানরা শিরোনাম হয়েছিলেন মাঠের পারফরম্যান্স দিয়ে। কিন্তু বিপিএলে কোনো ছাপই রাখতে পারেননি তাঁরা। ব্যাটসম্যান ও বোলারদের শীর্ষ দশে পরিচিত ও অভিজ্ঞ নামেরই ভিড়। ব্যাটিংয়ের শীর্ষ দশের নয়জনই কোনো না কোনো সময় খেলেছেন বাংলাদেশ দলে। ব্যতিক্রম যে একজন, তিনি আবার বিদেশি—গ্রাহাম ক্লার্ক।
চিটাগং কিংসের ইংলিশ ব্যাটসম্যান ৪৩১ রান করে ব্যাটিংয়ের তিনে থেকে শেষ করেছেন। বোলিংয়েও বাংলাদেশের জার্সিতে খেলেছেন এমন বোলার ছয়জন, আলিস আল ইসলাম আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেললেও ডাক পেয়েছেন জাতীয় দলে। সেরা দশের অন্য তিনজন পাকিস্তানের। পরিসংখ্যানে স্থানীয়দের আধিপত্যের প্রধান কারণ অবশ্য ভালো মানের বিদেশির অনুপস্থিতি। যাঁরা এসেছেন, তাঁদেরও বেশির ভাগকেই পুরো সময়ের জন্য পায়নি দলগুলো।
রান–উৎসব
নকআউট পর্ব শুরুর আগেই ছক্কার রেকর্ডটা হয়ে গিয়েছিল। সেঞ্চুরির রেকর্ডটাও নতুন করে লেখা হয়ে যায় প্রথম পর্বেই। ব্যাটসম্যানদের আধিপত্যের বিপিএলে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ডটা ভেঙেছে ফাইনালে। মিরপুরে ফরচুন বরিশাল-চিটাগং কিংস ফাইনালে সবচেয়ে বেশি ৫০ ছাড়ানো ইনিংসের রেকর্ডও ছুঁয়েছে এবারের বিপিএল। এবারের বিপিএলে মোট রান হয়েছে ১৪৬৪২।
আগের রেকর্ডটা ছিল ২০১৯-২০ মৌসুমের—১৪৪৯৬। সেই মৌসুমের ওভারপ্রতি রানের রেকর্ডটাও ভেঙেছে এবারের বিপিএলে। এবার ওভারপ্রতি রান উঠেছে ৮.৫০, ২০১৯-২০ মৌসুমে যা ছিল ৮.২৪। ২০১৮-১৯ মৌসুমের ৬ সেঞ্চুরির রেকর্ড এবার ৮ সেঞ্চুরিতে ভেঙেছে বিপিএল। প্রথমবারের মতো ছক্কার সংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়েছে (৭১৫)।
ফাইনালে তামিম ইকবালের ফিফটিটা ছিল এবারের ৭২তম ৫০ ছাড়ানো ইনিংস। তাতে ২০১৯-২০ মৌসুমের রেকর্ড ছুঁয়েছে বিপিএল। ব্যাটিংয়ে কেন এত রেকর্ড? ব্যাটিং-বান্ধব উইকেট একটি কারণ, সম্ভবত তার চেয়েও বড় কারণ বাউন্ডারি ছোট করে আনা। যা নিয়ে প্রথম আপত্তি তুলেছেন টানা দুবার বিপিএলজয়ী অধিনায়ক তামিম ইকবাল।
দর্শকের ঢল
ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম যেখানেই বিপিএল গিয়েছে, গ্যালারি ভরেছে দর্শকে। নানা নেতিবাচক খবরে আলোচনায় থাকার পরও এই টুর্নামেন্ট নিয়ে দর্শকের তুমুল আগ্রহ ছিল। বিপিএলে এবার বেশির ভাগ টিকিটই বিক্রি হয়েছে অনলাইনে, কিছু ব্যাংকের কাছে।
টুর্নামেন্টের শুরুর কয়েক দিন টিকিট না পাওয়ার ক্ষোভে মিছিল, ভাঙচুরও হয়েছে মিরপুরে। ওই আগ্রহ যে শেষ পর্যন্ত ছিল, তা প্রমাণ হয়েছে ফাইনালে। ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে চিটাগং কিংসের শিরোপা লড়াই দেখতে মাঠ কানায় কানায় ভর্তি তো ছিলই, মাঠের বাইরেও বিপুল পরিমাণ দর্শকের ভিড় ছিল। পুরো বিপিএলে কত টিকিট বিক্রি হয়েছে? চূড়ান্ত হিসাবটা এখনো জানা যায়নি, তবে লিগ পর্বের সময়ই টিকিট বিক্রির টাকা ১০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে।