টানা জয়ের মধ্যে ছিল দুই দলই। রংপুর রাইডার্স তো সাত ম্যাচ খেলে সাতটিতেই ছিল অপরাজিত। চিটাগং কিংসও পাঁচ ম্যাচ খেলে জিতেছিল সর্বশেষ চারটিতেই। কিন্তু আজ ঘরের মাঠে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে এখনও অজেয় রংপুরের কাছে ৩৩ রানে হেরে থামল চিটাগংয়ের জয়রথ।
পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান খুশদিল শাহর ঝোড়ো ব্যাটিং ও পেসার আকিফ জাভেদের দাপুটে বোলিংয়ের সৌজন্যে রংপুর তুলে নিল টানা অষ্টম জয়। এ জয়ে সবার আগে প্লে অফ পর্বে জায়গা করে নিল উত্তরবঙ্গের দলটি।
অথচ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে গ্যালারিতে ছিল চিটাগংয়ের প্রতি সমর্থনের ঢেউ। গ্যালারি ভর্তি দর্শকের সামনে অনেকটা কাঁপতে কাঁপতেই শুরু হয়েছিল রংপুর রাইডার্সের ইনিংস। ৬৯ রানে পড়ে গিয়েছিল ৪ উইকেট। চিটাগংয়ের তিন স্পিনার আলিস আল ইসলাম, নাঈম ইসলাম আর আরাফাত সানি মিলেই তুলে নেন চার ব্যাটসম্যানকে। কিন্তু এরপরই যেন নতুন করে শুরু হয় রংপুরের ইনিংস এবং এই শুরুটা করলেন খুশদিল শাহ।
বিপিএলে এর আগে দুই মৌসুম খেলেছেন খুশদিল এবং দুই মৌসুমেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হয়ে রেখেছেন কার্যকর ভূমিকা। পাকিস্তানের হয়ে ১০টি ওয়ানডে এবং ২৭টি টি–টোয়েন্টি খেলা এই ক্রিকেটার এবার রংপুর রাইডার্সেও সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখছেন। ৮ ম্যাচে ৬ ইনিংস ব্যাট করে ১৯৭.১২ স্ট্রাইক রেটে ও ৯১.৩৩ গড়ে এখন পর্যন্ত তাঁর রান ২৭৪। এবারের আসরে এখন পর্যন্ত তৃতীয় সর্বোচ্চ রান খুশদিলের। তবে আজ পর্যন্ত শীর্ষে থাকা তিন ব্যাটসম্যানের মধ্যে তাঁর স্ট্রাইক রেটই সবচেয়ে বেশি। টুর্নামেন্টে ২৩ ছক্কা মেরে শীর্ষে তিনিই।
সিলেটে আগের ম্যাচে খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষেও জ্বলে উঠেছিল খুশদিলের ব্যাট। ৩৫ বলে অপরাজিত থেকেছেন ৭৩ রানে। আজ চট্টগ্রামেও উঠেছে সেই একই ঝড়। শুরুর বিপর্যয় সামলেছেন অধিনায়ক নুরুল হাসানের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে ৪১ রানের জুটিতে। পাঁচে নেমে ২৬ বলে ফিফটি, শেষ পর্যন্ত ২৮ বলে ৫৯ রান। চার বাউন্ডারির সঙ্গে সাত ছক্কা ছিল তাতে, একটি ছাড়া যার সবই মেরেছেন দুটি ওভারে। এবারের বিপিএলে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২৩টি ছক্কা এসেছে খুশদিলের ব্যাট থেকেই।
শুরুটা করেছিলেন একটু ধীরে সুস্থে। কিছুটা থিতু হয়ে বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন ১৫তম ওভারে। কিংসের বাঁহাতি পেসার মারুফ মৃধাকে মারেন পরপর তিন ছক্কা। ১৮তম ওভারে ঝড়টা গেছে খুশদিলেরই স্বদেশি পেসার মোহাম্মদ ওয়াসিমের ওপর দিয়ে।
২৫ রান আসা ওই ওভারে খুশদিল মারেন তিনটি বিশাল ছক্কা, সঙ্গে একটি চারও। অবশ্য খুশদিল আউটও হয়েছেন সেই ওভারের শেষ বলে। ওয়াসিমের বাউন্সারে পুল করতে গেলে ব্যাটের কিনারায় লেগে আকাশের দিকে উঠে যায় বল। একটু এগিয়ে ওয়াসিম নিজেই নিয়েছেন অনেক ওপরে ওঠা ক্যাচটা, তার আগের বলগুলোতে মার খাওয়ার ঝাল মেটাতে বল আছড়ে ফেলেছেন মাটিতে।
সিলেটের ছোট বাউন্ডারি চট্টগ্রামে আবার বড় হয়ে গেলেও উইকেট এখানেও ব্যাটিং সহায়কই। ১৬৫ রানের লক্ষ্য, ওভার প্রতি সাড়ে আটেরও কম রানের লক্ষ্য এমন উইকেটে বড় কিছু হওয়ার কথা নয় কিংসের জন্য। তার ওপর টানা সাত ম্যাচ খেলিয়ে এই ম্যাচেই রংপুর প্রথম বিশ্রাম দিয়েছে পেসার নাহিদ রানাকে। তবু জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে সমস্যা হয়নি আকিফ জাভেদের দুর্দান্ত বোলিংয়ের কল্যাণে।
নিজের প্রথম ৫ বলে ১৬ রান হজম করা আকিফ পরের ২১ বলে ১৬ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। এর আগে ইনিংসের প্রথম বলেই চিটাগংয়ের ওপেনার উসমান খানকে ফিরিয়ে রংপুরকে ভালো শুরু এনে দেন রাকিবুল হাসান। সাত ওভারের মধ্যে দলের ৫৩ রানে পড়েছে চিটাগংয়ের আরও ৩ উইকেট।
পঞ্চম উইকেটে নাঈম ইসলাম–শামীম হোসেন মিলে ৫৩ রানের জুটি দাঁড় করালেও রানের গতি বাড়াতে পারেননি। চিটাগং কিংসও লক্ষ্য থেকে পিছিয়ে যেতে থাকে আস্তে আস্তে। হাতে ২ উইকেট রেখেই শেষ হয়েছে তাদের ১৩১ রানের ইনিংস।
রংপুরের পাকিস্তানি পেসার আকিফ ৪ উইকেটের পাশাপাশি ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালানো খুশদিলও বাঁহাতি স্পিনে ২ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। এমন অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের পর ম্যাচসেরা খুঁজে নিতে কোনো সমস্যাই হওয়ার কথা নয় ম্যাচ রেফারির।