স্টার্কের সৌজন্যে ‘গ্রেটনেস দেখলাম আমরা’

অবিশ্বাস্য বোলিং করে মাঠ ছাড়ছেন মিচেল স্টার্কএএফপি

জেইডেন সিলসকে দুষতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মিচেল স্টার্ক ব্যাটিং করার সময় তাঁকে স্লেজিং করেছিলেন ক্যারিবিয়ান পেসার। পরিণামটা তারা টের পেয়েছে হাড়ে হাড়ে। টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ২৭ রানে অলআউট হয়ে কিংস্টন টেস্ট হেরেছে ১৭৬ রানে। তাতে স্টার্কের ভূমিকাটাও এতক্ষণে অনেকের জেনে যাওয়ার কথা—৭.৩ ওভারে ৯ রানে ৬ উইকেট!

আরও পড়ুন

স্টার্কের কি কোনো তাড়া ছিল? সম্ভবত না। সবকিছু যে এত দ্রুত ঘটবে, সেটা তাঁরাও ভাবেননি। স্যাবাইনা পার্কে তৃতীয় দিনে টেস্ট ইতিহাসে দ্রুততম ৫ উইকেট (১৫ বলে) নেওয়ার নতুন রেকর্ড গড়ে জয়ের পর স্টার্ক বলেছেন, ‘আজ (কাল রাতে) এত দ্রুত সবকিছু ঘটবে, তা আমরা ভাবিনি। গোটা সিরিজেই আমরা জায়গামতো বোলিং করেছি এবং আজও (গতকাল রাতে) সেটা বজায় ছিল। দারুণ একটা সিরিজ কাটল। হাসিমুখে বাড়ি ফিরব।’

অস্ট্রেলিয়ার ৩-০—তে টেস্ট সিরিজ জয় এবং স্টার্ক নিজে ম্যাচসেরা ও সিরিজসেরা হওয়ায় তাঁর মুখের হাসিটা চওড়া হতেই পারে। তবে স্টার্কের জন্য আনন্দের উপলক্ষ শুধু এসবই নয়, আরও আছে। এটি ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের ১০০তম টেস্ট, যেখানে আবার তিনি দেখা পেয়েছেন ৪০০তম উইকেটের—বলের হিসাবে যেখানে তিনি দ্বিতীয় দ্রুততম। ৪০০ উইকেট নিতে ১৯০৬২টি (বৈধ) ডেলিভারি করেছেন, ১৬৬৩৪টি ডেলিভারিতে ৪০০ উইকেট নিয়ে সবার ওপরে প্রোটিয়া কিংবদন্তি ডেল স্টেইন।

গোলাপি বলে স্টার্কের চেয়ে ভয়ংকর পেসার আর নেই
এএফপি

গ্লেন ম্যাকগ্রার পর অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় পেসার এবং শেন ওয়ার্ন, নাথান লায়নসহ অস্ট্রেলিয়ার চতুর্থ বোলার হিসেবে টেস্টে চার শ উইকেটের দেখা পেলেন স্টার্ক। তবে এই মাইলফলক তো তিনি ছুঁতেনই, আসল মজাটা তো দিবারাত্রির টেস্টে গোলাপি বলে তাঁর বোলিং দেখায়, যেটা ধারাভাষ্যে বলেছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক উইকেটকিপার ব্র্যাড হাডিন, ‘মিচেল স্টার্ক, গোলাপি বল এবং উইকেটেও কিছু আছে; এর চেয়ে ভালো আর হয় না। গ্রেটনেস দেখলাম আমরা।’

আরও পড়ুন

সেই গ্রেটনেস কেমন, পরিসংখ্যানে তা বোঝানো কঠিন। চাইলে দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিংয়ের হাইলাইটস দেখে নিতে পারেন। মাত্র ৮৭ বলের ইনিংস, বেশিক্ষণ লাগবে না! যেখানে স্টার্ক প্রথম ওভারেই ০ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট—টেস্টে দীর্ঘ ২৩ বছর পর দেখা গেল এমন কিছু। ২০০৬ সালে করাচি টেস্টে পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে প্রথম ওভারে হ্যাটট্রিক করেছিলেন ভারতের সাবেক পেসার ইরফান পাঠান।

অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম সিডনি মর্নিং হেরাল্ড জানিয়েছে, টেস্টে এ নিয়ে নিজের প্রথম ওভারে মোট ২৩ উইকেট নিলেন স্টার্ক। টেস্টে এ নিয়ে চতুর্থবার ইনিংসের প্রথম বলে উইকেট নিলেন, প্রথম এর দেখা পেয়েছিলেন ২০১৬ সালে শ্রীলঙ্কায়।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিংকে এভাবেই দুমড়েমুচড়ে দেন স্টার্ক
এএফপি

স্টার্ক তাঁর শততম টেস্ট যেভাবে রাঙালেন, সেখানেও দেখা গেল নতুন ইতিহাস। ক্যারিয়ারের শততম টেস্ট খেলতে নেমে স্টার্কের চেয়ে ভালো বোলিংয়ের রেকর্ড নেই। তাঁর আগে শততম টেস্টে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডটি ছিল শ্রীলঙ্কান স্পিন কিংবদন্তি মুত্তিয়া মুরালিধরনের। ২০০৬ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজের শততম টেস্টে ৫৪ রানে ৬ উইকেট নেন মুরালিধরন।

তবে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্স অবাক স্টার্কের ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা দেখে। পুরস্কার বিতরণীতে বলেছেন, ‘শততম টেস্টের প্রসঙ্গ উঠলে দৃঢ়তা, দক্ষতা ও ফিটনেসের প্রসঙ্গও আসে। তবে আমরা আজ (কাল রাতে) দেখলাম আসল মিচেল স্টার্ক দলকে কি এনে দিতে পারে, প্রতিপক্ষকে ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলে ম্যাচ জেতাতে পারে। যেকোনো সংস্করণেই সে এটা ধারাবাহিকভাবে করছে এবং তাকে দলে পেয়ে আমরা ভাগ্যবান।’

জয়ের পর এসইএন রেডিওকে স্টার্ক বলেছেন, ‘অসাধারণ এক সফর এটা। অনেক সাফল্য পেয়েছি। গোলাপি ডিউক (গোলাপি বল) কেমন আচরণ করবে, সেটা আমরা জানতাম না। এরপর তো সর্বশেষ রাতেই দেখা গেল আলোর নিচে গোলাপি বল কত ভয়ংকর হতে পারে...ভালো জায়গায় বল করতে পেরেছি। সুযোগগুলো নিতে পেরে ভালো লাগছে।’