নাসিমের সঙ্গে ভাগ্য জুড়ে যাওয়া হাসানের এবার কোন ছবি

পাকিস্তানের বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেয়েছেন হাসান আলীছবি: এএফপি

৩ আগস্ট ২০২২। লাহোরে মোহাম্মদ ওয়াসিমের সংবাদ সম্মেলন।

২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখলেও তখন পর্যন্ত ওয়ানডে বা টি–টোয়েন্টি খেলেননি নাসিম শাহ। সামনেই পাকিস্তানের নেদারল্যান্ডস সফর ও এশিয়া কাপ। প্রধান নির্বাচক হিসেবে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়া ওয়াসিম জানালেন, টেস্ট দলে নিয়মিত হয়ে ওঠা নাসিম আসন্ন দুই সফরের ওয়ানডে ও টি–টোয়েন্টি দলে আছেন।

২২ আগস্ট, ২০২৩। লাহোরে ইনজামাম–উল–হকের সংবাদ সম্মেলন।

মাঝের এক বছরে টেস্টের মতো সীমিত ওভার ক্রিকেটেও পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণে নিয়মিত হয়ে গেছেন নাসিম। মাত্র ১৪ ওয়ানডেতে ৩২ উইকেট নিয়ে ওয়ানডেতে হয়ে উঠেছেন অপরিহার্য। প্রধান নির্বাচকের চেয়ারে বসা ইনজামাম সংবাদমাধ্যমকে জানালেন, কাঁধের চোটের কারণে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে নেই নাসিম।

এক বছর আগে–পরের দুটি সংবাদ সম্মেলনের মূল পার্থক্য—‘নাসিম আছেন, নাসিম নেই।’ ওয়াসিম, ইনজামামদের সংবাদ সম্মেলন দুটি যদি নাসিমের জন্য হয় ‘আনন্দের ফেনিল সাগর থেকে বেদনার বালুচরে’ চলে যাওয়া, হাসান আলীর জন্য সেটা ‘বেদনার বালুচর থেকে আনন্দের সাগরে’ ফেরার। গত বছর নাসিমকে জায়গা দিতে গিয়েই পাকিস্তান দল থেকে বাদ পড়েছিলেন হাসান। আর সেই নাসিম এবার বিশ্বকাপে যেতে পারবেন না বলে দরজা খুলেছে হাসানের। তাই বলাই যায়, নাসিমের থাকা না–থাকায় জড়িয়ে গেছেন ডানহাতি এ পেসার!

পাকিস্তানের হাসান আলী ও নাসিম শাহ যখন বিপিএলে সতীর্থ ছিলেন
ছবি : শামসুল হক

এখনকার ২৯ বছর বয়সী হাসান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছিলেন ২০১৬ সালে। সাত বছরের ক্যারিয়ারে তিন সংস্করণ মিলিয়ে পাকিস্তানের হয়ে খেলেছেন ১৩২ ম্যাচ। চোটের কারণে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়া নাসিমের জায়গায় কাউকে নিতে গিয়ে হাসানের অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলেছেন ইনজামাম, ‘সে একজন অভিজ্ঞ বোলার। পাকিস্তানের হয়ে বড় টুর্নামেন্টে ভালো খেলেছে। আর নাসিম যখন ছিটকে গেল, আমাদের দরকার ছিল এমন একজন, যে কিনা নতুন বলে ভালো করে। হাসান নতুন–পুরোনো, দুই বলেই ভালো বোলিং করে।’

৭ বছর আর ১৩২ ম্যাচের ক্যারিয়ারে দুটি অভিজ্ঞতা হাসানের কখনোই ভোলার কথা নয়। সেই দুই অভিজ্ঞতা আবার বিপরীতমুখী। প্রথমটি আনন্দের, গৌরবের। ২০১৬ সালে অভিষেকের পর প্রথম টুর্নামেন্ট খেলেছিলেন পরের বছর, আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। ইংল্যান্ডের মাটিতে হওয়া সেই টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচটা তাঁর ভালো যায়নি। ভারতের বিপক্ষে ১০ ওভার বল করে ৭০ রান দিয়ে পেয়েছিলেন মাত্র ১ উইকেট।

হাসান আলীর অতীতে গৌরব যেমন আছে, আছে বেদনাও
ছবি: এএফপি

তবে শুরুর সেই ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়ান পরের ম্যাচেই। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৪ রানে তুলে নেন ৩ উইকেট। এরপর অনেকটা তিনের নামতা গুণেই ৩টি উইকেট করে নেন শ্রীলঙ্কা (গ্রুপ পর্ব), ইংল্যান্ড (সেমিফাইনাল) এবং ভারতের (ফাইনাল) বিপক্ষে। ওভালে ভারতকে ১৮০ রানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জেতে পাকিস্তান, টানা চার ম্যাচে ৩ উইকেটসহ ৫ ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্ট–সেরা হন হাসান।
২০১৭ সালে পাকিস্তানের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের নায়কই ২০২১ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হয়ে ওঠেন ‘খলনায়ক’।

আরও পড়ুন

সেবার অপরাজিত থেকে শেষ চারে ওঠা পাকিস্তান সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে প্রায় হারিয়েই দিচ্ছিল। কিন্তু ম্যাচের ১৯তম ওভারে ম্যাথু ওয়েডের সহজ ক্যাচ মিস করেন হাসান, এর পরের তিন বলে তিন ছয় মেরে অস্ট্রেলিয়াকে জিতিয়ে দেন ওয়েড। এক ক্যাচ মিসে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে বিদায় ঘটে পাকিস্তানের। পরে এক সাক্ষাৎকারে হাসানই বলেছিলেন, সেদিন ক্যাচ মিসের পর দুই রাত ঘুমাতে পারেননি।

২০২১ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ম্যাথু ওয়েডের ক্যাচটা নিতে পারেননি হাসান আলী
ছবি: টুইটার

হাসান অবশ্য তখনো পথ হারাননি। টেস্ট, ওয়ানডে, টি–টোয়েন্টি—তিন সংস্করণেই নির্বাচকদের রাডারে ছিলেন। কিন্তু ২০২২ সালের শুরুর দিক থেকে বলে ধার কমতে থাকে তাঁর। ২০২২ সালের আগস্টে তাঁকে যখন বাদ দেওয়া হয়, তার আগের ৯ টি–টোয়েন্টিতে উইকেট ছিল মাত্র ৮টি, স্ট্রাইক রেট নেমে যায় ২৩.২–এ। একই সময়ে খেলা তিনটি ওয়ানডেতে ২ উইকেট নেন ৭৬.৫০ গড়ে। পিএসএলেও ছিলেন না প্রত্যাশিত ছন্দে। যে কারণে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ আর টি–টোয়েন্টির এশিয়া কাপ দলে জায়গা হারিয়ে ফেলেন, তাঁর শূন্যস্থান পূরণে আসেন তখন পর্যন্ত সীমিত ওভারের ক্রিকেটে না খেলা নাসিম।

আরও পড়ুন

ডাচদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে না খেললেও পরে অবশ্য এশিয়া কাপের দলে ঢুকেছিলেন। এশিয়া কাপের আগমুহূর্তে মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র চোটে পড়লে হাসানকে ডেকে নেওয়া হয়। তবে মাত্র একটি ম্যাচই খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। সুপার ফোরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটিতে ৩ ওভারে ২৫ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন। সেটিই তাঁর সর্বশেষ টি–টোয়েন্টি।

একই বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ থেকেও বাদ পড়েছিলেন। তবে বছরের শেষ দিকে তাঁর জন্য দরজা খুলে দেয় আরেক পেসারের চোট। নিউজিল্যান্ড সিরিজে হারিস রউফ চোটে পড়লে দলে নেওয়া হয় হাসানকে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নেমে সুবিধা করতে পারেননি। দুই ইনিংসে ৩৪ ওভার হাত ঘুরিয়ে ১১১ রান দিয়ে নেন মাত্র ১ উইকেট।

টি–টোয়েন্টিতে ওয়াসিম আর টেস্টে রউফের পর এবার ওয়ানডেতে ফিরলেন নাসিমের জায়গায়। আগের দুবার নিজের পুরোনো ছবিটা ফেরাতে পারেননি। এবার কি গল্পটা ভিন্নভাবে লিখতে পারবেন হাসান?