সব ধরনের ক্রিকেটকে বিদায় ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক মরগানের

সব ধরনের ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিলেন এউইন মরগান, ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়করয়টার্স

সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন এউইন মরগান। আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘোষণা দেন ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপ জেতানো সাবেক এ অধিনায়ক। গত বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যান সাদা বলে ইংল্যান্ডের খেলায় ‘বিপ্লব’ এনেছেন। ২০১৯ সালে মরগানের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছিল ইংল্যান্ড। ২০১৫ বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেওয়ার পেছনে অন্যতম বড় অবদান ছিল তাঁর।

মরগান দেশের হয়ে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন গত বছরের ১৯ জুন নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ওয়ানডেতে। এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আজ সব ধরনের ক্রিকেট থেকেই বিদায় বলে দিলেন। গত বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি লিগে পার্ল রয়্যালসের হয়ে সেমিফাইনালই পেশাদার ক্রিকেটে তাঁর শেষ ম্যাচ হয়ে রইল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া অবসরবার্তায় ৩৬ বছর বয়সী মরগান লিখেছেন, ‘খুব গর্বের সঙ্গে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করছি। অনেক ভাবনাচিন্তার পর মনে হয়েছে, যে খেলাটার জন্য বছরের পর বছর এত কিছু পেয়ে এসেছি, সেটা ছাড়ার এখনই সময়। ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের মিডলসেক্সে যোগ দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার লিগে পার্ল রয়্যালসের হয়ে খেলা পর্যন্ত—প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করেছি।’

২০০৬ সালে ১৬ বছর বয়সে আয়ারল্যান্ডের হয়ে অভিষেক হয় মরগানের, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে সে ম্যাচে ৯৯ রানে আউট হন। ইংরেজ মা ও ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী হওয়ায় ইংল্যান্ডের হয়ে তাঁর খেলার ইচ্ছাটার ২০০৯ সালেই বাস্তবায়ন হয়ে যায়। অভিষেক ঘটে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে। পরের বছর লর্ডসে টেস্ট অভিষেক। যে টেস্টে প্রতিপক্ষ ছিল বাংলাদেশ, যে ম্যাচে দারুণ এক সেঞ্চুরি করেছিলেন তামিম ইকবাল। মরগানের সঙ্গে বাংলাদেশের পেসার রবিউল ইসলামেরও সে ম্যাচ দিয়ে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল।

২০১২ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বশেষ টেস্ট খেলেন মরগান। মনোযোগ দেন সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেটে। গত বছর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সিরিজ খেলছিলেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। ব্যাট হাতে সময়টা অবশ্য সুবিধার যাচ্ছিল না, এরপর হুট করেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দেন। পরে জস বাটলারের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতে ইংল্যান্ড।

আইপিএলের দল কলকাতা নাইট রাইডার্সকেও নেতৃত্ব দিয়েছেন মরগান
ছবি: আইপিএল

১৬ টেস্ট, ২৪৮ ওয়ানডে ও ১১৫ টি-টোয়েন্টি খেলা মরগান স্কাই স্পোর্টসের সঙ্গে খেলার সম্প্রচারে নিজের নতুন ক্যারিয়ার শুরুর পাশাপাশি স্ট্র্যাটেজিক লিডারশিপ অ্যান্ড গভর্ন্যান্স বিষয়ে দুই বছরের পোস্টগ্র্যাজুয়েশন করছেন। খেলা ছাড়ার পর ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে কোচিংও করাতে পারেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ। তবে একই সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) তরুণ নেতৃত্ব তৈরি করতে তাঁকে ‘মেন্টর’ হিসেবে ব্যবহার করবে। তবে মরগান অবসরবার্তায় নিজের ভবিষ্যৎ নিয়েও বলেছেন, ‘খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারের ইতি টানলেও আমি খেলার সঙ্গে জড়িত থাকব। আন্তর্জাতিক ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে সম্প্রচারকদের সঙ্গে ধারাভাষ্যকার ও পণ্ডিত হিসেবে কাজ করব।’

মরগানের হাত ধরেই সাত-আট বছরে সীমিত ওভারে নিজেদের পাল্টে ফেলেছে ইংল্যান্ড। সে পথ ধরেই প্রথম দল হিসেবে এখন সীমিত ওভারের দুই সংস্করণেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। কাউন্টি ক্রিকেটে মিডলসেক্সেই পুরো ক্যারিয়ার কাটানো এই ক্রিকেটার দলটির হয়ে ১০২টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৩৩.৩৯ গড়ে ১১ সেঞ্চুরিসহ ৫০৪২ রান করেছেন। সব মিলিয়ে ৩৭৪ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১৩১.৫৯ স্ট্রাইক রেটে ৭৭৮০ রান করেছেন মরগান। খেলেছেন আইপিএল, পিএসএল, বিগ ব্যাশের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেও। আইপিএলের দল কলকাতা নাইট রাইডার্সকে নেতৃত্বও দিয়েছেন তিনি।

২০ বছরের পেশাদার ক্যারিয়ারের ইতি টেনে সবশেষে ক্রিকেটকে ধন্যবাদ জানিয়েছে মরগান বলেছেন, ‘ক্রিকেটকে ধন্যবাদ, কারণ (এই খেলার কল্যাণে) বিশ্বের নানা জায়গায় দুর্দান্ত সব মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। তাদের অনেকের সঙ্গে সারা জীবনের বন্ধুত্বও হয়েছে। পেশাদার ক্রিকেট খেলার এই চ্যালেঞ্জ ও রোমাঞ্চ আমি নিঃসন্দেহে মিস করব।’