পাকিস্তানি স্পিনে উইন্ডিজের হাসফাঁস, মান বাঁচালেন শেষ তিন ব্যাটসম্যান

লুইসকে বোল্ড করেন সাজিদ খানএএফপি

দশম ব্যাটসম্যান হিসেবে জোমেল ওয়ারিকান যখন মাঠে নামলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন রীতিমতো কাঁপছে। ৬৬ রানে নেই ৮ উইকেট। ১০০ রানের নিচে তো বটেই, উঁকি দিচ্ছিল গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা।

২০০৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৭ রানে অলআউট হওয়ার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর গত ২০ বছরে আর সত্তরের নিচে অলআউট হয়নি। তবে ১০ নম্বরে ব্যাট করতে নামা ওয়ারিকান সেই শঙ্কা দূর তো করেছেনই, দলকে ফলো অন করা থেকেও বাঁচিয়েছেন।
তবে কৃতিত্বটা একা ওয়ারিকানের নয়। গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন ৯ নম্বরে নামা গুড়াকেশ মোতি আর ১১ নম্বর জেডেন সিলসও। শেষ তিন জনের ব্যাটে চড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ শেষ পর্যন্ত করেছে ১৩৭ রান। পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসের সংগ্রহ তখন ৯৩ রান দূরে।

মুলতানে পাকিস্তান–ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুই টেস্ট সিরিজের প্রথমটির দ্বিতীয় দিনে ক্যারিবীয়দের বিপর্যয়ে ফেলেছেন দুই স্পিনার নোমান আলী ও সাজিদ খান। প্রথমেই বল হাতে তুলে নেওয়া সাজিদ নিজের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওভারের ১১ বলের মধ্যেই তুলে নেন ৪ উইকেট।

প্রথম ৪ উইকেটই নেন সাজিদ খান
এএফপি

স্পিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের হাঁসফাঁস করতে দেখে পাকিস্তান অধিনায়ক পেসার খুররম শেহজাদকে এক ওভার করিয়ে আর বলই দেননি। অফ স্পিনার সাজিদের সঙ্গে অন্য প্রান্তে আক্রমণে যুক্ত করেন নোমান আলীকে।

আরও পড়ুন

সাজিদ প্রথম ৪ উইকেট তুলে নেওয়ার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর দায়িত্ব নেন নোমান। এই বাঁহাতি স্পিনার তুলে নিয়েছেন টানা ৫ উইকেট। দেশের মাটিতে পাকিস্তানি স্পিনারদের অবিশ্বাস্য আধিপত্যের গল্পে এতে যোগ হলো নতুন একটি অধ্যায়। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ হারার পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন টেস্ট সিরিজের শেষ দুই টেস্টে ৪০ উইকেটই নিয়েছিলেন পাকিস্তানি স্পিনাররা। সাজিদ খান আর নোমান আলীই যার ৩৯টি। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসেও ১০ উইকেটই স্পিনারদের, যার ৯টি নিয়েছেন সাজিদ ও নোমান।

৫ উইকেট নেন নোমান আলী
এএফপি

মোতি ও ওয়ারিকান নবম উইকেটে যোগ করেন ২৫ রান। মোতি ২৫ বলে ১৯ রান করে আউট হওয়ার পর দশম উইকেটে আরেকটি ভালো জুটি গড়েন ওয়ারিকান–সিলস। এই জুটি অবশ্য টিকে থাকার চেয়ে তেড়েফুড়ে মারার দিকেই মনোযোগী ছিল। মাত্র ২১ বলের জুটিতে দুজন যোগ করেন ৪৬ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটিটি থামে আবরার আহমেদের বলে সিলস উইকেটকিপার মোহাম্মদ রিজওয়ানের ক্যাচ হওয়ার মাধ্যমে। সিলস ১৩ বলে ৩ ছক্কায় করেছেন ২২ রান। আর ওয়ারিকান একপ্রান্তে অপরাজিত থাকেন ২৪ বলে ১ ছয় ৪ চারে ৩১ রান নিয়ে।

আরও পড়ুন

ওয়ারিকান ৩১*, সিলস ২২ ও মোতি ১৯—ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসের সর্বোচ্চ তিনটি ইনিংসই এসেছে শেষ তিন ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে। অতিরিক্ত খাত থেকেও এসেছে ২২ রান।

এর আগে পাকিস্তান তাদের প্রথম ইনিংসে ২৩০ রানে অলআউট হয়। পঞ্চম উইকেটে রিজওয়ান–সৌদ শাকিল ১৪১ রানের জুটি গড়লেও ৪৭ রানের মধ্যে শেষ ৬ উইকেট হারায় পাকিস্তান। ৩টি করে উইকেট নেন সিলস ও ওয়ারিকান।

আরও পড়ুন

পাকিস্তান দ্বিতীয় দিনটা শেষ করেছে ৩ উইকেটে ১০৯ রান তুলে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে এখন তারা এগিয়ে ২০২ রানে। কামরান গুলাম ৯ রানে ও সৌদ শাকিল ২ রানে অপরাজিত আছেন।

দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানের শুরুটা ভালোই ছিল। শান মাসুদ ও মুহাম্মদ হুরাইরার উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৬৭ রান। জোমেল ওয়ারিক্যানের বলে এলবিডব্লু হয়েছেন ২৯ রান করা হুরাইরা। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বাঁহাতি স্পিনার পরে এলবিডব্লু করেছেন বাবর আজমকেও (৫)। ১০৬ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় পাকিস্তান। এই আউটেও আছে ওয়ারিক্যানের অবদান। কাভেম হজের সঙ্গে মিলে পাকিস্তান অধিনায়ক শান মাসুদকে রানআউট করেন ওয়ারিক্যান। ৫২ রান করেছেন মাসুদ।

আরও পড়ুন

সংক্ষিপ্ত স্কোর

পাকিস্তান: ৬৮.৫ ওভারে ২৩০ (শাকিল ৮৪, রিজওয়ান ৭১; সিলস ৩/২৭, ওয়ারিক্যান ৩/৬৯, সিনক্লেয়ার ২/৬১) ও ৩১ ওভারে ১০৯/৩ (মাসুদ ৫২, হুরাইরা ২৯; ওয়ারিক্যান ২/১৭)। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ২৫.২ ওভারে ১৩৭ (ওয়ারিক্যান ৩১*, সিলস ২২; নোমান ৫/৩৯, সাজিদ ৪/৬৫)। (২য় দিন শেষে)