‘গিল প্রকল্প’ কেন ব্যর্থ, কেন সহ–অধিনায়ককে বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ দিল ভারত
শুবমান গিলকে মনে করা হচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে নয়, অধিনায়ক হিসেবেও। এরই মধ্যে তাঁকে টেস্ট ও ওয়ানডে দলে নেতৃত্বের দায়িত্ব দিয়েছে ভারত। তাই গত আগস্টে যখন গিলকে টি-টোয়েন্টি দলের সহ-অধিনায়ক ঘোষণা করা হয়, তখন অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব পাওয়াও গিলের জন্য শুধু সময়ের অপেক্ষা।
কিন্তু ক্রিকেট বড় অনিশ্চয়তার খেলা! আগামী ফেব্রুয়ারিতে শুরু হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল যখন ঘোষণা করা হলো, দেখা গেল সেখানে গিলের নামটাই নেই। হঠাৎ কেন এই ‘গিল প্রকল্প’ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল ভারত?
গিলকে সব সংস্করণের নেতা বানানোর একটা ছক কষেছিলেন নির্বাচকেরা। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই সহ-অধিনায়ক দলে ফেরার পর ওপেনিং পজিশনটা তাঁর জন্য পাকা করে দেওয়া হয়েছিল। অন্য ওপেনার অভিষেক শর্মার সঙ্গে গিলের পজিশন নিয়েই শুধু কোনো সংশয় ছিল না। কিন্তু গিল সেই সুযোগ হেলায় হারালেন।
দলে ফেরার পর ১৫টি ইনিংস খেলেছেন, একটিতেও ফিফটি পাননি। সর্বোচ্চ ইনিংস ৪৭ রানের। এমন ‘কঙ্কালসার’ পরিসংখ্যান নিয়ে বিশ্বকাপের টিকিট পাওয়া যে কতটা কঠিন, তা গিল এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন।
আসলে ভারত চেয়েছিল গিলকে বিরাট কোহলির ভূমিকায় খেলাতে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সাধারণত বিশাল দলীয় স্কোর খুব একটা দেখা যায় না, তাই সেখানে একজন ‘অ্যাঙ্কর’ বা খুঁটি হয়ে থাকা ব্যাটসম্যানের খুব প্রয়োজন। কিন্তু ছন্দের অভাবে গিলের ওপর সেই আস্থা হারিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। পাওয়ার হিটিং আর স্ট্রাইক রোটেশনের মধ্যে তিনি ঠিক ভারসাম্য রাখতে পারেননি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বিসিসিআইয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘ওপেনিংয়ে বড় শট খেলার চাপ সামলাতে পারছিলেন না গিল। তারুণ্যনির্ভর এই টি-টোয়েন্টি দলের মূল মন্ত্রই হলো শুরু থেকে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখা। কিন্তু গিল নিজেই চাপে পড়ে যাচ্ছিলেন। ইনিংস ধরে রাখবেন, নাকি ধুমধাড়াক্কা মারবেন—এই দোলাচলেই সব গুলিয়ে ফেলেছেন তিনি।’
এর ওপর অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবও ফর্মে নেই। চলতি বছর ১৯ ইনিংসে তাঁর গড় মাত্র ১৩.৬২। টপ অর্ডারে একসঙ্গে ছন্দহীন দুই ব্যাটসম্যান রাখতে চায়নি ভারত।
শোনা যাচ্ছে, টেস্ট খেলে ফেরা ক্রিকেটারদের টি-টোয়েন্টিতে হুট করে ঢুকিয়ে দেওয়া নিয়ে সূর্যকুমারের আপত্তি ছিল আগে থেকেই। বাস্তবেও দেখা গেল তা-ই। ২০২৪ বিশ্বকাপের পর যাঁদের লাল বলের ক্রিকেটে মন দিতে বলা হয়েছিল, সেই গিল, ঋষভ পন্ত আর যশস্বী জয়সোয়ালদের কেউই এবারের বিশ্বকাপে জায়গা পাননি।
বরং টিম ম্যানেজমেন্ট আস্থা রেখেছে সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফির ফাইনালে সেঞ্চুরি করা ঈশান কিষানের ওপর। ওপেনিংয়ে গিলের জায়গায় দেখা যেতে পারে সঞ্জু স্যামসনকে। আর গিল না থাকায় কপাল খুলেছে ফিনিশার রিঙ্কু সিংয়ের।
তবে এই বিশ্বকাপই শেষ কথা নয়। বিশ্বকাপের পর নতুন করে আবার টি-টোয়েন্টি দল সাজাতে পারে ভারত। তখন আবার ফিরতে পারেন শুবমান গিল। কে জানে, হয়তো তখন তাঁকে দেখা যাবে একেবারে অধিনায়ক হিসেবেই।