ওয়ার্নার-মার্শের জোড়া সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়ার ৩৬৭, আফ্রিদির ৫ উইকেট

আউট হয়ে ফেরার পথে ওয়ার্নারকে অভিনন্দন পাকিস্তানিদেরএএফপি

ডেভিড ওয়ার্নারের ১২৪ বলে ১৬৩, মিচেল মার্শের ১০৮ বলে ১২১ রানের ইনিংসের পর বেঙ্গালুরুতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯ উইকেটে ৩৬৭ রান তুলেছে অস্ট্রেলিয়া। তবে এক সময় অস্ট্রেলিয়াকে ৪০০ বা এর বেশি রানের স্কোর হাতছানি দিচ্ছিল ভালোভাবেই, শাহিন শাহ আফ্রিদির ৫ ও হারিস রউফের ৩ উইকেট সেটি হতে দেয়নি। শেষ ১০ ওভারে ৭০ রান তুলতে ৬ উইকেট হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, শেষ ৫ ওভারে উঠেছে মাত্র ২৭ রান। কদিন আগে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড গড়া পাকিস্তানের জন্য এরপরও থাকছে কঠিন এক কাজ।

অবশ্য পাকিস্তান যদি ক্যাচ নিতে পারত, তাহলে অস্ট্রেলিয়াকে আরও আগেই আটকাতে পারত। যার শুরুটা ছিল ওয়ার্নারকে ‘জীবন’ দেওয়া দিয়ে। পঞ্চম ওভারটি করছিলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি, তৃতীয় বলটি ছিল শর্ট লেংথে। ১০ রানে ব্যাটিং করা ওয়ার্নারের তোলা সহজতম ক্যাচটি ফেলেন বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা উসামা মির, যিনি খেলছেন সহ-অধিনায়ক শাদাব খানের জায়গায়। প্রথম ওভারে বাজে একটি রিভিউ হারিয়ে ফেলার পর অমন ক্যাচ মিস, দিনটি পাকিস্তানের নয়, সেটিরই যেন ইঙ্গিত ছিল সেটি। পাকিস্তানের পক্ষে এরপর লম্বা একটা সময় কিছুই আসেনি। লাইন-লেংথে এলোমেলো পাকিস্তানকে মাঠে দেখে মনে হয়েছে দিশাহারা, ওয়ার্নার ও মার্শ যেন শাস্তি দিচ্ছিলেন তাদের। ওয়ার্নারের ক্যাচ পড়ার আগে ২৬ বলে ২২ রান তুলেছিল অস্ট্রেলিয়া, ওই বলের পর প্রথম পাওয়ার প্লেতে পরের ৩৪ বলে তোলে ৬০ রান।

১৩তম ওভারে ১০০ পেরিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ১৯তম ওভারের মধ্যে পাকিস্তানের পঞ্চম বোলারও আসেন, কিন্তু ওয়ার্নার-মার্শকে আটকাতে পারেননি কেউই। অবশ্য ইফতিখার আহমেদ ও মোহাম্মদ নেওয়াজ-দুই প্রান্তে স্পিন জুটি রানের গতিতে একটু লাগাম পরিয়েছিল, ১৮ থেকে ২৬তম ওভারের মধ্যে আসে ৩২ রান। এরপর আবার বাউন্ডারি আসতে থাকে নিয়মিত। অস্ট্রেলিয়া ২০০ পেরোয় ৩০তম ওভারে।

ওয়ার্নার ও মার্শ দুজনই পেয়েছেন সেঞ্চুরি
এএফপি

সে সময় ওয়ার্নার ও মার্শের দুর্দান্ত হিটিংয়ের বাইরে ম্যাচের রোমাঞ্চ ছিল একটা বিতর্ক-কে আগে সেঞ্চুরি পাবেন। সেটি দুজন পেয়েছেন, পরপর ২ বলে। ৩১তম ওভারে নেওয়াজের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ৮৫ বলে ক্যারিয়ারের ২১ ও বিশ্বকাপে পঞ্চম সেঞ্চুরিটি পূর্ণ করেন ওয়ার্নার। এ নিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা চারটি ওয়ানডে সেঞ্চুরি পেলেন ওয়ার্নার, যে ম্যাচগুলো এসেছে ৬ বছর ব্যবধানে। মাত্র দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে একই প্রতিপক্ষের সঙ্গে টানা চারটি সেঞ্চুরি পেলেন তিনি। ঠিক পরের বলে পাঞ্চ করে কাভারে মারা চারে ৩২তম জন্মদিনে সেঞ্চুরি পান মার্শও, তাঁর লাগে ১০০ বল। বিশ্বকাপে এ নিয়ে মাত্র চতুর্থবার একই ইনিংসে দুই ওপেনার পেলেন সেঞ্চুরি, অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে যেটি প্রথম ঘটনা।

দুজনকে কে থামাবেন, সে প্রশ্ন অবশ্য ঘুরপাক খাচ্ছিল। কিন্তু পাকিস্তান পাচ্ছিল না উত্তর। ৩৩তম ওভারে ওয়ার্নার জীবন পান আরেকবার, এবার মীরের বলে ক্যাচ ফেলেন আবদুল্লাহ শফিক। অবশ্য পরের ওভারে পাকিস্তান পায় ৩৪তম ওভারে। সে ওভারে ফেরা আফ্রিদিকে অবশ্য প্রথম ৪ বলের মধ্যে ২টি ছক্কা মেরে স্বাগত জানিয়েছিলেন মার্শ। এরপরই ফাইন লেগে মীরের হাতে ধরা পড়েন মার্শ, ১০৮ বলে ১০ চার ও ৯ ছক্কায় ১২১ রান করার পর। মার্শের উইকেটে ভাঙে ২৫৯ রানের ওপেনিং জুটি। বিশ্বকাপে যেটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ।  

হুট করেই পাকিস্তান পেয়ে যায় দ্বিতীয় উইকেটটিও, সেটিও মার্শ ফেরার ঠিক পরের বলেই। তুলে মারতে গিয়ে বাবর আজমের হাতে ধরা পড়ে ‘গোল্ডেন ডাক’ গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের। ২৫৯ রানে বিনা উইকেট থেকে অস্ট্রেলিয়া সহজেই হতে পারত ২৬২/৩-এ, এবার মীরের বলে স্লিপে স্টিভেন স্মিথের ক্যাচ বাবর ফেলায় সেটি হয়নি। অবশ্য ওয়ার্নারের মতো স্মিথ খুব একটা এগোতে পারেননি, তিনি ফেরেন মীরের হাতেই ফিরতি ক্যাচ দিয়ে। অবশ্য ওয়ার্নার ছিলেন, তাঁর সঙ্গে যোগ দেওয়া মার্কাস স্টয়নিস অস্ট্রেলিয়াকে ৪০০-এর পথেই রাখার আভাসও দেন।

আফ্রিদি নিয়েছেন ৫ উইকেট, রউফ ৩টি
এএফপি

প্রথম ৪ ওভারে ৫৯ রান দেওয়া রউফ এসে থামান ওয়ার্নারকে। পরের ওভারে জশ ইংলিসও তাঁর শিকার। আফ্রিদির বলে মার্কাস স্টয়নিস থামার পরই অস্ট্রেলিয়ার শেষের ঝড়ের আশা কার্যত শেষ হয়ে যায়। শেষ ওভার করতে এসে মিচেল স্টার্ক ও জশ হ্যাজলউডকে ফিরিয়ে ইনিংসে দ্বিতীয়বার হ্যাটট্রিকের সামনে দাঁড়িয়ে যান আফ্রিদি, যিনি বোলিং শেষ করেন ৫৪ রানে ৫ উইকেট নিয়ে। ৮৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে শেষ করেন রউফ, মানে শেষ ৪ ওভারে মাত্র ২৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন তিনি।

এর আগে বিশ্বকাপে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ১৪টি ছক্কা মেরেছিল অস্ট্রেলিয়া, আজ ওয়ার্নার ও মার্শ মিলেই মারেন ১৮টি। অবশ্য ওই দুজনের পর অস্ট্রেলিয়া ইনিংসে ছক্কা ছিল মাত্র একটি। ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার দুই ভাগের চিত্রও যেন ফুটে ওঠে তাতে।