ওপেনার মিরাজই টি-টোয়েন্টির মিরাজ
অলরাউন্ডার অনেক ধরনের হতে পারে। কেউ ব্যাটিং, বোলিং—দুই বিভাগেই সমানতাল ভালো করেন, কেউ একটিতে বেশি আরেকটিতে কম। আবার দুটোই একটু একটু পারেন, এমনও আছেন। মেহেদী হাসান মিরাজ কোন দলে? ওয়ানডে ও টেস্টে মিরাজ পরিপূর্ণ অলরাউন্ডার। সেটার প্রমাণ অনেকবারই দেখা গেছে। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে?
এ জায়গায় মিরাজের অলরাউন্ড–সত্তায় একটু যেন কমতিই আছে। অন্তত আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার সেটাই বলছে। সব মিলিয়ে বিপিএলেও কিন্তু তা–ই। কিন্তু ক্যারিয়ারের এ পর্যায়ে মিরাজ যেন সংস্করণের দিক থেকে অলরাউন্ডার হয়ে উঠছেন। যার প্রমাণ এবারের বিপিএল।
এবারের বিপিএলে মিরাজ কী করেছেন? খুলনা টাইগার্সের হয়ে মোট রান করেছেন ৩৫৩। এর চেয়ে বেশি রান বিপিএলে করেছেন ৬ জন। তার মানে আহামরি কিছু নয়। তবে মিরাজ এবার সময়মতো জ্বলে উঠেছেন। দায়িত্ব নিয়ে ওপেনিংয়ে এসে পারফর্ম করছেন।
শুরুটা করেছিলেন ৩ নম্বর দিয়ে। এরপর কখনো ৫ কখনো ৩ নম্বর—এভাবেই খেলে গেছেন। তবে এই পজিশনগুলোতে সেভাবে রান পাননি। সর্বোচ্চ ৩৯ সিলেটে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে। বিপিএলে মিরাজ প্রথম ওপেন করেন ১৯ জানুয়ারি, চট্টগ্রামে। করেন ১৩ বলে ২৬। পরের ম্যাচেই অবশ্য ৩ নম্বরে।
মিরাজ ধারাবাহিকভাবে ওপেনিংয়ে নামতে শুরু করেন ২৩ জানুয়ারি দলের নবম ম্যাচ থেকে। এরপর ওপেনার হিসেবেই খেলেছেন আরও ৩ ম্যাচ। সিলেটের বিপক্ষে করেছিলেন ৫০ বলে ৭০।
পরের দুই ম্যাচে ১৮ বলে ২৯ ও ১২ বলে ২১। এরপর সর্বশেষ গতকাল ঢাকা ক্যাপিটালসের বিপক্ষে ‘বাঁচা–মরার’ ম্যাচে খেলেছেন ৫৫ বলে ৭৪ রানের অপরাজিত ইনিংস। টানা ৪ ম্যাচের এই পারফরম্যান্স তাঁর গড়টা একঝটকায় ৩২–এ নিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ওপেনিংয়ে ৫ ইনিংস ব্যাটিংয়ে নেমে করেছেন ২২০ রান, বাকি ৭ ইনিংসে যা ১৩৩।
মিরাজের এই রানে থাকায় দুটি দিক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। একটি হচ্ছে পাওয়ার–প্লে কাজে লাগানো। আরেকটি মোটের ওপর স্ট্রাইক রেট। ওপেনার হিসেবে খেলা পাঁচ ম্যাচে মিরাজের স্ট্রাইক রেট ছিল এমন—২০০, ১৪০, ১৬১.১১, ১৭৫ ও ১৩৪.৫৪। ওপেনার মিরাজের এমন পারফরম্যান্সের পর সমর্থকেরা আক্ষেপ করতেই পারেন, খুলনার অধিনায়ক হয়েও কেন তিনি শুরু থেকে ওপেন করলেন না। এমন ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতি অফ স্পিনেও ১০ উইকেট হয়ে গেছে মিরাজের।
বিপিএলে ব্যাটিংয়ে পজিশন পাল্টে পুরোদস্তুর অলরাউন্ডার হয়ে ওঠার পর মিরাজকে নিয়ে হয়তো আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতেও নতুন কিছু ভাবা যেতে পারে। পরিসংখ্যানও কিন্তু পক্ষেই আছে।
মিরাজ এখন পর্যন্ত দেশের হয়ে ২৯ টি–টোয়েন্টি খেলেছেন, রানের গড় মাত্র ১৭। টি-টোয়েন্টিতে যেটি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সেই স্ট্রাইক রেট মাত্র ১১৬। মানে গড়পড়তার চেয়েও খারাপ। এমন দুর্দশার অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। সামর্থ্যের প্রশ্ন আছে। আবার তাঁকে নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষাও তো কম হয়নি।
জাতীয় দলে ২৪ ইনিংস ব্যাটিং করেছেন, যেখানে ৩ নম্বর ছাড়া ১ থেকে ৯ পর্যন্ত প্রতিটি পজিশনে ব্যাটিং করেছেন। অর্থ্যাৎ ব্যাটিং নিয়ে টানাহেঁচড়াই চলেছে প্রতিনিয়ত। আবার বল হাতেও খুব একটা সফল নন—২৯ ম্যাচে ১৪ উইকেট। যা মিরাজ দলে কেন থিতু নয়, প্রশ্ন করার সুযোগ সংকুচিত করে দেয়।
নিয়মিত না হলেও টি-টোয়েন্টি দলের বলয়েই থাকেন মিরাজ। অন্তত গত অক্টোবরের ভারত সিরিজের পর থেকেই। সেই সিরিজ দিয়ে ১৪ মাস পর বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলে ফিরেছিলেন তিনি।
ফেরার পর ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে ম্যাচ খেলেছেন ৪টি। মিডল অর্ডারে নেমে রান করেছেন যথাক্রমে—৩৫, ১৬, ২৬, ২৯। একটি ম্যাচেও টি-টোয়েন্টি মেজাজে ব্যাটিং করতে পারেননি। এই ৪ ম্যাচের মধ্যে তিনি সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে—১২৬.০৮। বোঝাই যাচ্ছে, মিডল অর্ডারে সেরাটা দিতে পারছেন না তিনি।
মিরাজ নিজের সমস্যার সমাধান এবারের বিপিএলে নিজেই দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ওপেনিং করছেন, সফলও হচ্ছেন। বাংলাদেশ দলও কিন্তু ওপেনার মিরাজকে দিয়ে চেষ্টা করেছিল। ২০২২ এশিয়া কাপে ৪ ম্যাচের সে পরীক্ষা–নিরীক্ষায় দুটিতে ৩৫–এর ওপর রানও করেছিলেন মিরাজ। কিন্তু ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়নি। এবার বিপিএলে ওপেনিংয়ে থিতু হওয়ার মাধ্যমে কি সামনে জাতীয় দলেও একই পজিশনের জন্য বিবেচিত হবেন মিরাজ?