ব্যাট দিয়ে স্টাম্প ভাঙলেন রিজওয়ান, শরফুদ্দৌলা কেন আউট দিলেন না

দিনের শেষ বল খেলে হাসিমুখেই মাঠ ছেড়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান, যদিও দক্ষিণ আফ্রিকা তাঁর আউট চেয়েছিলএএফপি

রাওয়ালপিন্ডিতে চলমান পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্টে আজ তৃতীয় দিনের খেলা শেষ হয়েছে একটু অদ্ভুতভাবে। দক্ষিণ আফ্রিকার কেশব মহারাজ বল করলেন, আর পাকিস্তানের ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ রিজওয়ান সেটি কাভারের দিকে ড্রাইভ করলেন। কাভারে ফিল্ডার ছিলেন, রান নেওয়ার সুযোগ ছিল না। রিজওয়ান চেষ্টাও করেননি।

অদ্ভুত ঘটনা ঘটে এরপরই। বল খেলেই রিজওয়ান ঘুরে দাঁড়ান এবং ইচ্ছাকৃতভাবেই ব্যাট দিয়ে স্টাম্পে আলতো টোকা মেরে বেলস ফেলে দেন। তাৎক্ষণিকভাবে আম্পায়ারের কাছে ‘হিট উইকেটের’ আবেদন করেন দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটকিপার কাইল ভেরেইনা। কিন্তু আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ তাতে সাড়া দেননি। বরং হেসে ইশারায় আপিল থামিয়ে দেন। স্কয়ার লেগে থাকা আম্পায়ার ক্রিস ব্রাউনও এ বিষয়ে কোনো ভূমিকা নেননি।

দক্ষিণ আফ্রিকানদের আউটের আবেদনের কারণ ছিল যথেষ্টই। রিজওয়ানের ব্যাট হয়ে বল গেছে কাভারের দিকে। সেখান থেকে ফিল্ডার তখনো বল ফেরত পাঠাননি। আম্পায়ারও বেলস ফেলে খেলার সমাপ্তি ঘোষণা করেননি। অর্থাৎ বল ‘ডেড’ হয়নি। আর বল ‘লাইভ’ বা সক্রিয় থাকা অবস্থায় ব্যাটসম্যান স্টাম্প ভাঙলে সেটি হিট আউটই হওয়ার কথা—এই ছিল ভেরেইনার ভাবনা।

প্রশ্ন হচ্ছে, ফিল্ডার বল ফেরত পাঠাননি, আম্পায়ারও ওভার সমাপ্তির ঘোষণা দেননি, এ সবকিছুর আগে রিজওয়ান স্টাম্প ভাঙায় কেন আউট হননি? শরফুদ্দৌলা কেন আউটের আবেদনে সাড়া দেননি?

বাংলাদেশি আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

ক্রিকেটের আইনের ৩৫.১ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যাটসম্যানকে কখন ‘হিট উইকেট আউট’ ধরা হবে।
ব্যাটসম্যান আউট হবেন, যদি স্টাম্প ভাঙেন...
—বোলার ডেলিভারি স্ট্রাইডে ঢোকার পর, বল খেলার প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ে
—বল খেলার সময় বা খেলার চেষ্টা করার সময়
—শট খেলার পর সঙ্গে সঙ্গে প্রথম রান নেওয়ার জন্য দৌড় শুরু করার সময়
—অথবা আউট থেকে বাঁচতে দ্বিতীয় বা অতিরিক্ত শট খেলার সময়।
এই ধারায় বোঝা যাচ্ছে, রিজওয়ান স্টাম্প ভেঙেছেন এসবের চেয়ে ভিন্ন পরিস্থিতিতে।

আরও পড়ুন

বিষয়টি আরও পরিষ্কার করা হয়েছে ৩৫.২ ধারায়। এই অংশে বলা হয়েছে কখন একজন ব্যাটসম্যান স্টাম্প ভাঙলেও হিট উইকেট আউট হবেন না।
সময়গুলো হচ্ছে
—যখন স্ট্রাইকে থাকা ব্যাটসম্যান ডেলিভারি গ্রহণের সঙ্গে সম্পর্কিত সব কাজ সম্পন্ন করেছেন
—যখন স্ট্রাইকে থাকা ব্যাটসম্যান দৌড়ানোর প্রক্রিয়ায় আছেন, কিন্তু প্রথম রান নেওয়ার জন্য অবিলম্বে দৌড় শুরু করার অবস্থায় নন
—যখন ব্যাটসম্যান রান আউট বা স্টাম্পড হওয়া এড়ানোর চেষ্টা করছেন
—যখন ব্যাটসম্যান যেকোনো সময় কোনো থ্রো এড়ানোর চেষ্টা করছেন
—বোলার ডেলিভারি স্ট্রাইডে প্রবেশ করেছেন, কিন্তু বল না ছুড়লে। এ ক্ষেত্রে যেকোনো এক আম্পায়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘ডেড বল’ কল ও সংকেত দেবেন
—ডেলিভারিটি ‘নো বল’ হলে।

দিনের শেষ বল কভারে খেলেই পেছনে হাঁটা দেন রিজওয়ান, যে পথে ব্যাট দিয়ে স্টাম্প ভাঙেন
এএফপি

রিজওয়ানের ক্ষেত্রে যেটি ঘটেছে, সেটি হচ্ছে তিনি বলটি কাভার অঞ্চলে পাঠিয়েছিলেন এবং কোনো রান নেওয়ার চেষ্টা না করে হাঁটতে হাঁটতে ব্যাট দিয়ে স্টাম্পে আঘাত করেছেন। অর্থাৎ স্টাম্প ভাঙার ঘটনাটি ঘটেছে তাঁর শট খেলার ক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর। এর সঙ্গে কোনো অতিরিক্ত ব্যাটিং বা দৌড়ানোর প্রচেষ্টা জড়িত ছিল না। তাই এটি আইনের ৩৫.১ ধারায় উল্লেখিত বৈধ হিট উইকেট আউট হওয়ার অবস্থার মধ্যে পড়ে না।

দক্ষিণ আফ্রিকান উইকেটকিপার কাইল ভেরেইনা এবং তাঁর কিছু সতীর্থের বিষয়টি নিয়ে হয়তো পরিষ্কার ধারণা ছিল না। যে কারণে আউটের আবেদনের সঙ্গে আম্পায়ার শরফুদ্দৌলার সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে তাঁদের। তবে পুরো বিষয়টি যে নিয়মের মধ্যেই হয়েছে, সেটি পরে হলেও আশ্বস্ত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা দল। যে কারণে দিনের খেলা শেষে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকার সেনারান মুতুসামিকে যখন এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি ঘটনার সময় দূরে ফিল্ডিং করায় কী ঘটেছে জানেন না বলে উত্তর দেন।

আরও পড়ুন