‘সাকিব ভাইকে যে ছক্কাটা মেরেছিলাম, পুরো টিম বলছিল, এটা কী শট’

লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে খেলে দেশে ফিরেছেন তাওহিদ হৃদয়শামসুল হক

‘প্রথম’ যেকোনো কিছুরই আলাদা রোমাঞ্চ। তাওহিদ হৃদয়ের চোখেমুখেও আজ সে রোমাঞ্চটা দেখা গেল। প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলে এসেছেন এই বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান। সেটাও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের অভিষেকের বছরেই। হৃদয়ের সময়টা যে ভালো কাটছে, তা এতেই বোঝা যায়।

লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে (এলপিএল) খেলে হৃদয় আজ ঢাকায় ফিরেছেন। সেখানে টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জাফনা কিংসের হয়ে ছয়টি ম্যাচ খেলেছেন তাওহিদ। ৬ ইনিংসে ৩৮.৭৫ গড় ও ১৩৫.৯৬ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ১৫৫। ফিফটি একটি। এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি রান করাদের তালিকায় ৩ নম্বরে তাওহিদ, তাঁর ওপরে দুজন হলেন পাকিস্তানের বাবর আজম (২৩৫) ও নিউজিল্যান্ডের টিম সাইফার্ট (১৬১)।

জাতীয় দলের ফর্মটা বিদেশি লিগেও ধরে রাখতে পেরে বেশ আনন্দিত হৃদয়। প্রথমবার ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলার অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের একাডেমি ভবনে সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমার জন্য নতুন একটা অভিজ্ঞতা ছিল। অনেক উপভোগ করেছি। অনেক কিছু শিখেছি। আশা করি, সেটা সামনে কাজে লাগবে।’

আরও পড়ুন

ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের আবহটা হৃদয় যে বেশ উপভোগ করেছেন, সেটা বোঝা গেল পরের কথায়, ‘ভালো কেটেছে। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তারা আমাদের ভালোভাবে ট্রিট করেছে। আমি যে বাইরের কেউ, সেটা বুঝতে দেয়নি।’

জাফনা কিংসের অধিনায়ক থিসারা পেরেরার সঙ্গে আগেও বিপিএলে সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে খেলেছেন হৃদয়। আরও কয়েকজন চেনামুখ থাকায় মানিয়ে নেওয়ার কাজটা সহজ হয়েছে বলে মনে করেন হৃদয়, ‘থিসারা ছিলেন, মারিও (ভিল্লাভারায়েন, বাংলাদেশ দলের সাবেক ট্রেনার) ছিলেন, আমার সঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৯ খেলেছে এমন কয়েকজন ছিল। আমার মনে হয়নি যে আমি ওখানে একা। সব সময় ওরা আমাকে সহযোগিতা করেছে। আমিও চেষ্টা করেছি সেরাটা দেওয়ার।’

লঙ্কান দর্শকদের ভালোবাসা পেয়েও আপ্লুত হৃদয়, ‘বাউন্ডারিতে যখন ফিল্ডিংয়ে গেছি…ওরা আমাকে চিনেছে। সব সময় হৃদয়, হৃদয় বলে ডেকেছে (হাসি)।’

দেশের বাইরে প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজি টি–টোয়েন্টিতে ভালো অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরেছেন তাওহিদ হৃদয়
এসএলসি

ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য শেখার এক দারুণ সুযোগ। হৃদয়ও সেই সুযোগটা নিতে চেয়েছেন। থিসারা পেরেরা ছাড়াও শোয়েব মালিক, ডেভিড মিলারের মতো ক্রিকেটারকে পেয়েছেন সতীর্থ হিসেবে। তাঁদের মধ্যে মিলারের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা ছিল হৃদয়ের। কী ভাগ্য, ২২ গজে তাঁর ব্যাটিং দেখে সেই মিলার নাকি নিজ থেকেই হৃদয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন, ‘ভালো লেগেছে তার সঙ্গে কথা বলে। সে লিজেন্ড। আমিও চাচ্ছিলাম মিলারের সঙ্গে একটু কথা বলি। কিন্তু সাহসটা পাচ্ছিলাম না। পরে দেখেছি ও-ই আমার সঙ্গে কথা বলেছে। তারপর সব সময় চেষ্টা করেছি ওর সঙ্গে কথা বলার। ওর কাছ থেকে যতটা নেওয়া যায়, সেই চেষ্টা করেছি।’

লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে এবার গল টাইটানসের হয়ে খেলছেন বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানও। জাফনা কিংসের বিপক্ষে লিগ পর্বের এক ম্যাচে সাকিবের বলে মিড উইকেটে অদ্ভুত এক শটে ছক্কা মেরেছিলেন হৃদয়। মিলার সে শটটা দেখে অবাক হয়ে কী বলেছিলেন, সেই গল্পও শোনালেন হৃদয়, ‘মিলার আমাকে বারবার অ্যাপ্রিসিয়েট করছিল। বিশেষ করে আমি সাকিব ভাইকে যে ছক্কাটা মেরেছিলাম, শুধু মিলার নয়, পুরো টিম বলছিল, এটা আসলে কী শট (হাসি)! মিলার বলছিল, এটা শট অব দ্য ডে। ম্যাচ শেষেও মিলার অনেক কথা বলেছে আমার ব্যাটিং নিয়ে। সে আমার কাছ থেকে শুনেছে আমি কীভাবে কী করি।’

আরও পড়ুন

৩০ আগস্ট শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মাটিতে শুরু হবে এশিয়া কাপ। শ্রীলঙ্কার মাঠে খেলে আসা হৃদয়ের এতে সুবিধাই হওয়ার কথা, ‘হয়তো (সুবিধা) হবে। ওই নির্দিষ্ট দিনে কেমন করব, সেটাই চ্যালেঞ্জ। ওইখানে গিয়েছি, খেলেছি, সেখানকার উইকেট সম্পর্কে, মাঠ সম্পর্কে আইডিয়া হয়েছে। একটু তো হেল্প হবেই আমার জন্য এবং দলের জন্য।’

এবার শ্রীলঙ্কার মাটিতে এশিয়া কাপে রাঙানোর অপেক্ষায় তাওহিদ হৃদয়
ছবি: এএফপি

পুরো টুর্নামেন্টটা খেলতে পারলে হৃদয়ের জন্য হয়তো আরও ভালো হতো। তবে যেটুকু খেলেছেন, তাতেই সন্তুষ্ট তিনি, ‘আমার কোনো আফসোস নেই। যা হয়েছে ভালো হয়েছে। আমি পুরো টুর্নামেন্টের জন্য যাইওনি। ওরা মাঝে আমাকে রিকোয়েস্ট করেছে, কিন্তু থাকা হয়নি। আমার মনে হয়, যেটা হয়েছে ভালোই হয়েছে।’